ভক্তদের ‘সারপ্রাইজ’ দিতে চান আইয়ুব বাচ্চুর স্ত্রী

সুপ্রভাত ডেস্ক »

এবি- আইয়ুব বাচ্চু; বাংলা রক জাদুকর ২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর রুপালি গিটার ফেলে চলে যান বহুদূরে। এবি কিচেন- এবির স্টুডিও; যেখান থেকেই নিত্যনতুন রেসিপিতে গান পেতেন শ্রোতারা।

এবি কিচেন বহু আগেই হাতছাড়া হয়েছে। আইয়ুব বাচ্চুর মারা যাওয়ার মাত্র ছয় মাসের মধ্যেই অর্থ সংকটে ছেড়ে দিতে হয়েছে ভাড়া বাসায় থাকা সেই স্টুডিও। কিংবদন্তির স্ত্রী ফেরদৌস আক্তার চন্দনার কণ্ঠে এ নিয়ে আক্ষেপেরও শেষ নেই।

তবে অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে বেশ গুছিয়ে নিয়েছে প্রয়াতের পরিবার। তাই চন্দনা জানালেন, আইয়ুব বাচ্চু ভক্তদের জন্য আসছে ‘সারপ্রাইজ’। বললেন, শুধু ভক্ত নয়, নিজেদের জন্যও এটা হবে সারপ্রাইজ।

‘কিচেন মানে রান্না। রান্নার মতো করেই বাচ্চু গান নাড়াচাড়া করতো দেখে মজা করে সে-ই এ নামটা রেখেছিল। কিচেনটা এখন নাই। আমার পক্ষে চালানো সম্ভব হয়নি। ছয় মাস পর্যন্ত আমি টানতে পেরেছিলাম। এরপর ছেড়ে দিতে হয়েছে। যে মানুষটা যেখানে বসে গান তৈরি করতেন, সেখানে হাল ধরার মতো কেউ নেই। তার সন্তানরা সেভাবে গান করে না। যেহেতু ভাড়া বাসায় এটা ছিল, তাই একপর্যায়ে আমাকে ছেড়ে দিতে হয়েছে। তার অনেক গিটার। সেগুলো বাসাতেই রেখেছি। আমি নিজেই নিয়মিত পরিষ্কার করি। সেগুলো নিয়ে কিছু একটা করার চেষ্টা করছি। বিষয়টি আপাতত সারপ্রাইজ থাক। ভক্তরা আরও কিছু দিন অপেক্ষা করুক। হয়তো সারপ্রাইজটা দিতে পারবো’- বলেন আইয়ুব বাচ্চুর সহধর্মিণী।

এবি কিচেনে ছিল আইয়ুব বাচ্চুর ৪০টি গিটার। যেগুলো বিশ্বের নানা স্থান থেকে সংগ্রহ করেছিলেন এই গিটার কিং। নিজের ইচ্ছে ছিল এগুলো দিয়ে জাদুঘর করবেন। প্রসঙ্গটি সামনে আনতেই আর সারপ্রাইজ ধরে রাখলেন না চন্দনা। জানালেন, ‘আইয়ুব বাচ্চু মিউজিয়াম’ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বললেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি গিটারগুলো ওপেন করে দিতে। জাদুঘর করতে। আইয়ুব বাচ্চুও এটাই চাইতেন। তবে এখানে প্রচুর খরচ আছে। যেতে হবে অনেক জায়গায়। দেখি কতটা পেতে পারি! সরকারি বা ব্যক্তিগত উদ্যোগ হোক- অনেকেরই এখানে যুক্ত হওয়ার সুযোগ আছে।’

দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যান্ড এলআরবির দলনেতা আইয়ুব বাচ্চু ছিলেন একাধারে গায়ক, গিটারিস্ট, গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক। গিটারের জাদুকর হিসেবে আলাদা সুনাম ছিল তার।

