বাইরে জমজমাট, ভেতরে ভোটার উপস্থিতি কম

চট্টগ্রাম ১০ আসনে উপনির্বাচন, ভোটের হার ১১.৭ শতাংশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম-১০ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চু বিজয়ী হয়েছেন। ১৫৬টি কেন্দ্রের এ আসনে ৫২ হাজার ৯২৩ বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বাচ্চু।
এ আসনের মোট ভোটার ৪ লাখ ৮৮ হাজার ৬৩৮ জন। মোট ভোটারের মধ্যে ৫৭ হাজার ১৫৩ জন ভোট দিয়েছেন বলে জানান রিটার্নিং কর্মকর্তা। ভোটের হার ১১ দশমিক ৭ শতাংশ।
বিএনপিসহ অধিকাংশ দলের অনুপস্থিতিতে নিরুত্তাপ চট্টগ্রামের উপনির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কত হয়, তা নিয়ে শুরু থেকেই ছিল আলোচনা। দিন শেষে দেখা গেল, মোট যত ভোট পড়েছে তার ৯২ দশমিক ৬ শতাংশ ভোট একাই পেয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী বাচ্চু।
কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম
চট্টগ্রাম-১০ আসনের উপ-নির্বাচন চলাকালে গতকাল নিরাপত্তা ছিলো জোরদার। ভোটকেন্দ্রের বাইরে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর দলীয় লোকজনের সমাগম থাকলেও কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি ছিলো হাতেগোনা।
গতকাল রোববার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম-১০ আসনের রাবেয়া বসরী উচ্চ বিদ্যালয়, ফজলুল হাজেরা ডিগ্রি কলেজ, বাসন্তী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, হালিশহর হাউজিং এস্টেট উচ্চ বিদ্যালয়, হালিশহর হাউজিং এস্টেট উচ্চ বিদ্যালয়, রামপুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভেলুয়ার দীঘি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, রামপুর নতুন বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সরাইপাড়া ডিগ্রি কলেজ, সরাইপাড়া সিটি করপোরেশন উচ্চ বিদ্যালয় ও লালখান বাজার শহীদ নগর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সহ বেশকিছু ভোটকেন্দ্র সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে এ চিত্র দেখা গেছে।
পরিদর্শনে দেখা গেছে, ভোট কেন্দ্রের বাইরে জটলা বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে নৌকার নেতাকর্মীরা। কেউ কেউ এলোমেলো এদিক সেদিকে ঘুরছেন। কেন্দ্রের প্রবেশমুখে ছিলো পুলিশ ও আনসারের সদস্যরা। বয়স্ক ভোটারদের ভোট দেওয়ার নিয়ম ও পদ্ধতি বুঝিয়ে দিয়েছেন দায়িত্বে থাকা পোলিং অফিসার ও সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার। ভোটকেন্দ্রে পর্যাপ্ত ভোটারের দেখা না মিললেও সন্তোষজনক অবস্থানে ছিলো রাবেয়া বসরী উচ্চ বিদ্যালয় ও সরাইপাড়া সিটি করপোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের চিত্র।
ভোটকেন্দ্রের পরিস্থিতি নিয়ে রামপুর নতুন বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৩৯ নম্বর ভোট কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মাকসুদুর রহমান বলেন, ‘এ কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ হাজার ৯৫৭ জন। সকাল ১১টা পর্যন্ত প্রায় ৫ শতাংশের মতো ভোট পড়েছিলো।
কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি কম থাকা নিয়ে জানতে চাইলে বাসন্তী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে দায়িত্বপ্রাপ্ত নৌকার এজেন্ট বলেন, ‘এখানে (চট্টগ্রাম-১০ আসন এলাকায়) সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলেও প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা রেখেছে। তাই ভোটাররা চাকরি ফেলে ভোট দিতে আসতে পারছে না। এরপরও আমরা ঘরে ঘরে গিয়ে ভোট কেন্দ্রে আসার জন্য বলে এসেছি।’
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম-১০ আসনের রিটার্নি অফিসার ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকতা মো. হাসানুজ্জামান বলেন, ‘ভোটাররা কেন্দ্রে এসে যেন নিরাপদে ভোট দিতে পারে, এজন্য সব রকমের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিলো। কোনো কেন্দ্রে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

চট্টগ্রাম-১০ আসনের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী না থাকায় সেভাবে কিছু চোখে পড়ছে না। ভোটকেন্দ্রগুলোতে কোনো আমেজ নেই।

নগরীর ডবলমুরিং এলাকায় ভোট দিতে গিয়ে এসব কথা বলছিলেন গার্মেন্টস কর্মকর্তা আরাফাত হোসেন।
গতকাল রোববার নগরীর চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং, পাহাড়তলী ও হালিশহর) আসনের উপনির্বাচনে ডবলমুরিং ও পাঁচলাইশের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে আরাফাতের কথার সত্যতা মিললো। কেন্দ্রগুলোতে নৌকা প্রতীকের পোস্টার ছাড়া আর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীর পোস্টারও তেমন চোখে পড়েনি। এমনকি মাঝে মাঝে কয়েকটি ভোটকেন্দ্রে কিছু ভোটারের দেখা মিললেও কিছু ভোটকেন্দ্রগুলো ছিল হাতেগোনা। তাছাড়া ভোটকেন্দ্রগুলোতে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা ছাড়া অন্য কোন প্রার্থীর সমর্থকদের তেমন দেখা যায়নি।
এদিকে নির্বাচন উপলক্ষে গতকাল স্থানীয় অফিস ও প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অবসর কাটাতে অনেকেই গিয়েছেন বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে।

এদিকে কিছু কিছু এলাকায় নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিলো লক্ষণীয়। কথা হয়, লালখানবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আসা ভোটার সেলিনা আক্তার নামের এক ভোটারের সাথে। প্রথমবারের মতো ইভিএমে ভোট দিতে পেরে তিনি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আগে ভোট দিতে হতো লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে। এখন তেমন ভিড় নেই। তাছাড়া ইভিএমে প্রথমবারের মতো ভোট দিলাম। খুব সহজেই প্রছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পেরেছি।