ভোগান্তিতে যাত্রীরা

চট্টগ্রামে ২০ রুটে বাস ধর্মঘট

সুপ্রভাত ডেস্ক »

চট্টগ্রামে দক্ষিণাঞ্চলে বাস ধর্মঘটের কারণে দিনভর যাত্রীদের নানা ধরনের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।ধর্মঘটের বিষয়টি আগে থেকে প্রচার না হওয়ায় শত শত যাত্রী সকালে বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রবেশপথে গিয়ে আটকে গেছেন। কেউ কেউ বিকল্প পরিবহনে গন্তব্যে যেতে পারলেও তিন-চারগুণ বেশি বাড়তি ভাড়া গুণতে হয়েছে। আর কেউ কেউ দুর্ভোগের শিকার হয়ে আবার ফেরত গেছেন।

গতকাল বুধবার ভোর ৬টা থেকে কক্সবাজার-বান্দরবানসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের ২০ রুটে ধর্মঘট হয়েছে। সকালে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আসা বাস কক্সবাজারের উদ্দেশে যেতে গিয়ে শাহ আমানত সেতু এলাকায় ধর্মঘটকারী শ্রমিকদের বাধার সম্মুখীন হন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসময় শ্রমিকরা সেতু এলাকায় অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার বাস কাউন্টার জোরপূর্বক বন্ধ করে দিতে বাধ্য করেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। খবর সারাবাংলার।

এদিকে বিকেল চারটার দিকে সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকে দিনব্যাপী ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়। প্রচ- গরম এবং সার্বিক দিক বিবেচনা করে ২ ঘন্টা আগেই এ ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেন তারা। ধর্মঘট প্রত্যাহারের পর থেকে চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়কে যান চলাচল শুরু হয়।

মহাসড়কে রুট পারমিটবিহীন যান ও দ্বিতল বাস চলাচল বন্ধসহ বিভিন্ন দাবিতে চট্টগ্রাম দক্ষিণাঞ্চল বান্দরবান-কক্সবাজার জেলা সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টার এ কর্মসূচি দিয়েছে। একই দাবিতে গত ৯ অক্টোবর দু’ঘণ্টা বাস চলাচল বন্ধ রেখে প্রশাসনকে সমস্যা সমাধানের জন্য এক সপ্তাহের আল্টিমেটাম দিয়েছিল ঐক্য পরিষদ। ৯ দিনের মাথায় গত (মঙ্গলবার) রাতে ১২ ঘণ্টার ধর্মঘটের ডাক দেয় সংগঠনটি।

যাত্রীরা ধমর্ঘটের বিষয়টি আগেভাগে ঘোষণা না দেওয়া এবং দুর্ভোগ এড়াতে প্রশাসনের নির্লিপ্ততার জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার হয়ে টেকনাফ, চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবান এবং বাঁশখালী পিএবি সড়ক ও আনোয়ারা-বরকল সড়কসহ চট্টগ্রাম দক্ষিণাঞ্চলের ৩ জেলা ও উপজেলার ২০ রুটে বাস চলাচল বন্ধ আছে।

বাঁশখালী সরকারি আলাওল কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক রাজশ্রী আইচ কর্মস্থলে যাবার জন্য সকাল সাড়ে ৮টায় দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রবেশপথ নগরীর শাহ আমানত সেতু এলাকায় যান। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, বাস ধর্মঘট চলছে। দেড় ঘণ্টারও বেশিসময় চেষ্টার পর তিনি বাসায় ফিরে যান।

রাজশ্রী আইচ বলেন, ‘ছোট বাস চালানোর চেষ্টা করেছিল। আমরা কয়েকজন উঠে বসেছিলাম। কিন্তু শ্রমিকরা এসে ড্রাইভারকে গালিগালাজ করে বাস থেকে নামিয়ে দেয়। আমাদেরও নামিয়ে দেওয়া হয়। এরপর সিএনজি ও টেক্সিতে করে যাবার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু বাস শ্রমিকদের ভয়ে কেউ যেতে রাজি হয়নি।’

