নগরে নির্বাচনী সংঘর্ষ বাড়ছে

  • লালখান বাজারে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ, আহত ১৫

  • হালিশহরে ডা. শাহাদাতের গাড়িতে হামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক :

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন কেন্দ্র করে বাড়ছে সংঘর্ষ।  শনিবার লালখান বাজারে নৌকার প্রচারণায় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। অপরদিকে হালিশহরে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাতের গাড়ি বহরে ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর আগে নির্বাচনী সহিংসতায় ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে একজন মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল কাদেরহ ১১ জন রিমান্ডে রয়েছেন।
এদিকে নির্বাচনী সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে রাখতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক থাকার জন্য বলা হয়েছে- জানান রিটার্নিং অফিসার ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বিক্ষিপ্তভাবে সংঘর্ষের সংবাদ আমরা পাচ্ছি। এজন্য সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাবও মোতায়েন থাকছে।’
শনিবার বিকেলে ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের পূর্ব ফিরোজশাহ এলাকায় আওয়ামী লীগের মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থী আবসার মিয়ার সমাবেশে পুলিশ ও র‌্যাবের উপস্থিতি ছিল। এই আসনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন সাবেক কাউন্সিলর জহিরুল আলম জসিম।
এদিকে গত শুক্রবার বিকেলে লালখান বাজার ওয়ার্ডে নির্বাচনী গণসংযোগে যান আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী। কিন্তু তার যাওয়াকে কেন্দ্র করে টাইগারপাস বটতল এলাকায় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় গ্রুপের প্রায় ১৫ জন কর্মী আহত হয়েছেন।
সংঘর্ষ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী আবুল হাসনাত বেলাল বলেন, আমাদের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিমের আগমন উপলক্ষে নারীদের দিয়ে ফুল হাতে নিয়ে অপেক্ষা করছিলাম। এসময় নেতাকর্মীদের সকলেই উপস্থিত ছিলেন। আর তখন একদল নেতাকর্মী নিয়ে দিদারুল আলম মাসুম জমায়েতের মধ্যে হট্টগোল শুরু করে এবং আমাদের সঙ্গে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এতে আমার চার থেকে পাঁচজন কর্মী গুরুতর আহত হন।
তবে এই হামলার জন্য কাউন্সিলর প্রার্থী আবুল হাসনাত বেলাল গ্রুপকে দায়ী করেছেন লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি দিদারুল আলম মাসুম। তিনি বলেন, ‘রেজাউল করিম ভাইকে বরণ করার জন্য আমরা নেতাকর্মীদের নিয়ে মিছিল করে টাইগারপাস দিয়ে প্রবেশ করছিলাম। মিছিলটি বটতল এলাকায় পৌঁছার পর বেলালের গ্রুপ আমাদের মিছিলের উপর পেছন দিক থেকে হামলা করে। এতে আমার তিনজন কর্মী ( দুজন মহিলা ও একজন পুরুষ) গুরুতর আহতসহ মোট ১০ জন আহত হয়।’
কিন্তু আবুল হাসনাত বেলাল বলছেন, আপনার (দিদারুল আলম মাসুম) গ্রুপের কর্মীরা হামলা চালিয়েছে। এর জবাবে দিদারুল আলম মাসুম বলেন, ‘নৌকা প্রতীকের স্লোগানে কি কেউ হামলা করে? নিশ্চয় তারা মদ্যপ অবস্থায় ছিল হয়তো। অন্যথায় আমাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা করার কথা নয়। আর আমাদের উপর তারা হামলা করেছে বলে পুলিশ আমাদেরকে আমবাগান দিয়ে লালখান বাজারে প্রবেশ করতে বলেছে।’
তিনি আরো বলেন, এই আসনে তারা পাঠানটুলী ওয়ার্ডের মতো একটি লাশ চেয়েছিল। কিন্তু আমার লোকজনকে মারামারি করতে নিষেধ করেছিলাম। তবে তারা লাঠি নিয়ে আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল।
লালখান বাজারের মারামারি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খুলশি থানার ওসি মোহাম্মদ শাহিনুজ্জামান বলেন, টাইগারপাস এলাকায় মাসুম ও বেলাল গ্রুপের মধ্যে হালকা সংঘর্ষ হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। বড় ধরনের সংঘর্ষ হয়নি।
হালিশহরে ডা. শাহাদাতের গাড়ি ভাঙচুর
হালিশহর ২৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে যাওয়ার পথে গাড়িতে হামলার শিকার হন বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত। এ বিষয়ে ডা. শাহাদাতের একান্ত সচিব মারুফুল কবির বলেন, গাড়িটি হালিশহর ঈদগাঁহ রুপসা বেকারির কাছে এলে পেছন থেকে ডা. শাহাদাতের গাড়িতে আঘাত করা হয়। ইট পাথরের টুকরা দিয়ে গাড়ির পেছনের গ্লাস ভেঙে দেয়া হয়। পরবর্তীতে গাড়ি থামালে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।
এ বিষয়ে নগর বিএনপি থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী আবদুস সবুর লিটনের অনুসারীরা এই হামলা চালায়। ডা. শাহাদাতের গাড়িতে নগর বিএনপির সেক্রেটারি আবুল হাশেম বক্করও উপস্থিত ছিলেন।
শাহাদাতের গাড়িতে হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী আবদুস সবুর লিটন বলেন, ‘ঈদগাহ এলাকায় মেয়র প্রার্থী রেজাউল ভাইয়ের গণসংযোগ ছিল। ওখানে স্বাভাবিকভাবেই লোকজনের বেশি জমায়েত ছিল। তিনি (ডা. শাহাদাত) এতো লোকের উপস্থিতি দেখে হয়তো মনে করেছেন উনাকে হামলা করা হবে। তাই তিনি নিজেই দ্রুত গতিতে গাড়ি চালিয়ে এলাকা ছেড়ে যান।’
কিন্তু ডা. শাহাদাত তো বলছেন, আপনার লোকজন পেছন থেকে গাড়িতে হামলা করেছে। এর জবাবে তিনি বলেন, ‘এখন তিনি যদি মিথ্যা বলেন তাহলে তো কিছু বলার নেই।’