দেশে চলবে ট্রেন ও বিমান : যাত্রী থাকবে অর্ধেক

‘আমার মধ্যে তো শুধু দেশপ্রেম না, পেটের প্রেমও আছে’

 

সুপ্রভাত ডেস্ক :

ট্রেনের ভেতরে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে টিকেট বিক্রি অর্ধেকে নামিয়ে আনা হবে বলে জানান রেলমন্ত্রী। রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, রেল চলাচলে সব ধরণের স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলা হবে। প্রয়োজনে রেল চলাচল আগের তুলনায় সীমিত করে দেয়া হবে। সামাজিক দূরত্ব মানতে ৫০ ভাগ টিকেট বিক্রি করা হবে। তিনি বলেন, সীমিত আকারে বলতে আমরা বোঝাতে চাই যে, মহানগর এবং আন্তঃনগর ট্রেনই চলবে। সাথে যে রুটে তিনটা ট্রেন ছিল সেখানে একটা চালানো হবে। যেখানে ৫টা ট্রেন ছিল সেখানে দুই-টা চলবে।

এছাড়া ট্রেনের ভেতরে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে টিকেট বিক্রি অর্ধেকে নামিয়ে আনা হবে বলেও জানান রেলমন্ত্রী। “একটা ট্রেনের অর্ধেক টিকেট বিক্রি করবো আমরা, এটা তো আমাদের হাতে।”

রেলমন্ত্রী মি. ইসলাম জানান, যারা মাস্ক পরবে না, তাদের ট্রেনে ঢুকতে দেয়া হবে না, হ্যান্ড স্যানিটাইজার রেল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকেই নিশ্চিত করা হবে এবং ট্রেনের ভেতরে আসন বিন্যাস এমন ভাবে করা হবে যাতে দুটো আসনের মাঝখানে একটি আসন ফাঁকা থাকে।

এর আগে মন্ত্রিপরিষদের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ৩১শে মে থেকে শর্তসাপেক্ষে সীমিত পরিসরে নির্দিষ্ট সংখ্যক যাত্রী নিয়ে স্বাস্থ্য সম্মত বিধি নিশ্চিত করে গণপরিবহন, যাত্রীবাহী নৌযান ও রেল চলাচল করতে পারবে। এছাড়া বিমান কর্তৃপক্ষ নিজ ব্যবস্থাপনায় বিমান চলাচলের বিষয়ে বিবেচনা করবে।

তবে সব ক্ষেত্রে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে দেয়া সব ধরনের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান জানান, পহেলা জুন থেকে অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান চলাচল শুরু হবে।

তবে প্রাথমিকভাবে সীমিত আকারে ফ্লাইট শুরু হবে। প্রথমে চারটি বিমানবন্দরে ফ্লাইট চালু করা হবে। এগুলো হচ্ছে, ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট এবং সৈয়দপুর।

মি. রহমান বলেন, এসব বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমোদিত থার্মাল স্ক্যানার এবং স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন বিধায় এগুলো চালু করা হচ্ছে।

তবে একটি এয়ারলাইন্স একটি বিমানের সর্বোচ্চ ৭০ ভাগ টিকেট বিক্রি করতে পারবে বলেও জানান তিনি। যাতে করে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হয়।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে রাখার কারণে আন্তর্জাতিক রুটে বিমান চলাচলের অনুমোদন না দেয়ার কারণে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট অন্তত ১৫ই জুন পর্যন্ত বন্ধ থাকবে বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে রিজেন্ট এয়ারওয়েজের চিফ অপারেটিং অফিসার আশিষ রায় চৌধুরী বলেন, ফ্লাইট চালুর বিষয়ে সিভিল এভিয়েশন অথরিটি বা বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের দেয়া নির্দেশনা মেনে চলা হবে।

“তবে তারা অনুমতি দিলেও শুরু করা হবে বিষয়টি এমন নয়। খেয়াল রাখতে হবে যে তারা প্রস্তুত কি না। এছাড়া আমাদেরও তো প্রস্তুতির ব্যাপার আছে।”

