ধর্মীয় বিভেদমুক্ত দেশ গড়তে হবে : শেখ হাসিনা

সুপ্রভাত ডেস্ক »

সবাইকে বাঙালির সার্বজনীন উৎসব নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে ধর্মীয় বিভেদমুক্ত দেশ গড়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেছেন, ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় স্নাত হয়ে আসুন, বাংলাদেশকে একটি সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলি। খবর বিডিনিউজের।
‘যেখানে বৈষম্য থাকবে না, মানুষে মানুষে থাকবে না কোনো ভেদাভেদ, থাকবে না ধর্মে-ধর্মে কোনো বিভেদ। পারস্পরিক সৌহার্দ্য আর ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে আসুন বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করি।’

১৪২৯ বঙ্গাব্দ উপলক্ষে বুধবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে একথা বলেন সরকার প্রধান। এই ভাষণ রেডিও ও টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার হয়।
ভাষণের শুরুতেই শেখ হাসিনা সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘জাগতিক নিয়মের পথ-পরিক্রমায় বছর শেষে আমাদের মধ্যে আবার এসেছে নতুন বছর- ১৪২৯ বঙ্গাব্দ। সবাইকে নতুন বছরের আন্তরিক শুভেচ্ছা। শুভ নববর্ষ।’
করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে গত দুই বছর বর্ষবরণের আয়োজন করতে না পারার কথা বলার পাশাপাশি এবার উৎসবে শামিল হলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেন তিনি।
‘করোনাভাইরাস একেবারে নির্মূল হয়নি। নতুনরূপে করোনাভাইরাস আবার যে কোনো সময় যে কোনো দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। আমি সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এসব অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’
জনগণকে এই মহামারী থেকে সুরক্ষিত রাখতে সরকার সচেষ্ট জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইতোমধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ টিকা পাওয়ার যোগ্য মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে। টিকা প্রদান অব্যাহত রয়েছে। দ্বিতীয় ডোজের পর এখন বুস্টার ডোজ দেওয়া হচ্ছে।’

আবহনমান কাল ধরে বাঙালির পহেলা বৈশাখ উদযাপনের ইতিহাস তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ধর্মে-বর্ণে বিভক্ত হলেও ঐতিহ্য ও কৃষ্টির জায়গায় সব বাঙালি এক এবং অভিন্ন। নানা ঘাত-প্রতিঘাতে অনেক ঐতিহ্য হারিয়ে গেলেও পয়লা বৈশাখে নববর্ষ উদযাপন এখনও স্ব-মহিমায় টিকে আছে। সারা বছরের ক্লেদ-গ্লানি, হতাশা ভুলে এদিন সব বাঙালি নতুন আনন্দ-উদ্দীপনায় মেতে উঠেন।’
বাঙালির মুখের ভাষা, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে উপজীব্য করেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটেছিল বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘যার উপর ভিত্তি করে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ২৩ বছরের রাজনৈতিক সংগ্রাম এবং ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয়েছে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। কাজেই আমাদের ভাষা,সংস্কৃতি, কৃষ্টি এবং ঐতিহ্যকে অস্বীকার করা মানে আমাদের স্বাধীনতাকেই অস্বীকার করা।’

তিনি বলেন, ‘সকল সঙ্কীর্ণতা, কূপমণ্ডুকতা পরিহার করে উদারনৈতিক জীবন-ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পয়লা বৈশাখ আমাদের অনুপ্রাণিত করে। মনের ভিতরের সকল ক্লেদ, জীর্ণতা দূর করে আমাদের নতুন উদ্যমে বাঁচার শক্তি জোগায়, স্বপ্ন দেখায়।

‘আমরা যে বাঙালি, বিশ্বের বুকে এক গর্বিত জাতি,পয়লা বৈশাখের বর্ষবরণের মাধ্যমে আমাদের মধ্যে এই স্বাজাত্যবোধ এবং বাঙালিয়ানা নতুন করে প্রাণ পায়, উজ্জীবিত হয়।’
বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বাঙালিরা হাজার বছরের লোক-সংস্কৃতির নানা উপাদানের সঞ্চালন ঘটাচ্ছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এর মাধ্যমেই পৃথিবীজুড়ে তৈরি হচ্ছে বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে অন্য সংস্কৃতির সেতুবন্ধ।’