বান্দরবানের পাহাড়ি ছন বিলুপ্তির পথে

এম.বশিরুল আলম, লামা :

কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে আবহমান বাংলার গ্রামীণ ঐতিহ্যের ছিরচেনা ছন কিংবা ছাউনির ঘর। দিনদিন আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখন পাহাড়ে ছন ও ছনের তৈরি ঘর বিলুপ্তির পথে বললেই চলে।

লামা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান জানান,খুব  বেশিদিন হয়নি যেখানে প্রতিটি গ্রামের দু’চারটি ছনের তৈরি ঘর চোখে পড়তো, বর্তমানে কয়েকটি ইউনিয়ন মিলেও এই ধরনের ঘর চোখে পড়ে না। এদিকে টিনের অত্যাধিক ব্যবহারের ফলে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। কারণ, দেশে অধিকাংশ টিন পরিবেশবান্ধব নয়। তবে লামা উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ি উপজাতি পাড়ায় এখনো রয়েছে কয়েকটি ছনের ঘর।

ছন কেটে ধানের মতো মেলে দিয়ে কিছুদিন শুকানোর পর তা বিক্রির জন্য ভার বেঁধে হাটে নিয়ে যাওয়া হতো। এক সময় এলাকাভিত্তিক ছনখোলা হিসেবে বেশ পরিচিত ছিল। কিন্তু কালের বিবর্তনে সেই দৃশ্য এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম্য এলাকার ছন। আধুনিক সভ্যতায় মানুষ এখন পাকা-আধাপাকা বাড়ি তৈরিতে ব্যস্ত। ছাউনি হিসেবে ব্যবহার করছে টিনকে। ফলে গ্রাম থেকে ছনের ব্যবহার ক্রমশ বিলুপ্তির পথে।

আগের মতো ছন পাওয়া যায় না বলে জানান লামা পৌরসভা এলাকার চাম্পাতলী মার্মা পাড়ার বাসিন্ধা মংফোহ্লা মার্মা। তিনি বলেন, এক সময় প্রতিবছর ঘরে পুরনো ছনের ছাউনি সরিয়ে নতুন করে ছন ব্যবহার করা হত। এ সময়ে মানুষ ব্যস্ত থাকে ঘর ছাউনিতে।

অনেকে অর্থাভাবে টিনের পরিবর্তে ছনকে ছাউনি হিসেবে ব্যবহার করত। তা ছাড়া ছন না পেয়ে ছনের চাহিদা কমে যাওয়ায় বিভিন্ন উপজেলার চাষিরাও বিমুখ হচ্ছে দিন দিন।

জানা গেছে, ছনের ছাউনির ঘর তৈরির জন্য গ্রামে কিছু কারিগর ছিলেন।

মংব্রাচিং মার্মা, ক্যসিং মার্মা, ইরন মল্লিক, সজিব দাস,  মো.হারুন, ছালে আহাম্মদসহ অনেকে জানান, ১০-১৫ বছর আগেও তাদের দৈনিক মজুরি ছিল ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত। ছন খোলাগুলোতে ধানের মত কাস্তে দিয়ে মুঠি মুঠি কেটে সাড়ি করে বিছিয়ে  শুকানোর জন্য রাখা হত। এরপর আগার পাতলা অংশ কেটে সাজিয়ে ছনের ভার করে বাজারে নিয়ে বিক্রি করে সংসার চালাত। এখন ছন বিলুপ্তির কারনে  সাধারণ গ্রামের মানুষ ঘর তৈরিতে ছাউনি হিসেবে আগের মতো ছনের ব্যবহার তেমন করতে পারছে না। গ্রাম কিংবা শহরে শৌখিনতায় অনেকে এই ছনের ঘর তৈরী করছে। তাছাড়া পানের বড়গেও এই ছন ব্যবহার হচ্ছে।

অনেকে জানান, দুই-তিন বছর পরপর ছন পরিবর্তন করতে হয় বলে এটাকে অনেকে ঝামেলা মনে করেন। সেই থেকে ছনের ছাউনি ঘরের সংখ্যা কমতে শুরু করে।

বর্তমানে এই ঘর খুব একটা চোখে পড়ে না। ছনের ছাউনির ঘরের কথা নবীনদের মন থেকে চিরতরে হারিয়ে যাচ্ছে। নতুন প্রজন্মের কাছে গ্রামবাংলার আবহমান ঐতিহ্যের ছনের ঘর রূপকথার গল্প কথনের মতো হয়ে যাবে।