চন্দনাইশের দোহাজারী যাবার জন্য আরও যাত্রীর সঙ্গে মাইক্রোবাসে চড়েন নগরীর বাসিন্দা স্বর্ণা দে। তিনি বলেন, ‘এক ঘণ্টা ঘুরেছি। গাড়ি পাচ্ছি না। এখন ৮০ টাকার ভাড়া ৩০০ টাকা করে দিয়ে যাচ্ছি। বাস চলাচল বন্ধ কেন, সেটাও জানতে পারলাম না।’

কক্সবাজারে যাবার উদ্দেশে সেতু এলাকায় এসে আটকে পড়া জাহেদা বেগম বলেন, ‘মাইক্রোবাসে ৫০০ টাকা ভাড়া চাচ্ছে। হাতে আছে ৩০০ টাকা। এত ভাড়া কিভাবে দেব?’

সাইফুল ইসলাম নামে আরেক যাত্রী বলেন, ‘সাড়ে ৭টায় এসেছি। কক্সবাজার যাব। আড়াই ঘণ্টা ঘুরে একটা মাইক্রোবাস পেয়েছি। ৫০০ টাকা ভাড়া দিয়ে যাচ্ছি। এদেশে কোনো নিয়মকানুন নেই। ধর্মঘট ডাকলে যে আমাদের কষ্ট হয়, সেটা কি প্রশাসন বোঝে না? তারা আগেভাগে ব্যবস্থা নিল না কেন?’

ঐক্য পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ মুছা বলেন, ‘আমরা গত তিনমাস ধরে প্রশাসনের কাছে বারবার ধর্না দিয়েছি। ওনারা আমাদের কোনো আবেদন-নিবেদন পাত্তাও দেননি। বাধ্য হয়ে আমাদের মালিকরা বাস চালানো বন্ধ রেখেছেন। আমরা শ্রমিকরাও আট দফা দাবিতে ১২ ঘণ্টার ধর্মঘটে শরিক হয়েছি। তবে আমরা কাউকে বাধা দিচ্ছি না। স্বতঃস্ফূর্তভাবে ধর্মঘট পালন হচ্ছে।’

ঐক্য পরিষদের বিভিন্ন দাবির মধ্যে আছে, সড়ক ও উপসড়কে দুর্ঘটনা প্রতিরোধ, সড়কে শৃঙ্খলা আনা, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার- টেকনাফ অপ্রশস্ত সড়কে স্লিপার কোচ নাম দিয়ে দ্বিতল বাস চালানো নিষিদ্ধ করা।

দাবির মধ্যে আরও আছে- বহিরাগত এসি, নন এসি বাস রুট পারমিটের শর্ত ভঙ্গ করে লোকাল রুটের যাত্রী বহনের কারণে গাড়িতে গাড়িতে অসম প্রতিযোগিতা বন্ধ করা, সড়ক-মহাসড়ক-উপসড়কের দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির জন্য দায়ী ইজিবাইক, ব্যাটারি রিকশা, টমটম ও অবৈধ থ্রি হুইলার সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল নিষিদ্ধ করা, হাইওয়ের আইন মোতাবেক রাস্তার উভয় পাশের অবৈধ স্থাপনাসহ হাট-বাজার সরিয়ে নেওয়া, একই দেশে ঢাকা ও চট্টগ্রামে একই ট্রাফিক আইনে দ্বিগুণ জরিমানার বৈষম্য দূরীকরণ, চট্টগ্রাম বহদ্দারহাট আঞ্চলিক বাস টার্মিনাল সংস্কার ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ, খোলা ট্রাকে লবণ পরিবহন নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন, রিকুইজিশানের মাধ্যমে ২ জেলায় রুট পারমিটধারী বাস, মিনিবাস ও কোচ গাড়ি দেশের প্রত্যন্ত এলাকা ও উপজেলায় পাঠানোর নামে রিকুইজিশান বাণিজ্য বন্ধ, কক্সবাজার পৌর বাস টার্মিনালে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ অবিলম্বে পরিষ্কার করা।