ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার

বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার শুলকবহর প্রান্ত

ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের দাবি এলাবাসীর

মোহাম্মদ কাইয়ুম :
দুই পা সামনে এগিয়ে আবারও পিছু হটলো পপি আকতার। এ রকম কয়েকবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হতে হলো দ্রুতগতিতে গাড়ি চলে আসায়। লক্ষ্য একটাই ৬ বছরের শিশু আব্দুল্লাহ নিয়ে রাস্তা পার হওয়া। শেষমেষ কয়েকবার চেষ্টায় সফল হলো রাস্তা পার হতে।
গতকাল সোমবার সকাল ১০টার দিকে নগরীর বহদ্দারহাট এমএ মান্নান ফ্লাইওভার ও শাহ আমানত সেতু সংযোগ সড়কের শুলকবহর অংশে রাস্তা পারাপারের এমন দৃশ্য চোখে পড়ে।
ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপারের বিষয়টি জানতে চাইলে পপি আকতার বলেন, নিরুপায় হয়ে বাচ্চাকে নিয়ে রাস্তা পার হতে হলো। একদিকে ফ্লাইওভার থেকে দ্রুতগতিতে গাড়ি নামে আবার রাস্তায় কোন স্পিড ব্রেকার না থাকায় এখানে দ্রুতগতিতে গাড়ি চলাচল করে। ফুটওভার ব্রিজ দরকার হলেও এ জায়গায় কোন স্পিড ব্রেকার কিংবা জেব্রা ক্রসিংও না থাকায় প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার করতে হয়।
সকাল ৯ থেকে ১১ পর্যন্ত সরেজমিন পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, বহদ্দারহাট এম এ মান্নান ফ্লাইওভারের ষোলকবহরের শুরুর অংশে স্পিড ব্রেকার, জেব্রা ক্রসিং কিংবা রাস্তা পারাপারের কোন ধরনের ব্যবস্থা না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার করছে পথচারীরা। একদিকে বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের গাড়ি ওঠা-নামা করছে এরসাথেই ফ্লাইওভারের দু’পাশ দিয়ে শাহ আমানত সেতু সংযোগ সড়কেরও গাড়ি চলাচল করছে। এছাড়া এ জায়গায় সড়ক বিভাজক খোলা রাখায় পথচারীরা এক প্রকার বাধ্য হচ্ছে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার করতে। ফ্লাইওভারের গাড়ি উঠা-নামা ও সংযোগ সড়কে দ্রুতগতিতে গাড়ি চলাচল করায় এ জায়গায় রাস্তা পারাপার করতে পথচারীদের বেগ পেতে হয়।
রাস্তা পারাপারে অনেকে দুর্ঘটনার স্বীকার হয়েছে জানিয়ে রাস্তার পাশের মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন নামে এক দোকানদার বলেন, এখানে একদিকে ফ্লাইওভারে গাড়ি উঠা-নামা করে এর পাশাপাশি ফ্লাইওভারের দু’দিকে গাড়িও চলাচল করে। স্পিড ব্রেকার না থাকায় গাড়ি দ্রুতগতিতে চলাচল করায় প্রতিদিন ছোট-খাটো অনেক দুর্ঘটনা ঘটে। ফ্লাইওভার চালু হওয়ার পরে এখানে এ পর্যন্ত ২ জন মারা গেছেন। দ্রুতগতিতে গাড়ি চলাচলের মধ্যে রাস্তা পারাপারে যেকোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ জায়গায় ফুটওভার ব্রিজ না হওয়া পর্যন্ত পথচারীরা সহজে রাস্তা পারাপার করতে পারবে না।
ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপারের বিষয়ে এশিয়ান হাউজিং সোসাইটি পরিচালনা কমিটির সভাপতি সামছুল আলম বলেন, এ জায়গায় ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা ছাড়া অন্য কোন বিকল্প দেখছি না। পথচারীরা যাতে নির্বিঘ্নে রাস্তা পারাপার করতে পারে সে জন্য অতি দ্রুত ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানায়। যতদিন রাস্তা ফুটওভার ব্রিজ হচ্ছে না ততদিন এ জায়গায় দুর্ঘটনা কমাতে স্পিড ব্রেকার তৈরি করা হোক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, বহদ্দারহাট এম এ মান্নান ফ্লাইওভারটি সিডিএর তত্ত্বাবধায়নে নির্মিত হয়। নির্মাণের পর তারা ফ্লাইওভারটি চসিককে হস্তানান্তর করে। ফ্লাইওভারের উঠা-নামার এ জায়গায় পথচারীদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে রাস্তা পারাপারের জন্য সড়ক বিভাজক খোলা রাখা উচিত হয়নি। এ জায়গাটি ফ্লাইওভারে আগে হওয়ায় স্পিড ব্রেকার বা জেব্রা ক্রসিং দেওয়াও যাবে না। এ জায়গায় ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ ছাড়া অন্য কোন বিকল্প দেখছি না। যদিও পথচারীদের রাস্তা পারাপারের কথা বিবেচনা করে সিডিএ এ জায়গায় সড়ক বিভাজক খোলা রেখেছে। তবে ফুটওভার ব্রিজ না হওয়া পর্যন্ত রাস্তা পারাপারে পথচারীদের গাড়ি দেখেই সাবধানে রাস্তা পারাপার করতে হবে।
ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ ছাড়া অন্য কোন বিকল্প নেই জানিয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ ট্রাফিক উত্তরের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, এ রকম ব্যস্ততম জায়গায় রাস্তা পারাপারের জন্য সড়ক বিভাজক খোলা রাখা উচিত ছিলনা। এছাড়া ফ্লাইওভারের কাছাকাছি হওয়ায় এখানে স্পিড ব্রেকার কিংবা জ্রেবা ক্রসিং থাকলেও দ্রুতগতিতে গাড়ি নামার সময় দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে। পথচারীদের নিরাপদ পারাপারের কথা বিবেচনা করে এ জায়গায় ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা উচিত। যখন রাস্তা পারাপারের জন্য সড়ক বিভাজক খোলা রাখা হয়েছে তখন পথচারীদের বাধ্য হয়ে রাস্তা পারাপার করতে হবে। সেক্ষেত্রে পথচারীদের দেখে-শুনে রাস্তা পারাপারের পরামর্শ রইল।