ভ্রুণ হত্যার অভিযোগে স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক »
ভ্রুণ হত্যার অভিযোগে স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন এক গৃহবধূ। প্রথম ভ্রুণ পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। দ্বিতীয় ভ্রুণও হত্যার চেষ্টা করলে আইনের আশ্রয় নেন স্ত্রী। আনাগত শিশুকে রক্ষায় স্বামীর বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম শফি উদ্দিনের আদালতে মামলা করা হয়।
গতকাল বুধবার স্ত্রী সাজু আক্তার ভ্রুণ হত্যার অভিযোগে স্বামী সফিউল আলম বিরুদ্ধে মামলা করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে চান্দগাঁও থানা পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ওই গৃহবধূর আইনজীবী অ্যাডভোকেট গোলাম মাওলা মুরাদ।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৬ চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার খিলমোগল খামারিপাড়া হোসনাবাদ এলাকার কাজী সফিউল আলমের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় একই উপজেলার উত্তর পদুয়া পশ্চিম খুরুশিয়া এলাকার সাজু আক্তারের। বিয়ের কিছু দিন পরেই জানা যায় স্বামী পাশের গ্রামের এক নারীর প্রেমের সর্ম্পক গড়ে তোলে। বিয়ের একমাস পরে বিদেশ চলে যায় স্বামী সফিউল আলম। বিদেশ থেকে আসা-যাওয়ার মাঝে ওই গৃহবধূ সন্তানসম্ভাবা হয়। কিন্তু স্বামী সফিউল আলম বাবা হতে অনাগ্রহী। তাই তার পরামর্শে মা নুর আয়েশা এবং বোন তাসলিমা ও পারভিন মিলে চন্দ্রঘোনায় ডা. পাপড়ি দাশের কাছে নিয়ে যান। তারা ডাক্তারকে গর্ভপাত করানোর ওষুধ দেওয়ার কথা বললে চিকিৎসক রাজি হননি। পরে পরিবারের লোকজন দায়িত্ব নিয়ে ডাক্তারের কাছ থেকে ওষুধ এনে রাতে গৃহবধূ সাজুকে ওষুধ খাওয়ায়। ওষুধ খাওয়ার পর থেকে শরীর খারাপ লাগতে শুরু করে। পরদিন থেকে বমি ও রক্তক্ষরণ শুরু হলে আবারো নিয়ে যাওয়া হয় চিকিৎসকের কাছে। চিকিৎসক দ্রত রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরামর্শ দেন। কিন্তু পরিবারের লোকজন হাসপাতালে না নিয়ে তাকে বাড়ি নিয়ে আসে। অসুস্থ্ অবস্থাতেই জ্বরের ওষুধের কথা বলে আবারো সাজু আক্তারকে ভ্রুণ হত্যার ওষুধ খাওয়ানো হয়। তাতেই ভ্রুণটি নষ্ট হয়। স্বামী বিদেশে থাকা আবস্থায় শ্বশুর বাড়ির লোকজনের নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে সাজু আক্তার ২০২০ সালের জুলাই মাসে তার বোনের বাসা বহদ্দারহাটের ফরিদার পাড়ায় চলে যান।
২০২১ সালের ২৯ আগস্ট সাজুর স্বামী সফিউল বিদেশ থেকে দেশে এসে সব ভুলে নতুন করে সংসার শুরু করেন। এক পর্যায়ে আবারো সন্তানসম্ভাবা হয় সাজু। এবারও আগের মতোই সফিউল তার স্ত্রীকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়ে গর্ভের সন্তান নষ্ট করার কথা বললে সাজু রাজি হননি। রাজি না হওয়ায় সাজুর উপর নেমে আসে আবারো নির্যাতন। তাই অনাগত শিশুকে পৃথিবীর আলো দেখাতে আইনের আশ্রয় নেন সাজু আক্তার।
তবে ২০১৭ সালে প্রথম গর্ভধারণকালে ডা. পাপড়ি দাশ গুপ্তার পরামর্শপত্রে দেখা যায়, সাজু আক্তার নিজেই গর্ভপাত চেয়েছেন। তার সম্মতিতেই তাকে গর্ভপাতের ওষুধ দেয়া হয়।
মামলা প্রসঙ্গে অ্যাডভোকেট গোলাম মাওলা মুরাদ বলেন, ভ্রুণ হত্যার মতো গুরুতর অপরাধ আমাদের সমাজে হরহামেশাই শোনা যায়। এ নিয়ে মাঝে মাঝে অভিযানও চলে ক্লিনিকগুলোতে। তাতেও বন্ধ হয়নি ভ্রুণ হত্যার মতো গুরুতর অপরাধ। অপরাধীরা অপরাধ করেও পার পেয়ে যায়। তাই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি একজন ভুক্তভোগী নারীর মাধ্যমে বিজ্ঞ আদালতের নজরে আনা হয়েছে যেন এ ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে আর কেউ ঘটাতে সাহস না পায়।