নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেবে কে

ইয়াছিন আরাফাত। বয়স ১৮ মাস। খেলতে গিয়ে নালায় পড়ে যায় শিশুটি। দীর্ঘ ১৬ ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে সোমবার সকালে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন। একমাত্র সন্তান হারিয়ে কিছুতেই কান্না থামছে না ইয়াছিনের বাবা-মা নগরের উত্তর আগ্রাবাদের রঙ্গীপাড়ার সাদ্দাম ও নাসরিনের। গত ২৬ আগস্ট বিকেলে শিশুটি নালায় পড়ে যাওয়ার পর থেকে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। নালার আবর্জনায় আটকে ছিল শিশুর মরদেহটি।
যে নালায় পড়ে মারা গেছে ইয়াছিন তার কিছু অংশে নিরাপত্তা দেয়াল দেওয়া ছিল আগেই। কিন্ত ৬ থেকে ৭ ফুট অংশে কোনো দেয়াল নেই। সেখানেই ইয়াছিন পড়ে যায়। সে নালা ঘেঁষে প্রতিদিন মোল্লাপাড়া, মুড়িপাড়ার হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করে। স্থানীয়রা বলছেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) দায়িত্বহীনতায় মারা গেল শিশু ইয়াছিন।
আবদুল মিয়া নামে এক স্থানীয় সুপ্রভাতকে বলেন, ‘সময় থাকতে নালা পরিষ্কার করেনি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। বহুবার বলা হয়েছে নালা পরিষ্কার করে দিতে। কিন্ত কোনো পরিচ্ছন্নতাকর্মী আসেনি। একবছর ধরে পরিষ্কার করতে দেখা যায়নি কাউকে। নালাতেও কোনো স্ল্যাব দেওয়া হয়নি। নালা ঘেঁষে ছোট পথ ধরে হাজার হাজার লোক আসা-যাওয়া করে। তবুও নালাটি অরক্ষিতভাবেই রয়েছে। এভাবে আর কতদিন চলবে।’
অথচ চলতি বছরের বর্ষা শুরুর আগেই নগরের সব নালা ও ড্রেনের বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্য ২ কোটি ৪৫ লাখ টাকার একটি প্রকল্প নেয় সিটি করপোরেশন। প্রকল্পটি দেখভালের দায়িত্ব সংস্থাটির প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেম এবং বর্জ্যব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোবারক আলীর। কাউন্সিলর তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘নালায় পড়ে যে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে, সেটির দায় তার বাবা-মাকে নিতে হবে। কেননা বাচ্চা খেলতে খেলতে ড্রেনে পড়ে যাবে, তা হতে পারে না। শিশুটিকে সামলে রাখা উচিত ছিল তার বাবা-মায়ের।’
এটা কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তির মন্তব্য হতে পারে না। তাতে অরক্ষিত নালায় পড়ে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছেই। ২০২১ সালের ৩০ জুন নগরীর ২ নম্বর গেট এলাকার চশমাখালে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা পড়ে গিয়ে দুজনের মুত্যু হয়। একই বছরের ২৫ আগস্ট নগরীর মুরাদপুর মোড়ের নালায় তলিয়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন সালেহ আহমেদ নামে এক সবজি ব্যবসায়ী। ঘটনার পর টানা কয়েকদিন অভিযান চালিয়েও তাঁকে উদ্ধার করতে না পারায় একপর্যায়ে তৎপরতা বন্ধ করে দেয় ফায়ার সার্ভিস। দুবছর পেরিয়ে গেলেও তাঁর মরদেহের খোঁজ মেলেনি আজও। একই বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর নগরীর আগ্রাবাদ এলাকায় ১৯ বছর বয়সী সেহেরীন মাহবুব সাদিয়া নালায় তলিয়ে যান। চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের প্রথমবর্ষের এই ছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করা হয় নিখোঁজ হবার দিন রাতের বেলায়। এছাড়া চলতি বছরে ৭ আগস্ট নালায় পড়ে নিপা পালিতের মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ ২৮ আগস্ট ইয়াছিন নালায় পড়ে মারা যায়।
আমাদের প্রতিষ্ঠান এবং তার দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা যদি যথাযথ দায়িত্ব পালন করতেন তাহলে এ পর্যন্ত নালায় পড়ে ৯ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটতো না।