রাবারকে কৃষিপণ্য হিসেবে স্বীকৃতির সুপারিশ সংসদীয় কমিটির

সুপ্রভাত ডেস্ক »

পরিবেশ দূষণের দায়ে অভিযুক্তদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণের অর্থ অর্ধেকেরও কম আদায় হয়েছে। গত ১৪ বছরে পরিবেশ অধিদফতর পরিবেশ দূষণে ৫০০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতিপূরণ ধার্য করলেও আদায় হয়েছে ২৫০ কোটি টাকারও কম।

রোববার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উপস্থাপিত এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, পরিবেশ দূষণ, পাহাড় কাটা, জলাধার ভরাটসহ পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতিসাধণের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়। ২০১০ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৩ হাজার ৭০৬টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান পারিচালনা করে ৫১৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ ধার্য করা হয়। এর মধ্যে ২৪৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা আদায় করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বিগত ১৫ বছরে ৭৮ হাজার ৯৭১টি শিল্প প্রতিষ্ঠান পরিবেশগত ছাড়পত্র পেয়েছে। দেশে ইটিপি প্রযোজ্য ২ হাজার ৯১২টি শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২ হাজার ৪৮৭টিতে ইটিপি স্থাপন হয়েছে।

এদিকে বৈঠকে রাবারকে কৃষিপণ্য হিসেবে স্বীকৃতির সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি। একইসঙ্গে রাবার বাগানের ইজারা মূল্য সাড়ে ৭ লাখ টাকা থেকে কমাতে বলেছে কমিটি।

কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাবারকে কৃষিপণ্য হিসেবে নির্ধারণ করতে আমরা সুপারিশ করেছি। রাবার বোর্ডের আওতায় চাষিদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ, যাতায়াতের জন্য রাস্তা তৈরি করতে অনুরোধ করেছি।’

আমদানি শুল্ক কম থাকায় দেশে উৎপাদিত রাবার বিক্রি কম হয় বলে কমিটিতে আলোচনা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, আমদানিতে ৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। কিন্তু রফতানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। এতে উৎপাদকরা নিরুৎসাহিত হচ্ছে। দীপংকর তালুকদার বলেন, ‘রাবারকে শিল্পপণ্য হিসেবে দেশের বাজারে গণ্য করা হয়। তাই এর উচ্চশুল্ক দিতে হচ্ছে। এখন কৃষিপণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হলে কোনও শুল্ক দিতে হবে না। এতে উদ্যোক্তারা উৎপাদনে উৎসাহী হবেন।’

আশির দশকে দেশের পাহাড়ি এলাকায় রাবার চাষের লক্ষ্যে ৪০ বছরের জন্য প্লট ইজারা দেওয়া শুরু হয়। সে সময় প্লট প্রতি ভাড়া ছিল ৭৫ হাজার টাকা করে। কিন্তু মেয়াদ শেষের পরে ইজারা নবায়ন ফি বাড়ায় সরকার। তা ৭৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ লাখ টাকা করা হয়। এমন মূল্য বৃদ্ধিকে অযৌক্তিক বলে দাবি করেছেন সংসদীয় কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার। তিনি বলেন,  ‘আমরা মনে করি, ৭৫ হাজার থেকে ১০ গুণ বাড়িয়ে সাড়ে ৭ লাখ টাকা করা অযৌক্তিক।’ এটা এক লাখ কিংবা দেড় লাখ টাকা হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

বিশেষ আমন্ত্রণে রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীর বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে ফজলে করিম চৌধুরী রাবারের হাইব্রিড গাছ রোপণের পরামর্শ দেন। লিজ নিয়ে রাবার উৎপাদন না করার অভিযোগ তোলেন ফজলে করিম চৌধুরী। যারা বাগানে রাবার উৎপাদন করবে না তাদের লাইসেন্স বাতিল করার পরামর্শ দেন এই সংসদ সদস্য। জবাবে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, উৎপাদন বাড়ানোর জন্য কম্বাইন্ড গবেষণার উদ্যোগ নিয়েছি। এ ছাড়া কেউ লিজের শর্ত ভঙ্গ করছে কিনা, খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নিচ্ছি। এরপর তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবো।

সংসদ সচিবালয় থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈঠকে সব ধরনের দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে সব মন্ত্রণালয়কে সমন্বিতভাবে কাজ করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সংরক্ষিত বনাঞ্চল সংরক্ষণসহ নতুন বনাঞ্চল সৃষ্টির ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।

বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন কমিটির সদস্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী, আ স ম ফিরোজ, শাহাব উদ্দিন, আবদুল ওদুদ, তানভীর শাকিল জয়, গালিবুর রহমান শরীফ, এস এম আতাউল হক, ছানুয়ার হোসেন ছানু এবং আরমা দত্ত।