চট্টগ্রামে কমছে আক্রান্তের হার!

৩০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে নেমে এসেছে: সিভিল সার্জন#
শঙ্কা কোরবানির ঈদ নিয়ে: স্বাস্থ্য অধিদপ্তর#
রোগী ভর্তি হতে না পারার হাহাকার আর নেই#

ভূঁইয়া নজরুল :
চট্টগ্রামে কমছে করোনা আক্রান্তের হার। জুনের প্রথম সপ্তাহে যেখানে গড়ে ৩০ শতাংশের বেশি আক্রান্ত হতো, এখন তা ২০ শতাংশে নেমে এসেছে। তবে এখনই স্বস্তি নয়, চোখ রাঙাচ্ছে কোরবানির ঈদ উপলক্ষে সংক্রমণের বিস্তারের আশংকা।
করোনা আক্রান্তের উপাত্ত পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত বাড়তে থাকে ২৭মে থেকে। সেদিন ৫৭৮ নমুনার মধ্যে ২১৫ জন করোনা পজিটিভ হয়েছিলেন, শতকরা হিসেবে পজিটিভের হার ৩৭ দশমিক ১৯ শতাংশ। পরের দিন ৪৫৭ জনের নমুনায় ২২৯ জন পজিটিভ হয়, শতকরা হিসেবে ৫০ দশমিক ১০ শতাংশ, এখন পর্যন্ত একদিনের শতকরা হিসেবে যা সর্বোচ্চ। পরবর্তীতে ২৯মে ৪০ দশমিক ৮৭ শতাংশ, ৩০ মে ২৯ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ, ৩১ মে ৩০ দশমিক ৯৪ শতাংশ, ১ জুন ৩৩ দশমিক ৪৯ শতাংশ, ২ জুন ৩৩ দশমিক ১৭ শতাংশ এবং ৩ জুন ২৬ দশমিক ৪১ শতাংশ করোনা পজিটিভ হয়েছিল। কিন্তু গত এক সপ্তাহে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র, অর্থাৎ ক্রমান্বয়ে করোনা আক্রান্তের হার কমছে। গত ২৬ জুন ৮৯০ নমুনায় ১৫৯ করোনা পজিটিভ হয়, শতকরা হিসেবে যা ১৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ, ২৭ জুন আক্রান্তের হার ছিল ১০ দশমিক ৮৪ শতাংশ, ২৮ জুন ৩৪ দশমিক ৭০, ২৯ জুন ২৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ, ৩০ জুন ২৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ, ১ জুলাই ১৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ, ২ জুলাই ২১ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং ৩ জুলাই ২১ দশমিক ২৭ শতাংশ শনাক্ত হয়।
করোনা পরীক্ষায় চট্টগ্রামে প্রথম থেকেই কাজ করছেন ফৌজদারহাট বিআইটিআইডির ল্যাব প্রধান ডা. শাকিল আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আগের তুলনায় পজিটিভ হওয়ার হার অনেক কমে এসেছে। শুধু আমাদের ল্যাবে নয়, চট্টগ্রামের সবগুলো ল্যাবেই একই চিত্র। আর এই কমে আসা আমাদের জন্য ভালো খবর। আগামীতে কোরবানির ঈদে সংক্রমণ মোকাবেলা করতে পারলে করোনা পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে সহায়ক হবে।’
কমে যাওয়ার এই হারে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বী। তিনি বলেন, ‘কিছুদিন ধরে করোনা পরীক্ষায় পজিটিভের হার কমে আসার বিষয়টি অবশ্যই ভালো খবর। তবে এখনই শঙ্কামুক্ত হওয়া যাবে না।’
মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে পুরো জুন মাসে করোনার আক্রান্ত বেশি থাকার পর এখন কমে আসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘করোনা আক্রান্তের হার বেড়ে যাওয়ায় সমাজের সর্বস্তরের মানুষের এগিয়ে আসা এবং তা মোকাবেলায় সকলের অংশগ্রহণ ছিল প্রশংসাযোগ্য। মানুষ সতর্ক হয়েছে, হয়তো সেকারণে কমে আসে সংক্রমণ।
একই মন্তব্য করেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনও। তিনি বলেন, ‘করোনা মোকাবেলায় সবাই একসাথে কাজ করেছে এবং এর সুফল পাওয়া যাচ্ছে। লাল ও হলুদ জোন ঘোষণা করায় এবং উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডকে লকডাউনের মাধ্যমেও করোনা আক্রান্তের হার কমিয়ে আনা হয়েছে।’