স্বাস্থ্য বিধি মানার বিষয়ে নিজেদের প্রস্তুতি সম্পর্কে মি. চৌধুরী বলেন, একটি ফ্লাইটের ৬০ ভাগ টিকেট বিক্রি করবেন তারা। বাকি ৪০ ভাগ টিকেট বিক্রি করা হবে না। যাতে এক আসন থেকে আরেক আসনের মধ্যে একটি আসন ফাঁকা থাকে। এছাড়া বিমানের মধ্যে কাউকে চলাচল করতে দেয়া হবে না। একজন উঠে বসে গেলে আরেক জনকে তোলা হবে। এক সাথে ৫-৬ জনকে বিমানে উঠতে দেয়া হবে না।

মাস্ক পরা না থাকলে কোন যাত্রীকে বিমানে তোলা হবে না বলেও জানান তিনি। তবে এভাবে আসন বিন্যাস করে টিকেট বিক্রি করা হলে সেক্ষেত্রে টিকেটের দাম বাড়বে যা গুনতে হবে জনগণকেই। মি. চৌধুরী বলেন, ব্যয় পুষিয়ে নেয়ার জন্য টিকেটের দামও বাড়বে।

“টিকেটের দাম তো অবশ্যই বাড়বে। লস দিয়ে তো আর কেউ চালাবে না। একটা ডাইরেক্ট অপারেটিং কস্ট তো আছে।”

তিনি বলেন, “আগে যদি সব খরচ ধরে টিকেটের দাম আড়াই হাজার হয়ে থাকে, এখন তো আর আড়াই হাজার হবে না। এখন বেশি হবে।” সীমিত আকারে পরিবহন চালানো নিয়ে ব্যয়ের বিষয়টির কথা বলেছেন বাস মালিকরাও। তারা বলছেন, যেভাবে সরকারি নির্দেশ দেয়া হয়েছে সেভাবে বাস চালানো সম্ভব হবে না।

এ বিষয়ে যাত্রীবাহী বাস কোম্পানিগুলোর প্রতিষ্ঠান অ্যাসোসিয়েশন অব বাস কোম্পানিজ-এবিসি-র প্রেসিডেন্ট খন্দকার রফিকুল হোসেন কাজল বলেন, সরকার যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা বলছে সেভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাস চালানো সম্ভব নয়।

তার মতে, মাস্ক বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়তো তাদের পক্ষে সম্ভব, কিন্তু সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়ে সন্দিহান তারা। হোসেন বলেন, সরকার বলছে যে, ২০ জনের বেশি যাত্রী তোলা যাবে না। এখন যদি ২০ জন নিয়ে বাস চালানো হয় তাহলে তেলের খরচ হয়তো উঠবে কিন্তু মুনাফা তো দূরের কথা শ্রমিকদের বেতন দেয়া সম্ভব হবে না।

“তাহলে আমি কীভাবে বাস চালাতে পারবো? “আমার মধ্যে তো শুধু দেশপ্রেম না, পেটের প্রেমও আছে, আমার শ্রমিক তো মজুরি ছাড়া ঘরে ফিরবে না, আমারও তো পরিবার আছে, সেই খরচ কীভাবে যোগাড় করবো,” বলেন মি. হোসেন। তিনি মনে করেন, সীমিত আকারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে যদি গণপরিবহন চালাতে হয় তাহলে অবশ্যই সরকারের সহযোগিতা দরকার। এক্ষেত্রে একদিকে তাদের প্রণোদনা দেয়ার বিষয়টি যেমন মাথায় রাখতে হবে অন্যদিকে স্থানীয় প্রশাসনেরও এবিষয়ে সহযোগিতা দরকার বলে মনে করছেন তারা।

“রাস্তায় মানুষ বাস থামিয়ে উঠে যায়, তাদের সামাল দিবো কীভাবে? ২০ জনের জায়গায় ২১ জন উঠলেই যদি পুলিশ মামলা ঠুকে দেয় তাহলে তো হবে না,” বলেন মি. হোসেন। যাত্রীবাহী লঞ্চ চালুর অনুমতি থাকলেও সেটা কীভাবে করা হবে সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্তে আসেনি লঞ্চ মালিক পক্ষ। এ বিষয়ে বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতির সহ-সভাপতি সাইদুর রহমান মিন্টু বলেন, বিআইডাব্লিউটিসির সাথে বৈঠকের পরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।