টাইগার মুরগী পুষে স্বাবলম্বী মাস্টার্স পড়ুয়া যদুনাথ ত্রিপুরা

খাগড়াছড়ি

নিজস্ব প্রতিবেদক, খাগড়াছড়ি »

লেখাপড়া শেষ করে সরকারি-বেসরকারি চাকরির খোঁজার পেছনেই তরুণরা বেশিরভাগ সময় ব্যয় করে থাকেন। কিন্তু এই স্বাভাবিক পথে হাঁটেন না অনেকেই। তেমনিই এক ব্যতিক্রমী শিক্ষার্থী খাগড়াছড়ি সদরের মাস্টার্স শিক্ষার্থী যদুনাথ ত্রিপুরা। ‘করোনা’ কালের অবসর সময়কে বেছে নিয়েছেন অর্থনৈতিক বুনিয়াদ গড়ার উপযুক্ত সময় হিসেবেই। আগে থেকে মৌসুমী ফলমূল-শাকসবজি বেচাকেনার অভ্যাস থাকলেও মুরগী খামারী হবেন, সেটি কোনদিন ভাবেননি। কিন্তু মহামারীর ধাক্কা তাঁকে দেখিয়েছে সেই পথটিই। বর্তমানে নিজের সেই খামার থেকে যদুনাথ ছাড়াও কর্মসংস্থানের আয়ের অর্থে চলছে কয়েক কর্মীর সংসার। খাগড়াছড়ি জেলা সদরের ভাইবোনছড়া ইউনিয়নের বড়পাড়া এলাকার বাসিন্দা যদুনাথ ত্রিপুরা (২৮) পড়ালেখা করেন রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজের মাস্টার্স প্রথম বর্ষে। পড়াশোনার পাশাপাশি মৌসুম ভিত্তিক বিভিন্ন প্রকারের শাক-সবজি, ফলমূল অনলাইনে-অফলাইনে বিক্রি করেন।
এছাড়াও রয়েছে জেলা শহরের খাগড়াপুরে পরিচালনা করেন, ‘হুকুমু কম্পিউটার সিস্টেম’ নামে একটি কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার ও স্টেশনারি দোকান। সেখানে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ছাড়াও ফটোকপি, প্রিন্ট, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিসহ বিভিন্ন আবেদন ফরম পূরণ করা হয়। এসব করতে করতেই পাহাড়ি কৃষি গবেষণা এলাকায় কিনে নিয়েছেন নিজস্ব বসতভিটাও।
করোনাকালীন সময়ে বসে না থেকে ইউরোপিয়ান জাতের কয়েকটি টাইগার মুরগীর বাচ্চা দিয়ে মুরগি পালন শুরু করেছিলেন তিনি। এরপর শখ থেকে ধীরে ধীরে ব্যবসায় পরিণত হয়েছে তার এই উদ্যোগ। বর্তমানে তার খামারে ১৬০টি বিদেশী মুরগী রয়েছে। সব মিলিয়ে যার বাজারমূল্য এক লক্ষ টাকার বেশি হবে। এক জোড়া মুরগীর বর্তমান বাজারমূল্য সাতশ থেকে শুরু করে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করতে পারবে বলে জানিয়েছেন যদুনাথ ত্রিপুরা। যদুনাথ ত্রিপুরা জানান, তিনি মূলত ইউটিউব দেখে শখ করে মুরগি পালনে পরিকল্পনা করে। কয়েকটি খামারে মুরগি খামার সরেজমিন দেখে আরো উৎসাহ বাড়ে। তিনি আরও জানান, বাড়ির এক পাশে এই মুরগীর খামার করতে যদুনাথের খরচ হয়েছিলো ৫ হাজার টাকার মতো। বর্তমানে ১৬০টি মুরগিকে দৈনিক ১২ কেজি করে প্রতি মাসে ৪বস্তা খাদ্য দিতে হয়। প্রতি বস্তা খাদ্যের দাম ৪ হাজার টাকা। এ জাতের মুরগি পালনে প্রথম অবস্থায় একটু কষ্ট হলেও সপ্তাহ খানেক পর আর কষ্ট করতে হয়না।
১৬০টি মুরগির মধ্যে এখন পর্যন্ত একটারও কোন রোগ-বালাই হয়নি। সাত দিন পর রাণীক্ষেত রোগের টিকা, ১৪দিন পর ফক্ রোগের টিকা, ২১দিনের পর আরো একটা টিকা দিতে হয়। বর্তমানে দেড় থেকে দুই কেজি পর্যন্ত হয়েছে। তিন মাস পর্যন্ত পালন করলে কেজি প্রতি ৩৫০ টাকা বিক্রি করতে পারবে। ওষুধ খরচ, বিদ্যুৎ বিল ও আনুষঙ্গিক খরচ বাদ দিয়ে ১৬০টি মুরগি বিক্রি করে ৪০-৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভের মুখ দেখেছেন তিনি। পরবর্তীতে কোন প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা পেলে খামার বড় করার পরিকল্পনা আছে। এজন্য তিনি যুব উন্নয়ন ও প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরসহ খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সহযোগিতা কামনা করেন। খাগড়াছড়ি সাংবাদিক ইউনিয়নের সা: সম্পাদক সৈকত দেওয়ান জানান, এ ধরনের স্বতন্ত্র এবং ক্ষুদ্র উদ্যোগগুলোকে সরকারি-বেসরকারি প্রণোদনা দেয়া হলে কর্মসংস্থান-আর্থিক স্বাবলম্বীতার পাশপাশি সমাজে ইতিবাচক মূল্যবোধ সৃষ্টি হবে। খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিত রায় দাশ জানান, এমন উদ্ভাবনী ও উদ্যোমী চিন্তার তরুণদেরকে উদ্যোক্তা ঋণ পেতে আমরা সহযোগিতার হাত বাড়াবো।
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু জানান, চলতি অর্থ বছরেই জেলার ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার জন্য আলাদা আলাদা উন্নয়নমূলক প্রকল্পের মাধ্যমে সহায়তা দেয়া হবে।