বাবা ফেরেনি বাকরুদ্ধ ঋদ্ধি

সুপ্রভাত ডেস্ক»

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পঞ্চম তলার আইসিইউ ইউনিট। তার পাশেই ভিজিটর রুম।
সেই রুমে কান্নার রোল। সড়ক দুর্ঘটনায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া রক্তিম সুশীলের নানা স্মৃতি হাতড়িয়ে বিলাপ করছেন স্বজনরা। সেখানে মামার কোলে ছিল ঋদ্ধি। সবার কান্নাকাটি দেখে পাঁচ বছরের ঋদ্ধি কিছু বুঝতে না পারলেও, বাকরুদ্ধ। ছলছল চোখে এদিক ওদিক করছেন ছোট শিশুটি। এখনো সে জানে না তার বাবা আর নেই।
পরিবারে ওরা ছিল ৭ ভাই। ৮ ফেব্রুয়ারি চকরিয়ায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় একসঙ্গে ৫ ভাই মারা যান। গুরুতর আহত অবস্থায় আরেক ভাইকে ভর্তি করানো হয় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। মাথায় প্রচ- আঘাত পাওয়ার কারণে অজ্ঞান হয়ে পড়েন তিনি। ১৪ দিন পর ৫ ভাইয়ের পথের পথিক হয়ে স্বর্গে পাড়ি জমান বেঁচে থাকা সেই ভাইটিও। এখন তাদের পরিবারে বেঁচে আছেন শুধু ছোট ছেলে প্লাবন সুশীল।
মাসখানেক আগে ঠাকুরদা সুরেশ চন্দ্রকে হারিয়েছে ঋদ্ধি। বাবাসহ ৫ কাকা গিয়েছিলেন ঠাকুরদার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায়। আর ফেরেননি। ঘাতক পিকআপের চাকায় পিষ্ট হয়ে জ্ঞান হারান বাবা। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে বাবার জ্ঞান ফেরার অপেক্ষায় ছিলে ৫ বছরের অন্তিক শর্মা ঋদ্ধি। ১৪ দিন পর না ফেরার দেশে চলে গেলেন তার বাবাও।
ঋদ্ধির বাবা রক্তিম সুশীল। কক্সবাজারের চকরিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। পরিবারের সবার সঙ্গে ঋদ্ধির বাবার মরদেহের অপেক্ষায় ছিল সে। অপলক নয়নে তাকিয়ে আছেন সেই ছোট শিশুটি। কখন বাবার দেখা মিলবে। সবাই ঋদ্ধিকে বলছে বাবা আর ফিরবে না৷ কিন্তু ছোট শিশুটি তা মানতে নারাজ। তার অপেক্ষা বাবার।
ঋদ্ধি বলছিলো, বাবা ব্যথা পেয়েছে। বাবা হাসপাতালে ঘুমাচ্ছে। বাবা আসবে।
মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে চকরিয়া উপজেলার মালুমঘাট এলাকায় রাস্তাপার হওয়ার সময় পিকআপ ভ্যানচাপায় নিহত হন একই ৪ ভাই। দুর্ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে ঋদ্ধির বাবা রক্তিম সুশীল আর কাকা স্মরণ সুশীলকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। একই দিন আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তার কাকা স্মরণ সুশীলও। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন আরও ৪ জন। সঙ্গে থাকা একমাত্র পিসিকে গুরুতর আহত অবস্থায় ভর্তি করানো হয়েছে কক্সবাজারের মালুমঘাট খ্রিষ্টিয়ান মেমোরিয়াল হসপিটালে। চিকিৎসা শেষে অসুস্থ অবস্থায় ভাইকে দেখতে চমেকে ছুটে এসেছেন তিনিও।
চমেকের অ্যানেসথিসিওলজি বিভাগের প্রধান ডা. অধ্যাপক রনজন কুমার নাথ বাংলানিউজকে বলেন, মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করেছিলাম। আন্তর্জাতিক গাইডলাইন মেনে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি৷ কিন্তু তার আঘাত ছিল অনেক গুরুতর। অপারেশন করার মতো পরিস্থিতি ছিল না। আজ সকাল ১০টায় তার মৃত্যু হয়।
দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন- অনুপম সুশীল (৪৬), দীপক সুশীল (৩৫), চম্পক সুশীল (৩০), নিরুপম সুশীল (৪০), স্মরণ সুশীল (৪৭)।
ঋদ্ধির বাবা রক্তিম শীল পেশায় একজন ব্যবসায়ী। তিনি ডুলাহাজারা এলাকার প্রাণ আরএফএলের ডিলার। পরিবারের অন্য ভাইদের চেয়ে আর্থিকভাবে সচ্ছল রক্তিম। পরিবারের ৬ ছেলেকে হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন মা।