পথেই ‘পাগলীর’ সন্তান প্রসব

শিক্ষার্থীর কলে পাশে দাঁড়ালো পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক »

একজন নারীর কাছে মা হওয়া যেন স্বর্গীয় সুখ। সন্তান আগমনকে কেন্দ্র করে মা ও পরিবারে চলে নানা প্রস্তুতি-পরিকল্পনা। কিন্ত সেই মা-ই যদি হয় মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন রাস্তার ভবঘুরে তাহলে সেটিকে সমাজের গুরুতর অসুখ বলা চলে। গতকাল (২৩ জানুয়ারি) তেমনই এক চিত্র দেখা গেল নগরের জামালখান এলাকায়। সন্তানপ্রসবে বেদনায় কাতরাচ্ছিলেন এক নারী। পথেই জন্ম দিলেন সন্তান। শত শত মানুষ আসা-যাওয়া করছে, কিন্তু কেউ ফিরেও তাকলো না। পরে ৯৯৯ নাম্বারে এক শিক্ষার্থী কল দিলে ছুটে আসে পুলিশ। তাদের সহোযোগিতায় চমেক হাসপাতালে নেওয়া হলে সন্তান এবং মা শারীরিকভাবে সুস্থ থাকার কথা নিশ্চিত করেন সংশ্লিষ্টরা। সোমবার (২৩ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টার দিকে জামালখান এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোস্তফা কামাল বলেন, ‘প্রান্ত শর্মা নামের চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের এক শিক্ষার্থী ৯৯৯ নাম্বারে কল দেন। থানা থেকে জানানোর পরপরই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাই। সেখানে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন ওই নারী। পার্শ্ববর্তী বেসরকারি একটি হাসপাতাল থেকে নার্স ডেকে আনা হয়। এর মধ্যে সন্তানটির জন্ম হয়ে যায়। পরে ওই নারীকে সন্তানসহ চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাতে দুই ব্যাগ রক্ত জোগাড় করে ওই নারীকে দেওয়া হয়েছে। শিশুটির ওজন কম থাকায় তাকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ভারসাম্যহীন নারীকে বর্তমানে ৩২ নাম্বার ওর্য়াডের এনআইসিউইতে রাখা হয়েছে। এখনো তাঁর সংজ্ঞা ফেরেনি। তবে বাচ্চাটি সুস্থ আছে।’

প্রসঙ্গটি নিয়ে কথা হয় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসানের সঙ্গে। তিনি বলেন, এক অজ্ঞাতনামা ভারসাম্যহীন নারী বাচ্চাপ্রসব করেন। পরে পুলিশের সহযোগিতায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা। বাচ্চাটি এখন শেখ রাসেল আইসিইউতে এবং মা গাইনিতে রয়েছেন। দুজনই সুস্থ আছেন। মা ও বাচ্চাটির সকল খরচ আমরা বহন করছি। পরে বাচ্চা লালনপালনে করতে সমস্যা হলেও সমাজসেবা অধিদপ্তরের সহযোগিতায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. ফরিদুল আলম বলেন, এমন অনেক শিশু ‘ছোটমণি’ নিবাসে রয়েছে। ছোটমণি নিবাস ছাড়াও উপজেলায় শিশুকল্যাণ বোর্ড আছে। সেখানেও এ রকম শিশুদের রাখা হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের জিডির মাধ্যমে অফিশিয়াল ফরোয়ার্ডিং দিয়ে আমাদের ছোটমণি নিবাসে স্থানান্তর করা হবে। সেখানেই শিশুটির লালনপালন করা হবে। নির্দিষ্ট সময় পরে কেউ দত্তক নিতে চাইলে তাও দেওয়া হবে।