১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আইয়ুব বাচ্চু। ১৯৭৮ সালে ফিলিংস ব্যান্ডের মাধ্যমে সংগীত জগতে তার পথচলা শুরু হয়। ১৯৮০ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সোলস ব্যান্ডে লিড গিটারিস্ট হিসেবে যুক্ত ছিলেন তিনি। ১৯৯১ সালে এলআরবি ব্যান্ড গঠন করেন আইয়ুব বাচ্চু। এর প্রথম অ্যালবাম ‘এলআরবি’ বাজারে আসে ১৯৯২ সালে। এটাই দেশের প্রথম ডাবল অ্যালবাম। এলআরবির অন্য অ্যালবামগুলো হলো ‘সুখ’ (১৯৯৩), ‘তবুও’ (১৯৯৪), ‘ঘুমন্ত শহরে’ (১৯৯৫), ‘ফেরারি মন’ (১৯৯৬), ‘আমাদের’ (১৯৯৮), ‘বিস্ময়’ (১৯৯৮), ‘মন চাইলে মন পাবে’ (২০০১), ‘অচেনা জীবন’ (২০০৩), ‘মনে আছে নাকি নাই’ (২০০৫), ‘স্পর্শ’ (২০০৮), ‘যুদ্ধ’ (২০১২), ‘রাখে আল্লাহ মারে কে’ (২০১৬)।

১৯৮৬ সালে প্রকাশিত ‘রক্তগোলাপ’ তার প্রথম প্রকাশিত একক অ্যালবাম। তার সাফল্যের শুরুটা হয় দ্বিতীয় একক অ্যালবাম ‘ময়না’র (১৯৮৮) মাধ্যমে। ১৯৯৫ সালে বাজারে আসে তার তৃতীয় একক অ্যালবাম ‘কষ্ট’। এর প্রায় সব গানই জনপ্রিয়তা পায়। বিশেষ করে ‘কষ্ট কাকে বলে’, ‘কষ্ট পেতে ভালোবাসি’, ‘অবাক হৃদয়’, ‘আমিও মানুষ’ গানগুলো। তার অন্য একক অ্যালবামগুলো হলো, ‘সময়’ (১৯৯৮), ‘একা’ (১৯৯৯), ‘প্রেম তুমি কি’ (২০০২), ‘দুটি মন’ (২০০২), ‘কাফেলা’ (২০০২), ‘রিমঝিম বৃষ্টি’ (২০০৮), ‘বলিনি কখনো’ (২০০৯), ‘জীবনের গল্প’ (২০১৫)।

আইয়ুব বাচ্চুর গাওয়া গানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ‘চলো বদলে যাই’। এর কথা ও সুর তারই। শ্রোতাপ্রিয় গানের তালিকায় আরও রয়েছে ‘শেষ চিঠি কেমন এমন চিঠি’, ‘ঘুম ভাঙা শহরে’, ‘হকার’, ‘সুখ’, ‘রুপালি গিটার’, ‘গতকাল রাতে’, ‘তারা ভরা রাতে’, ‘এখন অনেক রাত’ ইত্যাদি।

রক ঘরানার গানের এই শিল্পী আধুনিক আর লোকগীতিতেও শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছেন। বেশ কিছু চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করেছেন তিনি। চলচ্চিত্রে তার গাওয়া প্রথম গান ‘লুটতরাজ’ ছবির ‘অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে’। এছাড়া ‘আম্মাজান’ ছবির শিরোনাম গানও জনপ্রিয়।

 

একনজরে আইয়ুব বাচ্চু

ডাক নাম: রবিন

জন্ম: ১৬ আগস্ট ১৯৬২

বাবা: মো. ইসহাক চৌধুরী

মা: নূরজাহান বেগম

স্ত্রী: ফেরদৌস আক্তার চন্দনা

ছেলে: আহনাফ তাজোয়ার

মেয়ে: সাফরা

প্রথম অ্যালবাম: রক্তগোলাপ (১৯৮৬)

ফিলিংসের সঙ্গে যাত্রা: ১৯৭৮

সোলসের সঙ্গে: ১৯৮০

এলআরবি গঠন: ৫ আগস্ট ১৯৯১

সর্বশেষ কনসার্ট: ১৬ অক্টোবর, ২০১৮ (রংপুর)

মৃত্যু: ১৮ অক্টোবর ২০১৮