বাড়িওয়ালাকে ফাঁসাতে শিশুকে পানির ট্যাংকে ফেলে হত্যা

আসামি নাজমা
নারীসহ গ্রেফতার ২, আদালতে দায় স্বীকার

নিজস্ব প্রতিবেদক :

নগরের বাকলিয়া থানাধীন মিয়াখান নগর এলাকায় আব্দুর রহমান আরাফ নামে দুই বছর বয়সী এক শিশুকে হত্যার অভিযোগে এক নারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। নাজমা বেগম (৪০) নামে ওই নারীকে মঙ্গলবার বিকালে কোতোয়ালির থানাধীন মনোহরখালী এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

গ্রেফতার নাজমা বেগম কুমিল্লার মুরাদনগর থানার থোল্লা বাখরনগরের তাজুনুর ইসলাম প্রকাশ বাবুলের স্ত্রী ।
বাকলিয়া থানার ওসি নেজাম উদ্দীন জানান, বাকলিয়ার মিয়াখান নগরে স্ত্রী ফারহানা ইসলাম (২৭), ছেলে আব্দুর রহমান আরাফ (২), শালিকা নাসরিন ইসলাম (১৮) এবং সাবলেট ভাড়াটিয়া রাসেল হোসেনসহ ভাড়া বাসায় থাকেন অপসোনিন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড এর কর্মকর্তা আব্দুল কাইয়ুম (৩৮)।

পুলিশ জানায়, গত ৭ জুন বিকালে নিজের কর্মস্থল কে সি দে রোডে যান আব্দুল কাইয়ুম। বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে ছেলে আরাফকে খুঁজে না পাওয়ার কথা ফোনে আব্দুল কাইয়ুমকে জানান স্ত্রী । খবর পেয়ে তিনি নিজের মোটর সাইকেলে দ্রম্নত বাসায় এসে স্ত্রীকে নিয়ে আশেপাশে এবং মহলস্নায় ছেলেকে খোঁজাখুজি করেন। মসজিদের মাইকে ঘোষণাও দেন। কোথাও ছেলেকে না পেয়ে বাকলিয়া থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন।
থানায় জিডি করে বাসায় ফেরার সময় রাত সাড়ে আটটার দিকে স্থানীয় হেলাল নামে এক ব্যক্তি মোবাইল ফোনে আরাফকে তাদের ভাড়া বাসার (মিয়াখান নগর মিয়ার বিল্ডিংয়ের ছাদে) পানির ট্যাংকে পাওয়া গেছে বলে আব্দুল কাইয়ুমকে জানান।
দ্রম্নত ঘটনাস’লে গিয়ে কাইয়ুম দেখেন, তার ছেলে আরাফকে পানির ট্যাংক থেকে তুলে মৃত অবস্থায় ছাদে শুয়ে রেখেছে। খবর পেয়ে ঘটনাস’লে যায় পুলিশ। এরপর স্থানীয়দের সহায়তায় শিশু আরাফকে চমেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আরাফকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে লাশ মর্গে পাঠানো হয়।
ছেলের এমন নির্মম হত্যাকাণ্ডে কাইয়ুম ও তার পরিবারের সদস্যরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এ ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের করেন কাইয়ুম। মঙ্গলবার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে নাজমা বেগমকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর নাজমা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
জবানবন্দিতে নাজমা বেগম জানান, তার তিন মেয়ে ও দুই ছেলে। এরমধ্যে দুই মেয়ে গার্মেন্টেসে চাকরি করে। দুই ছেলের মধ্যে তার এক ছেলে মো. হাসান (২৩) মালিক নুরম্নল আলমের সাথে মিয়ার বিল্ডিংয়ে ২ বছর ধরে ভাড়ায় বসবাস করার পাশাপাশি ওই ভবনের দারোয়ানের হিসেবেও কাজ করে।
আরেক ছেলে ফিশারিঘাটে মাছের দোকানে কাজ করে। গত তিন বছর আগে তার স্বামী তাজুল ইসলাম বাবুল হার্নিয়া রোগে আক্রান্ত হয়। তার স্বামীকে সুস্থ করতে প্রায় তিন লাখ টাকা সুদের উপর ধার করেন নাজমা। সুদের কিস্তির টাকা এবং সংসার পরিচালনা করতে গিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন নাজমা। স্বামীও কোন কাজকর্ম করতে পারেন না।
করোনা পরিস্থিতির কারণে গার্মেন্টেসে মেয়েদের চাকরি বন্ধ হয়ে যায়। ধারদেনা করে এবং কাগজের ঠোঙা তৈরি করে কোনরকমে সংসার চালানোর চেষ্টা করে। এদিকে ছেলে মো. হাসানকে দারোয়ানের চাকরিতে খাটালেও ঠিকমত বেতন দেন না ভবন মালিক। ছেলের বেতন নিয়ে ভবন মালিকের সাথে ভুল বুঝাবুঝি নাজমার। এ সুযোগে এলাকার পূর্ব পরিচিত মো. ফরিদের যোগসাজশে বিল্ডিং মালিক নুরম্নল আলম মিয়াকে ফাঁসানোর জন্য চক্রানত্ম করেন নাজমা। বিল্ডিংয়ের মালিককে ফাঁসাতে ভাড়াটিয়া আব্দুল কাইয়ুম এর দুই বছরের শিশু ছেলে আরাফকে হত্যার পরিকল্পনার বিষয়টি ফরিদকে জানান নাজমা।
ফরিদের কথামতো গত ৭ জুন সন্ধ্যায় ৬টার দিকে আরাফকে পার্কিংয়ে হাঁটতে দেখে আদর করার ছলে কোলে নেয়। এরপর আট তলার উপর সিঁড়ি বেয়ে পানির ট্যাংকের উপরে উঠে আরাফকে পানির ট্যাংকের ভেতরে ফেলে দেন নাজমা। এসময় পাশের বিল্ডিংয়ের ছাদের উপর থেকে নাজিম উদ্দিন ও আলিম উদ্দিনসহ কযেকজন ঘটনাটি দেখে ফেলেন। আরাফকে ফেলে দেয়ার পর নাজমা তার বাসায় চলে যান। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মহিউদ্দিন মুরাদ এর আদালতে নাজমা বেগম শিশু আরাফ হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় এ জবানবন্দি দেন ।