দুই দফতরের রশি টানাটানিতে এলাকাবাসীর দুর্ভোগ

সাতকানিয়া উপজেলার ডলু খালের উপর গাটিয়াডেঙ্গা সেতুটি নির্মাণ করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে ৩ বছর আগে কিন্তু সড়কের এ্যাপ্রোচ রোড নির্মিত না হওয়ায় সেতুটি এলাকাবাসীর কোন কাজে আসছে না।
১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি অকেজো হয়ে পড়েছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ বলছে অ্যাপ্রোচ রোডের কাজ করে এলজিইডি, আর এলজিইডি বলছে সেতু নির্মাণকারী সংস্থা হচ্ছে সওজ, এলজিইডি কেন সড়কের অ্যাপ্রোচ রোড করবে। আমাদের সাতকানিয়া প্রতিনিধি সচিত্র প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, দুই সরকারি দফতরের এ ধরণের রশি টানাটানির ফলে খালের উভয় তীরের ৫টি ইউনিয়নের প্রায় ৩০ হাজার অধিবাসী চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
সরকারি দফতরগুলির বাস্তবসম্মত ও নিখুঁত পরিকল্পনার অভাব এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলির সমন্বয়হীনতা যেমন সরকারি অর্থের অপচয় ঘটায় তেমনি এই ধরনের পরিস্থিতির ফলে জনগণের ভোগান্তি ও দুর্ভোগের অবসান হয় না। আলোচ্য প্রকল্পটি এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। আমাদের প্রতিনিধির পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেতুর উভয়দিকের ৫ ইউনিয়নের শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, চাকুরিজীবী ও সাধারণ লোকের দৈনন্দিন কাজ, উৎপাদিত কৃষি পণ্য ক্রয় বিক্রয়-এক কথায় এলাকার অর্থনীতি, ব্যবসাবাণিজ্য ও শিক্ষার এ সকল ক্ষেত্রে এলাকাবাসীর যাতায়াত ও সবধরণের যোগাযোগ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সেতুটি চালু না হওয়ায় সড়কটি এখন উপযোগিতা হারানোর দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে। অ্যাপ্রোচ রোড না হওয়ায় এলাকাবাসী সিঁড়ি দিয়ে অনেক ভোগান্তি সয়ে সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করছে। বর্ষাকালে মানুষের দুর্গতি চরমে ওঠে। অথচ সেতুটি চালু করা গেলে যানবাহন চলাচল সহজ হতো। এলাকার মানুষ কম সময়ে তাদের প্রয়োজনীয় কাজ সারতে পারতেন।
উপজেলা প্রশাসন আছে, আছেন স্থানীয় সাংসদ, উপজেলা পরিষদের সমন্বয় সভায় বিষয়টি কি ৩ বছরেও আলোচিত হয়নি? উপজেলা প্রশাসন কিংবা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা কি এলাকার এই সমস্যা-সংকট সম্পর্কে অবহিত নন? তা হলে এত বছর প্রকল্পটি এরকম ঝুলে থাকলো কীভাবে!
দেশের জনগণের অর্থে সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- চলে, সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা দেওয়া হয়, সেই জনগণকে দুর্ভোগ আর ভোগান্তিতে নিক্ষেপ করে সরকারি কর্মকর্তারা এক ধরণের আত্মপ্রসাদ অনুভব করেন। অথচ সংবিধানে বলা আছে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা জনগণের সেবক। দেশের সর্বত্রই উন্নয়ন কর্মকা-ে এধরনের সমন্বয়হীনতার অনেক নজির রয়েছে। প্রকল্প সমাপ্তিতে দীর্ঘসূত্রতা, জটিলতা যেমন প্রকল্প ব্যয় বাড়ায়, অন্যদিকে জনগণও যথাসময়ে প্রকল্পের উপযোগিতা থেকে বঞ্চিত হয়। আলোচ্য ক্ষেত্রে দেখা যায়, সেতু নির্মাণে খরচ হয়েছে ১৪ কোটি টাকা কিন্তু জনগণ কোন উপযোগিতা পাচ্ছে না। এক সময় হয়তো দেখা যাবে খালের তীব্র ¯্রােত আর বন্যায় সেতুটি ঝুঁকিতে পড়েছে যেমন অতীতে এখানে বেইলি ব্রিজ নির্মাণের পিলারগুলি পানির তোড়ে প্রায় ক্ষয়ে গেছে। তাছাড়া, এই প্রকল্প গ্রহণের সময় সেতু নির্মাণকারী কর্তৃপক্ষ অ্যাপ্রোচ রোড নির্মাণের বিষয়টিতে গুরুত্ব দেয়নি কেন? এখন দুই দফতর একে অন্যের ঘাড়ে দায় চাপাবার চেষ্টা করছে। আমরা চাই ২টি দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে সমস্যার সুরাহা করে অ্যাপ্রোচ রোড নির্মাণের কাজ শুরু করবে। বিষয়টি এতদিন এভাবে ঝুলে আছে কেন, তারও তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।