ফুলবিক্রিতে চাকা ঘোরে সংসারের

হুমাইরা তাজরিন »

ফুল সবারই প্রিয়। ফুল ভালোবাসে না এমন মানুষ কমই আছে। প্রিয় মানুষকে তাই আর কিছু না হোক ফুল দেওয়া চাই। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের জীবনের আনন্দ-বেদনার নির্মল সাক্ষী এই ফুল। ফুলবিক্রেতা আয়েশা বেগম এই ফুলকেই জীবিকা হিসেবে নিয়েছেন জীবনসংগ্রামে টিকে থাকার জন্য। রোজ একঝুড়ি ফুল ফেরি করে বিক্রি করেন তিনি। ক্রেতা দেখলেই বলে ওঠেন, ‘এই মামা, মামির লাইগ্যা একটা ফুল নেন।’

তার সাথে কথা বলে জানা যায়, ৪০ বছর বয়সী আয়েশা বেগমের বাড়ি ভোলার লালমোহন থানার মহেশখালী গ্রামে। ছোটবেলা থেকেই চট্টগ্রামে বসবাস করছেন। নগরীর আমবাগান এলাকায় কষ্টের টাকায় অল্প জমির ওপর থিতু হয়েছেন কিছুদিন আগে। ১৯ বছর আগে নুরুল ইসলামের সাথে বিয়ে হয় আয়েশা বেগমের। তাদের সংসারে আছে রিমা আকতার (১৮) ও নুসরাত জাহান (১৭ ) নামে দুই মেয়ে ও মাইনুদ্দিন (১৩) নামে এক ছেলে। তিনজনই পড়ালেখা করছে। রিমা আকতার এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। নুসরাত পড়ালেখা করছে মাদ্রাসায় এবং মাইনুদ্দিন স্কুলে।

কখনও কাজির দেউড়ি, কখনও জামালখানে ফুল ফেরি করে বেড়ান আয়েশা বেগম। তবে কাজির দেউড়ি এলাকায় বিক্রেতার সংখা বেশি থাকায় ৪-৫ দিন ধরে তিনি জামালখানেই ফুল বিক্রি করছেন। তিনি জানান, মূলত চেরাগী পাহাড় থেকে পাইকারি মূল্যে ফুল কিনে নিয়ে সেগুলো তিনি বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা অব্দি বিক্রি করেন। প্রায়ই ক্রয়মূল্যের দ্বিগুণ টাকায় ফুল বিক্রি করে থাকেন। প্রতিটি ফুল বিক্রি করেন ২০ থেকে ৩০ টাকা মূল্যে। প্রতিদিন তার রোজগার হয় ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। ফুল বিক্রির এই উপার্জন দিয়ে তার সংসারের খরচ, ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে নিচ্ছেন। স্বামী নুরুল ইসলাম নগরীর বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টারে বেয়ারার কাজ করেন। তবে সংসারে তার স্বামী কোনো ভরণপোষণ দেন না। বেশ কয়েক বছর ধরেই সংসারের পুরোপুরি হাল আয়েশার ওপর।

‘ফুল তো রোজ বিক্রি করেন, কিন্তু আপনার স্বামী নুরুল ইসলমের কাছ থেকে কখনও ফুল পেয়েছেন?’ এমন প্রশ্নের উত্তরে আয়েশা বেগম জানালেন ,‘ না, আমারে কখনও ফুল দেয়নি। আমিও তারে কখনও ফুল দিই নাই।’

‘ফুল যিনি বিক্রি করেন তার কি কখনও ফুল পেতে ইচ্ছে করে না?’ এমন প্রশ্নে মাথা নামিয়ে আয়েশা বললেন, ‘নাহ, এখন আর এসব ইচ্ছে করে না।’
ফুল বিক্রি প্রসঙ্গে তিনি জানান এ কাজটার মধ্যে কষ্ট কম, লাভটা বেশি। তাই এ পেশায় থাকতে চান তিনি। গৃহস্থালি কাজ শেষ করেও এ কাজটা করা যায়। আর তাই এ পেশার মধ্যেই তার স্বস্তি।