রোগী ভর্তি হতে না পারার হাহাকার নেই
কিছুদিন ধরে রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হতে পারছে না কিংবা অক্সিজেন পাচ্ছে না, এমন হাহাকার নেই বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বী। তিনি বলেন, ‘আমাদের সরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনার বেড খালি রয়েছে। একইসাথে হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেনের ফ্লো এর যে ঘাটতি ছিল তা মেটানো হয়েছে। বর্তমানে জেনারেল হাসপাতালে ৪টি, চট্টগ্রাম মেডিক্যালে ১০টি এবং প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে ৩৪টি হাইফ্লো নজল কেনোলা রয়েছে। এতে অক্সিজেন সরবরাহ সহজতর হয়েছে। একইসাথে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর বিরুদ্ধে সার্ভিল্যান্স টিম কাজ করছে, এর সুফলও মিলছে।’
এবিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘রোগীদের সুবিধার্থে নগরীতে অনেকগুলো আইসোলেশন সেন্টার গড়ে উঠেছে। সেগুলোর অনেক শয্যা খালি রয়েছে। অর্থাৎ মানুষকে সেবা দেয়ার জন্য আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য মানুষ এসব সেন্টারে আসবে এবং মুমুর্ষ হলে হাসপাতালে পাঠানো হবে।’
বর্তমানের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি ভালো উল্লেখ করে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘জেনারেল হাসপাতালে এখন প্রতিদিন দুই থেকে তিনটি করে আইসিইউ বেড খালি থাকছে, এটা ভাবা যায়? একইসাথে সাধারণ বেডও এক তৃতীয়াংশ খালি রয়েছে।’
এখনই স্বস্তি নয়, আছে শঙ্কাও
করোনা আক্রান্তের হার কমে আসায় যেখানে স্বস্তি ফেরার কথা কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে সেই স্বস্তি নেই। তাদের শঙ্কা আবারো বাড়তে পারে করোনা আক্রান্তের হার। শঙ্কামুক্ত না হওয়ার কারণ প্রসঙ্গে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বী বলেন, ‘সামনে কোরবানির ঈদ। ঈদে পশুবাজার এবং গ্রামমুখী মানুষের যে স্রোত দেখা দেয় এর কারণে আবারো হয়তো বেড়ে যেতে পারে করোনার সংক্রমণ।’
করোনায় পশুর বাজার প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘গরুর বাজার ও ঈদের কারণে দেশজুড়ে করোনার সংক্রমণ বাড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা যে শঙ্কা করছেন তা নিয়ে আমরা সতর্ক আছি। গরুর বাজারগুলোকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কীভাবে বেচাকেনা করা যায় সেজন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলের পরামর্শে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
এখনই স্বস্তি প্রকাশ করছেন না চট্টগ্রামের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির। তিনি বলেন, যদিও সংক্রমণ কমছে, তারপরও এখনো স্বস্তি হওয়ার সময় আসেনি। ভয় রয়ে গেছে। আসছে কোরবানির ঈদ।’
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামে গত জুন মাসে সর্বাধিক করোনা সংক্রমণ হয়। গত ৩ এপ্রিল প্রথম করোনা শনাক্ত হওয়ার পর ৩১ মে পর্যন্ত দুই মাসে চট্টগ্রামে আক্রান্ত হয় ২ হাজার ৯৮৫ জন। আর জুন মাসেই আক্রান্ত হয় ৫ হাজার ৮৬৭ জন। চট্টগ্রামে বর্তমানে সাতটি ল্যাবে করোনা পরীক্ষা হয়ে থাকে। এগুলো হলো- ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ, ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল, শেভরন ও কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজ ল্যাব।