বছরে মৎস্যখাদ্য-ওষুধ বিক্রি ১২৩ কোটি টাকা

মিরসরাই মুহুরী প্রজেক্ট

রাজু কুমার দে, মিরসরাই »
মিরসরাইয়ের মুহুরী প্রজেক্ট। মৎস্যচাষি ও ব্যবসায়ীদের জন্য একটি প্রসিদ্ধ নাম। যেখানে বছরে মাছ উৎপাদন হয় প্রায় ৪৯ হাজার মেট্রিক টন। শুধু তাই নয় মৎস্য খাদ্য ও ওষুধ বিপণন কোম্পানির প্রতিনিধি তাদের টার্গেট পূরণ করে মুহুরী প্রজেক্ট এলাকায় ব্যবসায়ীদের কাছে মৎস্যখাদ্য ও ওষুধ বিক্রির মাধ্যমে।
মৎস্যখাদ্য ও ওষুধ বিপণনের সাথে জড়িত দেশের বিভিন্ন কোম্পানির প্রতিনিধিদের দেয়া তথ্যমতে, মিরসরাইয়ের মুহুরী প্রজেক্ট এলাকায় অবস্থিত মৎস্য প্রকল্পগুলোতে মাসে প্রায় সাড়ে ১০ কোটি টাকার মৎস্য খাদ্য ও ৩০ লাখ টাকার ওষুধ বিক্রি হয়ে থাকে। বছরের প্রায় ১২০ কোটি টাকার মৎস্যখাদ্য ও ৩ কোটি টাকার ওষুধ বিক্রি হয়।

জানা গেছে, ১৯৮৪ সালে সরকার ফেনী নদীর মিরসরাই-সোনাগাজী অংশে প্রায় ৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বাঁধ নির্মাণের পর প্রায় ৫০ হাজার একরের অধিক চর জেগে উঠে। এই বাঁধ দিয়ে পশ্চিম দিকে যেতে বাঁধের দক্ষিণে চোখ যতদূর যায় ততদূর পর্যন্ত শত শত হেক্টর জমিতে এই মৎস্য প্রকল্প। এসব মৎস্য প্রকল্প ৩ দশক ধরে জেগে উঠা চরে ব্যক্তি উদ্যোগে দিঘি খনন করে শুরু হয় মৎস্য উৎপাদন। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে ব্যবসার প্রসার। সাফল্য দেখে উৎসাহী হয় যুবসমাজ।
মিরসরাইের ধুম, ওসমানপুর, ইছাখালী, কাটাছরা, দূর্গাপুর ইউনিয়নে গড়ে উঠে বিশাল মৎস্যভাণ্ডার। এভাবে গড়ে উঠেছে উত্তর চট্টগ্রামের সর্ববৃহৎ মৎস্য জোন।

মিরসরাই মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৭ হাজার একর জমিতে গড়ে উঠা এসব মৎস্য প্রকল্প থেকে বছরে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৪৯ হাজার মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয়। প্রতি মৌসুমে এসব মৎস্য প্রকল্প থেকে ১ হাজার ১২৭ কোটি টাকার মাছ বিক্রি করছেন চাষিরা। মুহুরী চর মৎস্য প্রকল্প থেকে প্রতিদিন ৭০-৮০ মেট্রিক টনের বেশি মাছ দেশের বিভিন্ন বাজারে আমিষের যোগান দিচ্ছে। এখানকার মাছ চট্টগ্রাম, ফেনী, খাগড়াছড়িসহ বিভাগের বিভিন্ন আড়তে মাছের চাহিদা মেটাচ্ছে। এখানে পাঙ্গাস, কার্প, তেলাপিয়া, রুই, মৃগেল, কোরাল, টেংরা, পাবদা, শিং, কই ইত্যাদি জাতের মাছ উৎপাদন হয়ে থাকে। গত ২৫ বছরে মিঠা পানির মাছ চাষের জন্য বিখ্যাত মুহুরী প্রকল্প সারা দেশের সবচেয়ে বড় মৎস্য জোন হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে এখানকার মাছ। শুধু মাছ বিক্রি নয়, মাছের সাথে সমন্বিত সবজির চাষ ও দিঘির পাড়ে আম্রপালির চাষ করে অনেকে সফল। পাশাপাশি বিশাল মৎস্য চাষের প্রয়োজনীয় খাদ্য ব্যবসার বিপুল প্রসার ঘটেছে।
উপজেলা কর্মকর্তা নাসিম আল মাহামুদ জানান, মুহুরী প্রকল্পে চট্টগ্রামের ৭০ ভাগ মিঠাপানির মাছের চাহিদা মেটায় মুহুরী সেচ প্রকল্প। মৎস্য উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য ও ওষুধ বিপণনের বিশাল বাজার রয়েছে মুহুরী প্রজেক্ট এলাকায়। উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর থেকে চাষিদের প্রয়োজনীয় পরাশর্ম ও সহায়তা দেয়া হয়ে থাকে বলে তিনি জানান।