জোড়াতালির কালুরঘাট সেতু কতটা কাজে আসবে

চলতি বছর ঢাকা-কক্সবাজার রুটে রেল চলাচলের লক্ষ্যে চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতু মেরামত করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। পরামর্শক সংস্থা হিসেবে নিয়োজিত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিশেষজ্ঞ দল চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিলে মার্চ মাসে দরপত্র আহ্বানের পরিকল্পনা করছে সংস্থাটি। বিষয়টি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক।
১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বার্মা ফ্রন্টের সৈন্য পরিচালনা করার জন্য কর্ণফুলী নদীতে সেতু নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। ১৯৩০ সালে ব্রুনিক অ্যান্ড কোম্পানি ব্রিজ বিল্ডার্স নামক একটি সেতু নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী নদীতে প্রথম সেতুটি নির্মাণ করে। মূলত ট্রেন চলাচলের জন্য ৭০০ গজ লম্বা সেতুটি ১৯৩০ সালের ৪ জুন উদ্বোধন করা হয়। পরে ১৯৫৮ সালে সব ধরনের যানবাহন চলাচলের যোগ্য করে সেতুটির বর্তমান রূপ দেওয়া হয়।
১৯৩০ সালে নির্মিত এই সেতুটি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় ২০০১ সালে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে রেলওয়ে। বোয়ালখালী থেকে চট্টগ্রাম নগরে আসার প্রধান মাধ্যম হচ্ছে কালুরঘাট সেতু। প্রতিদিন প্রায় এক লাখ লোক ঝুঁকি ও ভোগান্তি নিয়ে এই সেতু দিয়ে চলাচল করেন।
কক্সবাজার প্রকল্পকে কেন্দ্র করে আলোচনায় আসে সেতু মেরামতের বিষয়টি। এর আগে প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনেই কালুরঘাট সেতু নিয়ে প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতির খই ফোটে। চট্টগ্রামবাসীর আক্ষেপ সেতুর আশ্বাস দিয়ে অনেকেই মন্ত্রী-এমপি হয়েছেন ঠিকই, কিন্তু সেতু তো হয়নি।
নতুন সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে সরকার আগেই। বার বার নকশা হয় কিন্তু বাস্তবায়ন হয় না। ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতুর নকশা তৃতীয় দফায় পরিবর্তন করা হয়েছে। দ্বিতীয় নকশা অনুযায়ী, কালুরঘাট সেতুর ওপরতলা দিয়ে গাড়ি চলার কথা ছিল। নিচতলা দিয়ে চলার কথা ছিল ট্রেন। কিন্তু এখন পরিবর্তিত নকশা অনুযায়ী, সড়ক ও রেলের জন্য চার লেনের সেতু হবে। দুই লেনে চলবে গাড়ি। বাকি দুই লেনে ট্রেন।
প্রথম নকশায় সেতুর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ১ হাজার ১৫১ কোটি টাকা। দ্বিতীয় নকশায় ৬ হাজার ৩৪১ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়। তৃতীয় নকশায় খরচ হতে পারে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ পরিবর্তিত নকশায় সেতুটির নির্মাণ ব্যয় বাড়বে অন্তত ৭০০ কোটি টাকা। প্রথম নকশার তুলনায় এখনকার ব্যয় ছয় গুণ বেশি।
ধারণা করা হচ্ছে নতুন সেতু বাস্তবায়নে অন্তত সাত বছর সময় লাগবে। তাই কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচলের জন্য বুয়েটের বিশেষজ্ঞ পরামর্শক নিয়োগ দিয়ে সেতু মেরামতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জোড়াতালির কালুরঘাট সেতু কতটা কাজে আসবে সেটাই এখন দেখার বিষয়।