বাস চলাচল শুরু, বাড়তি ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের অসন্তোষ

মোহাম্মদ রফিক :
করোনা ভাইরাস সংক্রমণের মধ্যে চট্টগ্রাম নগর ও জেলায় সোমবার সকাল থেকে বাস চলাচল শুরু হয়েছে। অর্ধেক আসন খালি রাখাসহ ১১ শর্তে দুই মাস ৮ দিন পর চালু হলো গণপরিবহন। করোনার এসময়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) বাসের ভাড়া সমন্বয় করে ৬০ ভাগ বৃদ্ধি করেছে। নতুন এ বাড়তি ভাড়া নিয়েই চলাচল করছে গণপরিবহন। তবে বাড়তি ভাড়া নিয়ে চরম অসন্তুষ্ট যাত্রীরা যদিও এখন পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া নিয়ে সড়কে অপ্রীতিকর কোন ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরের বিভিন্ন রুটের পাশাপাশি চট্টগ্রাম থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যাচ্ছে দূরপাল্লার গণপরিবহন। পরিবহনগুলোয় একটি সিটে যাত্রী, অপরটি ফাঁকা রেখে যাত্রী তোলা হচ্ছে। যাত্রীদের ওঠানোর সময় লাইন ধরে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে বাসে উঠানো হচ্ছে।

নগরের গরিব উল্লাহ শাহ মাজার এলাকায় বাস কাউন্টারে দায়িত্ব পালনকারী শ্যামলী পরিবহনে এক কর্মকর্তা বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং সরকারের নির্দেশনা মেনে বাস পরিচালনা করছি। চট্টগ্রাম থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে সকাল থেকে কয়েকটি বাস ছেড়ে গেছে। আমরা চেষ্টা করছি আমাদের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি সর্বাত্মকভাবে মানার। যাত্রীদেরও স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য অনুরোধ করছি।’
বাড়তি ভাড়ার বিষয়ে ঈগল স্টার বাস কাউন্টারের কর্মকর্তা আরিফ রায়হান বলেন, যেহেতু অর্ধেক যাত্রী বহন করতে হচ্ছে, তাই সরকার ভাড়া সমন্বয় করে যে ৬০ ভাগ ভাড়া বর্ধিত করেছে। সেই অনুযায়ী আমরা ভাড়া নিচ্ছি। একইসাথে বাস চালক, হেলপার এবং সুপারভাইজারকে স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য আমাদের সকল ধরনের স্বাস্থ্যসুরক্ষা সামগ্রী প্রদান করা হয়েছে।
জানা গেছে, মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দূরপাল্লার পথে বর্তমান ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৪২ পয়সা। এর সঙ্গে যুক্ত হবে বর্ধিত ৬০ শতাংশ। এছাড়া দূরপাল্লার পথে থাকা সড়ক ও সেতুর টোলও মোট ভাড়ার সঙ্গে যুক্ত হবে।
সোমবার নগরের বহদ্দারহাট, অক্সিজেন, শাহ আমানত সেতু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বাসে নিয়ম মেনে যাত্রীরা গন্তব্যে ছুটে যাচ্ছেন।
দীর্ঘদিন পর বাস চলাচল শুরু করায় যাত্রীরা স্বস্তি প্রকাশ করলেও তাদের চোখেমুখে ছিল করোনা সংক্রমণের আতঙ্ক। বাস ভাড়া বৃদ্ধি করায় তাদের মধ্যে অস্বস্তিও লক্ষ করা গেছে।
আগ্রাবাদে বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন আমজাদ আলী। সোমবার সকাল ১১টার দিকে ১০ নম্বর রুটের একটি বাস থেকে বাদামতলী মোড়ে নামেন তিনি।
বাড়তি ভাড়া নিয়ে প্রশ্ন করলে আমজাদ বলেন, ‘মালিক- চালকদের দাবিতে ভাড়া বাড়িয়েছে সরকার। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি ভালো হলেও এটি কমবে না। আমাদের কষ্টের কথা কেউ ভাবছে না।’
মুরাদপুর এলাকায় হিউম্যান হলার যাত্রী রতন সরকার বলেন, করোনার আগে উঠানামা ছিল ৫ টাকা। আজ থেকে ১০ টাকা। গরিবের পকেট কেটে ধনীর পেটে আর কত?
জানা গেছে, বাস মালিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বি আরটিএ), যা করোনাকালের জন্য প্রযোজ্য হবে বলে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় গতকাল জানিয়েছে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পুরনো ভাড়া আদায় করতে হবে বলে জানিয়েছেন বিআরটিএ চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক তৌহিদুল হোসেন।
প্রসঙ্গত, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে চট্টগ্রামসহ সারাদেশ থেকে চলাচলকারী সব ধরনের গণপরিবহন গত ২৪ মার্চ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
এদিকে করোনাকালীন গণপরিবহনের ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়িয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপন স্থগিত চেয়ে সংশিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও বিআরটিএ চেয়ারম্যানকে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। নোটিশ পাওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রজ্ঞাপন স্থগিত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
সোমবার (১ জুন) সকালে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মনিরুজ্জামান লিংকন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব (সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ) এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যানের প্রতি এই নোটিশ পাঠান।