চিকিৎসাসামগ্রী কেনার হিড়িক

অবৈধভাবে ওষুধ মজুদ ও অতিরিক্ত দামে ওষুধ বিক্রি করা ফার্মেসির বিরুদ্ধে শুক্রবার অভিযান চালিয়েছে র‌্যাব

দেশে ওষুধের কোনো সংকট নেই : ওষুধ প্রশাসন #
অহেতুক ওষুধ কিনে দাম না বাড়ানোর অনুরোধ ক্যাবের #

রুমন ভট্টাচার্য :
করোনা আতঙ্কে চিকিৎসাসামগ্রী কেনার হিড়িক পড়েছে। প্রয়োজনে ও অপ্রয়োজনে যে যার মত ওষুধ সামগ্রী কিনে মজুদ করছে করোনার ছোবল থেকে বাঁচতে। জ্বর, সর্দি, কাশির ওষুধসহ ভিটামিন কিনে মজুদ করেছেন অনেকে। কেউবা মাস্ক, হ্যান্ডস্যানিটাইজার, জীবাণুনাশক আবার কেউবা বাসায় বয়স্কদের কথা চিন্তা করে অক্সিমিটার ও অক্সিজেনসহ অন্যান্য চিকিৎসাসামগ্রী আগেভাগেই স্টকে নিয়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা শুরুতে দেখা গিয়েছিল ভোগপণ্য মজুদের হিড়িক। এরপর মাস্ক ও হ্যান্ডস্যানিটাইজারের। এখন ওষুধসহ অন্যান্য চিকিৎসামগ্রী মজুদের হিড়িক পড়েছে।
এদিকে মানুষের চাহিদাকে পুঁজি করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে কিছু অসাধু চক্র, যারা চিকিৎসাসামগ্রীর বাজারে সংকট তৈরি করে প্রায় সবকিছুর দাম কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. রজত শংকর রায় বিশ্বাস বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর থেকে মানুষের মধ্যে নিজের মত করে ওষুধ কেনার প্রবণতা হঠাৎ বেড়েছে। ফার্মেসিতে গিয়ে যে যার মত ওষুধ কিনছে। প্রেসক্রিপশন ও পরামর্শ ছাড়া ওষুধ বিক্রি পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে। এটা নিশ্চিত করা গেলে ওষুধের দাম ও সংকট দুটোই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।’
ফার্মেসি মালিকদের দেওয়া তথ্যমতে, গত দু’এক সপ্তাহ ধরে স্কাভো-৬, ইভেরা-১২, প্যারাসিটামল, অ্যাজিথ্রোমাইজিন, অ্যান্টিহিস্টাসিন, অ্যান্টিম্যালেরিয়াল ও ভিটামিন সি ট্যাবলেট জাতীয় ওষুধের বিক্রি কয়েকগুণ বেড়েছে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় সংকট তৈরি হয়েছে। আর এই সংকটের কারণে বেড়েছে দাম। তবে অপ্রয়োজনে ওষুধ কেনার প্রতিযোগিতা দাম বাড়ানোর কারণ বলে মনে করেন তারা।
কে বি ফজলুল কাদের রোডের একটি ফার্মেসির মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘হাজারিগলি থেকে পাইকারি হিসেবে ওষুধ কিনে আনি। শনিবার সকালে গেলাম কিছু ওষুধ কিনতে। সব ওষুধের বাড়তি দাম চাওয়া হচ্ছে। স্যাভলন ১ লিটারের দাম চাইল ৪৫০ টাকা। না নিয়ে চলে আসলাম। যদি পাইকারি থেকে বাড়তি দামে কিনতে হয় তাহলে খুচরাতে বাড়তি দামে বিক্রি করতে হবে।’
বাংলাদেশ কেমিস্ট ড্রাগিস্ট সমিতির চট্টগ্রাম জেলা সমিতির সাধারণ সম্পাদক লায়ন আশীষ ভট্টাচার্য বলেন, ‘মার্কেটে সব ওষুধ কোম্পানির সরবরাহকৃত ওষুধ পর্যাপ্ত নেই। বিশেষ করে ঠা-াজনিত রোগের ওষুধের প্রচুর সংকট রয়েছে। আমি নিজেই কয়েকটি কোম্পানির ম্যানেজারের সাথে কথা বলেছি এবং পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহের অনুরোধ করেছি।’
কালুরঘাট এলাকার অক্সিজেন সিলিন্ডার বিক্রেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মে মাসের মাঝামাঝি সময়ের পরে অক্সিজেন সিলিন্ডারের চাহিদা বেড়েছে। বর্তমানে সেই চাহিদা কয়েকগুণ বেড়েছে। চাহিদা বাড়ায় দামও কিছুটা বেড়েছে। যাদের বাসায় বয়স্ক মানুষ আছেন তারা অগ্রিম এসে নিয়ে যাচ্ছেন। অনেকে অগ্রিম অর্ডার দিয়ে রাখছেন। মজুদের কারণে দাম বাড়ছে বলে মনে করেন তিনিও।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ক্যাব এর চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘যাদের প্রয়োজন নেই তারা ওষুধ স্টক করে রাখছেন। স্টকে রাখার কারণে বাজারে সংকটের সৃষ্টি হচ্ছে। এ সুযোগ অসাধু ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর একটা কৌশল পেয়ে গেছে। এ বিষয়টা সকলের চিন্তা করা উচিত। কারণ যাদের অগ্রিম কেনার সামর্থ্য নাই তাদের কী হবে? স্টক করার দরকার আছে বলে মনে হয় না। এখানে ওষুধ প্রশাসনেরও কিছুটা গাফিলতিও আছে। তারা ওষুধের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে এখনো শক্ত অবস্থানে যেতে পারেনি। ফলে সাধারণ মানুষ সিন্ডিকেটের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে।’
জানতে চাইলে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর চট্টগ্রাম এর সহকারী পরিচালক হোসাইন মোহাম্মদ ইমরান চিকিৎসাসামগ্রী কেনার হিড়িকের কথা স্বীকার করে সুপ্রভাতকে বলেন, ‘আমার আত্মীয়-স্বজনের মধ্যেও অনেকে স্কাভো-৬ কিনে স্টক করে রেখেছে বাসায়। মানুষ প্রয়োজনের চেয়ে অপ্রয়োজনে বেশি কিনছে। ফলে যাদের প্রয়োজন তারা পাচ্ছে না। বাজারে থাকলে প্রয়োজনের সময় সবাই পাবে। অহেতুক মানুষ কিনে স্টক করছে। দেশে এখন ওষুধের কোনো সংকট নেই। ১০০টির বেশি কোম্পানি জ্বর, সর্দি, কাশির ওষুধসহ এন্টিবায়োটিক উৎপাদন করছে। মানুষ কেন এমন করছে বুঝছি না।’ এ বিষয়ে সকলের সচেতন হওয়া জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
ক্যাবের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে হোসাইন মোহাম্মদ ইমরান বলেন, ‘গত পুরো সপ্তাহ আমরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছি। মানুষ ওষুধের দাম বেশি নিচ্ছে বলে কিন্তু কেউ প্রমাণ ও সাক্ষী দিতে আসে না। ফলে সাক্ষী ছাড়া আমরা কাউকে ধরতে পারি না। ওষুধ কেনার সময় অবশ্যই রশিদ নিতে হবে এবং দাম বেশি নিলে সেটি আমাদের জানাতে হবে।’