চিরচেনা রূপে নগর, বেড়েছে গাড়ির চাপ

নিজস্ব প্রতিবেদক »
লকডাউন শেষে নগর ফিরতে ও ছাড়তে পরিবহনে মানুষের ঢল নেমেছে। প্রথমদিনে যানজটেপূর্ণ ছিল নগর। কমেছে নিম্ন আয়ের মানুষের ভোগান্তি।
গতকাল বুধবার সকাল থেকে নগরের রেল স্টেশন, বাস স্টেশন, নৌ-ঘাটসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
জানা গেছে, লকডাউন না থাকায় অন্যরকম এক সকাল হয়েছে নগরে। নগরীর রাস্তায় বেড়েছে কোলাহল। বিশাল এক বিরতির পরে আবারো যেন জেগে উঠেছে নগর। শত শত মানুষ বেরিয়েছে কর্মের তাগিদে। কেউ যাচ্ছে কর্মস্থলে। আবার কেউ ফিরছে নগরে।
চট্টগ্রাম রেল স্টেশনে দেখা গেছে, সময়মত সকল ট্রেন ছেড়ে গিয়েছে যার যার গন্তব্যে। হাজারো মানুষের ভিড় লেগেছে। নগরমুখী মানুষ ফিরতে দেখা যায়। মূলত কর্মস্থলের মায়ায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ফিরছেন তারা। বেশিরভাগ মানুষ কোরবানি ঈদে বাড়ি গিয়ে লকডাউনের কারণে ফিরতে পারেনি। বহুদিন পরে পরিবার পরিজন নিয়ে আবারও নগরে ফিরতে শুরু করেছেন তারা। নুজহাত সাবরিন বলেন, ‘বহুদিন পরে বাড়ি থেকে নগরে ফিরছি। লকডাউন না থাকায় স্বস্তিতে ফিরতে পেরেছি।’
অন্যদিকে বাস স্টেশনগুলোতে দেখা যায় মানুষের উপচে পড়া ভিড়। উত্তর ও দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। লকডাউনের কারণে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও এখন তা খুলে দেওয়া হয়েছে। করোনা মহামারিতে বেকার হয়ে পড়েছে হাজারো মানুষ। অনেকে চাকরিচ্যুত হয়েছেন। এসব মানুষ আবারো চট্টগ্রাম নগরে আসছেন হারানো চাকরি ফিরে পাওয়ার আশায়। কেউ কেউ ফিরছে নতুন চাকরির আশায়। এমনটাই বলছেন নগর ফেরা মানুষ। ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া থেকে ফিরে সিটি গেট এলাকায় কামরুজ্জামান বলেন, ‘নগরের এক রেস্টুরেন্টে ওয়েটার হিসেবে কাজ করতাম। কিন্তু করোনায় সব বন্ধ থাকায় বেতন দিতে না পারায় মালিক যেতে মানা করেছেন। আবারও চট্টগ্রামে আসলাম। পুরনো কর্মস্থল থেকে ডাক এসেছে। তাই ফিরলাম।’
এদিকে গণপরিবহনে স্বস্তি মিলেছে নগরবাসীর। সড়কে গণপরিবহন চালু করায় সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তারা। কারণ অসহনীয় যন্ত্রণার মধ্যদিয়ে চলাচল করতে হয়েছে নগরবাসীর। পরিবহন ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের যাতায়াতে ভোগান্তি সৃষ্টি হয়েছে। নানা বাধা বিপত্তি জয় করে যেতে হতো কর্মস্থলে। গুনতে হতো দ্বিগুণের চেয়ে বেশি ভাড়া। কিন্তু গতকাল পরিবহনে স্বাভাবিক নিয়মে ভাড়া নিতে দেখা যায়।
এতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে মনসুর আল হাসান বলেন, ‘গণপরিবহন চালু করার কারণে নিম্ন আয়ের মানুষ স্বস্তি বোধ করছেন। এতদিন পরিবহন ব্যবস্থা না থাকায় যে পরিমাণ ভাড়া দিতে হয়েছে। তবে সরকার ভবিষ্যতে আবারও লকডাউন দিলে গণপরিবহন চালু রাখার দাবি জানাচ্ছি।’
মার্কেট-শপিংমল, রেস্টুরেন্টসহ সকল ধরনের প্রতিষ্ঠান খোলায় নগর জীবনে নেমেছে স্বস্তি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, লকডাউনের কারণে ব্যবসায়ীদের যা জমানো অর্থ ছিল সবই খোয়া গেছে। তবে আবারো নতুন করে ব্যবসায় নামতে সরকারি সহায়তা প্রয়োজন। সরকারি হস্তক্ষেপে বাঁচতে পারে হাজারো ব্যবসায়ীর প্রতিষ্ঠান।
এদিকে দুপুর থেকে দেখা যায় নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো সেই পুরনো রূপ ধারণ করেছে। বহুদিন পরে নগরে আবারো দেখা গেল যানজট। গণপরিবহন প্রাইভেট পরিবহনসহ সকল গাড়ি সড়কে নামার কারণে সৃষ্টি হয়েছে যানজট। তবে অর্ধাংশ গাড়ি সড়কে নামার অনুমতি থাকলেও নামতে পারেনি বলে দাবি করেছেন পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি বেলায়েত হোসেন বেলার। তিনি বলেন, ‘বেশিরভাগ পরিবহন স্টাফ পেশা পরিবর্তন করেছে। আবার লকডাউনে গাড়ি বন্ধ থাকায় বেশিরভাগ গাড়ি বিকল হয়ে পড়েছে। যার কারণে সরকার অর্ধেক গাড়ি চলার অনুমতি দিলেও সড়কে ওই পরিমাণ গাড়ি নামতে পারেনি। তবে পঞ্চাশ শতাংশ গাড়ি সড়কে নামাতে আরো এক সপ্তাহ সময় লেগে যাবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘হিসেব অনুযায়ী নগরে ৩ হাজার ৫শ’ মত বাস, হিউম্যান হলার ও টেম্পু রয়েছে। কিন্তু লকডাউনের কারণে বেশিরভাগ পরিবহন নষ্ট পড়ে আছে। পরিবহন মালিকদেরও যথেষ্ট অর্থ জমা না থাকায় নষ্ট হয়ে যাওয়া গাড়ি রিপেয়ার করে সড়কে নামাতে সময় প্রয়োজন।’