মিয়ানমারে গোলাগুলি এপারে আতঙ্ক

নাইক্ষ্যংছড়িতে পাঁচ স্কুল সাময়িক বন্ধ

নিজস্ব প্রতিনিধি, নাইক্ষ্যংছড়ি ও টেকনাফ »
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের শূন্যরেখার কাছাকাছি মিয়ানমারের সীমান্তচৌকি এলাকায় গতকাল সোমবার সকাল ১০টার দিকে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। গোলাগুলির প্রচণ্ড শব্দে উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু, বাইশফাঁড়ি এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
এ পরিস্থিতিতে গতকাল বেলা একটার দিকে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমে নিরাপত্তার কারণে সীমান্তের পাঁচটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করেছে প্রশাসন।
গতকাল সোমবার বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, নাইক্ষ্যংছড়ি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ত্রিরতন চাকমার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তার বিষয়টি চিন্তা করে ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্তের কাছে পাঁচটি প্রাথমিক বিদ্যালয় একদিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
বন্ধ হওয়া স্কুলগুলো হল বাইশপারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাজাবনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তুমব্রু পশ্চিমকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রেজু গর্জন বুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
এদিকে মিয়ানমার-নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত ঘেঁষে বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও মিয়ানমার জান্তা সরকারের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। সীমান্ত ঘেঁষে ওপারে কামানের গোলা নিক্ষেপের পাশাপাশি বিমান থেকে গোলা বর্ষণ করা হচ্ছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
মিয়ানমার-নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া ঘেষে মিয়ানমার অংশে ৩ দিনে অর্ধশতাধিক মর্টার শেলের প্রকট শব্দে কেঁপে ওঠে। এতে আতঙ্কিত হচ্ছে সীমান্তবাসী।
এ বিষয়ে ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, আজ (সোমবার) সকালেও মর্টার শেল বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়। এতে কেউ হতাহত না হলেও সীমান্তের লোকেরা আতঙ্কে রয়েছেন।
ইউপি সদস্য দিল মোহাম্মদ ভুট্টো বলেন, আমরা যারা এপারে বসবাস করছি সবাই আতঙ্কে আছি, কখন কোন সময় কি হয় জানি না। বিনা প্রয়োজনে ঘরের বাইরে না যাওয়ার জন্য স্থানীয় জনগণকে সতর্ক করা হচ্ছে। গত ৮-১০ দিন থেকে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে।
মিয়ানমারের বিভিন্ন প্রদেশে গত এক বছরের বেশি সময় ধরে চলে আসা সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের সংঘাত বর্তমানে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাখাইন পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। কদিন ধরেই সীমান্ত এলাকায় ভারী অস্ত্র থেকে ছোড়া গুলি এবং মর্টারশেলের শব্দ শোনা যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে আগুনের ধোঁয়া। এর আগেও মিয়ানমার থেকে ছোড়া গোলা বাংলাদেশ সীমান্তে এসে পড়ে।
টেকনাফ
পাশ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারে গোলাগুলির শব্দে টেকনাফ উপজেলার সীমান্ত এলাকায় আতঙ্কে বিরাজ করছে। উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের খারাংগাগুনা ও উলুবনিয়া গ্রামে সোমবার সকাল থেকেই গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। এ নিয়ে গ্রামের ৫০০ পরিবারের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এ ব্যাপারে হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী বলেন, ‘তুমব্রুর পর এবার টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের সীমান্তে গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। এ কারণে সীমান্তের দুই গ্রামে মানুষ আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। আমরা তাদের খোঁজ খবর রাখছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুদিন ধরে গোলাগুলির শব্দ আসছে। ফলে খারাংগাগুনা ও উলুবনিয়া গ্রামের ৫০০ মানুষ ঝুঁকিতে আছে। পরিস্থিতি বুঝে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
হোয়াইক্যং সীমান্তের বাসিন্দারা জানান, সোমবার সকাল থেকে টেকনাফের হোয়াইক্যং সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে নাফ নদীর তীরে গোলাগুলি হয়েছে। এতে এখানকার লোকজন ভয়ভীতির মধ্যে রয়েছেন।
টেকনাফ উপজেলার শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তে নুরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির বসতঘরে শনিবার একটি গুলি গিয়ে পড়ে। বিষয়টি জানান নুরুল ইসলামের শাশুড়ি সামজিদা বেগম।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. সোলেমান বলেন, ‘মিয়ানমারের ওপারে গোলাগুলির শব্দে বাড়িঘরে থাকতে পারছি না। শনিবার নুরুল ইসলামের বসতঘরে একটি গুলি এসে পড়েছে।’
সীমান্তে বসবাসকারী মো. জাহাঙ্গীর বলেন, ‘ইতোমধ্যে জনপ্রতিনিধিরা আমাদের তালিকা তৈরি করেছেন। আমরা অনেক ভয়ে আছি।’
এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. এরফানুল হক চৌধুরী বলেন, টেকনাফ উপজেলার সীমান্তে গোলাগুলির খবর জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে জেনেছি। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া সীমান্তের ৩০০ মিটারের ভেতরে বসবাসকারীদের তালিকা করা হয়েছে। পরিস্থিতি অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সীমান্তে ২৪ ঘণ্টা সজাগ রয়েছে বিজিবি। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছি। অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে আছে বিজিবি’।