বাজার নিয়ন্ত্রণে কঠোর হতে হবে সরকারকেই

দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারি পদক্ষেপ, বাজারে অভিযান ও মন্ত্রীদের আশ্বাসের কোনো প্রভাব বাজারে খুব একটা পড়ছে বলে মনে হচ্ছে না। পণ্যের দাম তেমন একটা কমে তো নি-ই; বরং কোনো কোনো পণ্যের দাম আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের বড় দুটি পাইকারি বাজারে কমেছে শুধু সয়াবিন তেলের দাম। চাল ও পাম তেলের বাজারে কোনো হেরফের হয়নি বলে জানা গেছে পত্রিকান্তরে। বেড়েই চলেছে চিনি, মসুর ডাল, অ্যাংকর ডাল, খেসারির ডাল, ছোলা, পেঁয়াজ ও খেজুরের দাম।
দেশে মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে শুরু হচ্ছে রমজান। পাইকারি বাজারে ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে রমজান মাসের পণ্যের কেনাবেচা । এখন কম দামে কিনতে পারলে খুচরা বাজারে তার প্রভাব পড়বে না। যদিও রোজা শুরুর আগে পণ্যের আমদানি ও সরবরাহ বেড়েছে।
টিসিবির হিসাবে, খুচরা বাজারে চিনির দাম অপরিবর্তিত আছে। এক মাসে ৪ শতাংশ বেড়েছে মধ্যম মানের খেজুরের দর। দেশি পেঁয়াজের দাম ২১ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১১০-১২০ টাকা।
সরকার শুল্ক-কর কমানোর প্রজ্ঞাপন জারির পর গত ২০ দিনে সবচেয়ে বেশি আমদানি হয়েছে খেজুর, পরিমাণ ২০ হাজার ৫৭৬ টন। পাম তেল সরবরাহ বেড়েছে। অপরিশোধিত সয়াবিনের আমদানি কমলেও সয়াবিন তেলের কাঁচামাল বীজ আমদানি বেড়েছে। এনবিআরের হিসাবে দেখা যায়, ছোলার আমদানিও কিছুটা বেড়েছে। তবে মসুর ও মটর ডাল আমদানি বাড়েনি। বাড়েনি চিনি আমদানিও। বিগত তিন মাসে চিনি আমদানি হয়েছে ৩ লাখ ১৫ হাজার টন, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ শতাংশ কম।
ব্যবসায়ী ও বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, আমদানি বেশি হলে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দাম কমে। কিন্তু শেষ সময়ে আমদানি বাড়লেও সার্বিকভাবে সরবরাহ আগের চেয়ে বেশি নয়। তাই প্রতিযোগিতা ততটা হচ্ছে না। এ ছাড়া সরকার চিনিতে তেমন কোনো শুল্কছাড় দেয়নি। শুল্ক-কর কমানো হলেও চাল আমদানিতে পূর্বানুমতির শর্ত রাখা হয়েছে
আসলে আমরা যত কিছুই বলি না কেন, স্বীকার করতে হবে বাজার ব্যবস্থাপনায় আমাদের কোথাও একটা গলদ আছে। দেখা যাচ্ছে সরকার ও জনগণ কতিপয় উৎপাদক, আমদানিকারক ও পাইকারি বিক্রেতার কাছে জিম্মি হয়ে আছে। সরকারের পক্ষ থেকে যা কিছুই করা হোক সেসব এই গোষ্ঠীর পছন্দ না হলে বা তাতে তাদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হলে তারা তা মানছেন না। অন্যদিকে তারা কোনোপ্রকার সামাজিক দায়বদ্ধতারও পরিচয় দেন না। ফলে বছরের পর বছর তারা মুনাফা করার কাজেই ব্যস্ত থাকেন। সেটা অন্যায়, অন্যায্য হোক তাতে তাদের কিছুই যায় আসে না।
এদের বিরুদ্ধে তাই কঠোর হওয়া ছাড়া সরকারের কাছে অন্য কোনো পথ খোলা নেই।