পানি নামতে না পারার নেপথ্যে

জলাবদ্ধতা দুর্ভোগ

ভূঁইয়া নজরুল »

দিনভর বৃষ্টির তীব্রতা কম থাকলেও নামছে না পানি। চকবাজার, বাকলিয়া, বহদ্দারহাট, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা, হালিশহর কে ব্লক ও এল ব্লক এলাকায় এখনো হাঁটুসমান পানি। গত রোববার দিবাগত রাতে ভারী বৃষ্টির পর গতকাল সকালে রোদও উঠেছিল। দিনভর বৃষ্টির মাত্রাও খুব কম ছিল। তারপরও পানি নামছে না কেন?

এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে চকবাজার ফুলতলা, চাক্তাই, বহদ্দারহাট, মুরাদপুরসহ বিভিন্ন এলাকার খালপাড় ঘুরে দেখা যায় খালের পানি রাস্তার লেভেল থেকে নিচে। কিন্তু রাস্তায় পানি জমা রয়েছে। নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন মেগা প্রকল্পে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রকল্প পরিচালক আহমেদ মাঈনুদ্দিন বলেন, ‘আমি নিজে বাকলিয়া ও বহদ্দারহাটসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেছি। খালের পানি রাস্তার লেভেলের নিচে থাকার পরও পানি কেন নামছে না বুঝতে পারছি না। তবে চাক্তাই ডাইভারশান খালে তক্তার পুল এলাকায় সিটি করপোরেশনের একটি বাঁধ রয়েছে। সেই বাঁধের কারণে পানি নামতে সমস্যা হচ্ছে।’

সিডিএ’র প্রকল্প পরিচালকের বক্তব্যের সূত্র ধরে কথা হয় জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প মাঠপর্যায়ে কাজের দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের প্রকল্প পরিচালক লে. কর্র্নেল মো. শাহ্ আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক আগেই খালের সব বাঁধ সরিয়ে নিয়েছি। কিন্তু পানি না নামার কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখি তক্তার পুলের নিচে একটি বাঁধ রয়েছে সিটি করপোরেশনের। তারা এ স্থানে একটি ব্রিজ নির্মাণ করতে গিয়ে বাঁধ দিয়েছিল। কিন্তু সেই বাঁধ অপসারণ না করায় পুরো বাকলিয়া এলাকার পানি নামতে পারছে না। ইতিমধ্যে আমরা সিটি করপোরেশনকে বলেছি বাঁধটি সরিয়ে নিতে।’

শাহ্ আলীর বক্তব্যের বিষয়ে সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘তথ্যটি সঠিক নয়। আমরা ব্রিজ নির্মাণের জন্য ওখানে ছোটো একটা স্তূপ দিয়েছিলাম। তবে ইতিমধ্যে তা অপসারণ করা হয়েছে। পানি চলাচলে কোনো বাধা নেই।

তক্তার পুলের নিচের বাঁধের কারণে বাকলিয়া এলাকার পানি নামতে পারছে না, কিন্তু বহদ্দারহাট, খাজা রোড, পাঠানিয়া গোদা রোড এলাকায় পানি নামছে না কেন? এটা জানতে চাইলে লে. কর্নেল মো. শাহ্ আলী বলেন, ‘নালাগুলো আবর্জনায় ভরা থাকার কারণে খালে পানি আসছে না। এছাড়া আমাদের অর্ধ সমাপ্ত কাজও দায়ী। এসবের সাথে যুক্ত হয়েছে অতিরিক্ত বৃষ্টি ও সাগরের জোয়ার। এসব কারণে পানি নিচের দিকে নামতে পারছে না।’

তবে সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘পানি নামতে না পারার পেছনে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কারণ হলো বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাব। নগর বর্জ্যগুলো নালার মাধ্যমে খালে গিয়ে পড়ছে। ঘর থেকে বর্জ্যগুলো প্রকারান্তরে নালায় পড়ে নালা ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এতে পানি নামতে পারছে না। ফলে রাস্তায় পানি জমছে।’
তিনি আরো বলেন, খালগুলোর গভীরতা কমে গিয়েছে আবর্জনায়। যথারীতি ভারী বর্ষণ হলে জলাবদ্ধতা দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে।

গত দুদিন ধরে পানিবন্দি থাকা খাজা রোডের বাসিন্দা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, ‘আমার এলাকায় এখনো (রাত ৯টা পর্যন্ত) হাঁটুসমান পানি। রাস্তা থেকে পানি খুব দ্রুত নামছে। ছোট নালাগুলোর স্থানে স্থানে ব্যারিকেড দিয়ে খালগুলোতে কাজ করা হয়েছিল। অনেক স্থানেই ছোট নালার বাঁধগুলো অপসারণ না করায় পানি নামতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।’

অধ্যাপক ইসমাইলের এ কথার সত্যতা পাওয়া যায় বহদ্দারহাট এলাকার সিডিএ এভিনিউ সড়কে। এ সড়কের পাশের খালের রিটেনিং দেয়াল নির্মাণ করতে গিয়ে এই খালের যেসব নালার পানির সংযোগ লাইন ছিল সবগুলো বাঁধ দিয়ে বন্ধ করা হয়েছিল। বর্ষার আগে খালের পানি অপসারণের রাস্তা করে দেয়া হলেও নালার সংযোগগুলো অনেক স্থানে অপসারণ করা হয়নি। এতে রাস্তায় পানি জমছে ও পানি নামতে পারছে না।
এ বিষয়ে মো. শাহ্ আলী বলেন, ‘আমাদের অনেক কাজ অর্ধসমাপ্ত রয়েছে। এগুলো শেষ না হওয়া পর্যন্ত পানি চলাচলে বাধা থাকবে।’

এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিগত ২৪ ঘণ্টায় আমবআগান কেন্দ্র ২৩২ দশমিক ৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে এবং পতেঙ্গা কেন্দ্র ১৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। তবে কাল থেকে বৃষ্টির মাত্রা কমবে বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার থেকে টানা বর্ষণের কারণে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। অনেক এলাকায় তিনদিন ধরে পানি নামেনি। এছাড়া পাহাড়ধসের ঘটনাও ঘটেছে।