ধেয়ে আসছে মোখা

ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় দরকার সমন্বিত প্রস্তুতি

দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় থাকা গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’য় পরিণত হয়েছে। ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় মোখা। ঘূর্ণিঝড়টি ক্রমশ শক্তি সঞ্চয় করে পেছনে বাঁক নিয়ে উত্তর-উত্তর-পূর্ব দিকে সরে যেতে পারে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এটি দানবীয় শক্তিমত্তা নিয়ে সুপার সাইক্লোনে পরিণত হতে পারে। যদি দিক না বদলায় তবে আগামী রবিবার রাতের কোনো এক সময় কক্সবাজার ও মিয়ানমার উপকূলের ভূভাগে আঘাত করবে মোখা।
কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, প্রধান-প্রধান আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল অনুসারে ঘূর্ণিঝড় মোখার অগ্রভাগ ১৪ মে সকাল ৬ টার পর থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলে আঘাত করার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ও পিছনের অংশ সন্ধ্যা থেকে সোমবার ভোর পর্যন্ত উপকূল অতিক্রম করার আশঙ্কা রয়েছে। মোখা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের উপর দিয়ে স্থল ভাগে আঘাত করার সর্বোচ্চ সম্ভাবনার কথা মডেলগুলো নির্দেশ করছে। স্থল ভাগে আঘাতের সময় বাতাসের গতিবেগ থাকতে পারে ঘণ্টায় ১৩০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার।
চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার উপকূলের উপর দিয়ে অতিক্রম করার সময় এই দুই জেলার উপকূলীয় এলাকাগুলো ১৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের চোখ বা কেন্দ্র কক্সবাজার জেলার সেন্টমার্টিন দ্বীপ, টেকনাফ ,কুতুবদিয়া ও মহেশখালী উপজেলার উপর দিয়ে অতিক্রম করার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলোতে পাহাড় ধ্বসের প্রবল ঝুঁকি রয়েছে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন,ঘূর্ণিঝড়টি শক্তি ধরে রাখার জন্য যে তিনটি প্রধান শর্ত প্রয়োজন তার তিনটিই আছে এবারের মোখার। সমুদ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ২৭ ডিগ্রির উপরে এবং সমুদ্রে সঞ্চিত শক্তি যথেষ্ট পরিমাণে আছে, ফলে ঘূর্ণিঝড়টি আকারে অতিকায় হবে।
সুপার সাইক্লোনে রূপ নিতে পারে এই আশঙ্কায় ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় ফসলের ক্ষতি এড়াতে পাকা ধান, আম ও অন্যান্য ফসল দ্রুত সংগ্রহ করার পরামর্শ দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। কক্সবাজার জেলায় সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবেলায় কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে নাগরিকদের সেবা প্রদানের পাশাপাশি জান-মালের ক্ষতি কমাতে ৯০টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনও বিদ্যমান আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করা ছাড়াও জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখতে ইউএনও ও শিক্ষা কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ কমবেশি আসবেই। প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে দুর্যোগের ফলে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি মানুষের চেষ্টায় কমিয়ে আনা সম্ভব। যত দ্রুত সম্ভব সমন্বিত প্রস্তুতি নিয়ে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষদের ঘূর্ণিঝড় মোখার ছোবল থেকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসতে হবে।