নতুন প্রজন্মের জন্য স্থিতিশীল অঞ্চল

ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগর ঘিরে ক্রমবর্ধমান ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতার প্রেক্ষাপটে এই অঞ্চলের দেশগুলোর গুরুত্ব বাড়ছে। বিশ্বের সবচেয়ে বর্ধিষ্ণু অঞ্চল হিসেবে ভূরাজনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একটি শক্তিশালী আঞ্চলিক কাঠামো গড়ে তোলার লক্ষে গত ১২ ও ১৩ মে ঢাকায় ভারত মহাসাগরীয় সম্মেলন (ইন্ডিয়ান ওশান কনফারেন্স–আইওসি) অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ভারতের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন সিঙ্গাপুরের এস রাজারত্নম স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সহযোগিতায় দুই দিনের এই সম্মেলনের আয়োজন করেছে। এই সম্মেলনের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘স্থিতিশীল ভবিষ্যতের জন্য শান্তি, সমৃদ্ধি এবং অংশীদারত্ব’।
সম্মেলনে অংশ নেয় ভারত মহাসাগর রিম অ্যাসোসিয়েশন (আইওরা), অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনস (আসিয়ান) এবং বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো–অপারেশনের (বিমসটেক) কয়েকটি সদস্যদেশ।
এর আগে পাঁচটি সম্মেলন যথাক্রমে ২০১৬ সালে সিঙ্গাপুরে, ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কায়, ২০১৮ সালে ভিয়েতনামে, ২০১৯ সালে মালদ্বীপে এবং ২০২১ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবার ষষ্ঠ সম্মেলন ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আঞ্চলিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করছেন, এতদঞ্চলে চীনের ক্রম সম্প্রসারমাণ প্রভাব থেকে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোকে মুক্ত রাখতে এ রকম একটি কাঠামো গঠন করা হয়েছে। তবে এই অর্থনৈতিক বলয় কতটা সফল হতে পারবে, তার অনেকটাই নির্ভর করবে প্রভাবশালী দুই দেশ জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের করা আর্থিক অঙ্গীকারের ওপর।
এই কাঠামোতে অংশ নেওয়া ১৩টি দেশের অধিকাংশের চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। এ কারণে সেসব দেশ এটাকে সরাসরি চীনের বিরোধিতা হিসেবে দেখছে না; বরং একটি অতিরিক্ত সহায়ক অবলম্বন হিসেবে গণ্য করছে।
ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে বিশ্বের ৩৫ শতাংশ মানুষ বাস করে। বিশ্বের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) মাত্র ১০ দশমিক ৭ শতাংশ আসে এই অঞ্চল থেকে। এক–তৃতীয়াংশ বৈশ্বিক বাণিজ্য হয় ভারত মহাসাগর অঞ্চল দিয়ে। এই অঞ্চলের দেশগুলোকে একে অপরের সার্বভৌমত্ব, সংহতি ও রাজনীতিকে সম্মান করে একে অপরের সঙ্গে কাজ করতে হবে। বাণিজ্য প্রসারেও ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন করতে হবে। সমুদ্র ঘিরে বিশাল অর্থনীতির সুবিধা নিতে নিজেদের মধ্যে সংযোগ বাড়াতে হবে। হারিকেন, সাইক্লোন ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এ অঞ্চলের দেশগুলো ক্ষতির মধ্যে রয়েছে, সেদিকেও নজর দিতে হবে।
ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোকে বৈশ্বিক বাণিজ্য ও নিরাপত্তার স্বার্থে এক হতে হবে। এ জন্য দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও আস্থা থাকা প্রয়োজন। নতুন প্রজন্মের জন্য স্থিতিশীল অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় যৌথভাবে লক্ষ্যে পৌঁছাতে পরস্পরের মধ্যে আস্থার সম্পর্ক তৈরি করতে হবে।