ঘূর্ণিঝড় আম্পান মোকাবেলায় সরকার প্রস্তুত রয়েছে : প্রধানমন্ত্রী

সুপ্রভাত ডেস্ক :

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন তাঁর সরকার ঘূর্ণিঝড় আম্পান মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে (ঘুর্ণিঝড় আম্পানের মুখোমুখি হওয়ার জন্য) এবং সাইক্লোনের কবল থেকে মানুষের জান এবং মাল রক্ষার জন্য আমরা আরো সম্ভাব্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাউন্সিলের (এনডিএমসি) সভায় একথা বলেন। সুপার সাইক্লোন আম্পানের সম্ভাব্য আঘাত থেকে মানুষের জান-মাল রক্ষা এবং সর্বশেষ পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সুপার সাইক্লোন আম্পানকে একটি প্রাকৃতিক ঘটনা, যেখানে মানুষের কোন হাত নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী

এর থেকে মানুষের জান-মাল রক্ষার জন্য মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে অনুগ্রহ প্রার্থনা করেন।
বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বৈঠক সম্পর্কে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে ঘুর্ণিঝড় মোকাবেলার সামগ্রিক প্রস্তুতির জন্য সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, সশ¯্র বাহিনী, পুলিশ এবং এই প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত স্থানীয় লোকজনসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান।
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পূর্ব প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এ পর্যন্ত ২০ লাখ মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে এবং এজন্য ১৩ হাজার ২৪১টি সাইক্লোন শেল্টার সেন্টার খোলা হয়েছে।’

সরকার যখন কোভিড-১৯ মহামারী থেকে উদ্ভূত পরিস্থিতির মোকাবিলার জন্য যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ঠিক সে সময়ই ঘূর্ণিঝড় আম্পান বাংলাদেশে আঘাত হানতে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই বিপর্যয়টা এমন সময়ে এসেছে যখন আমরা করোনাভাইরাস বিপর্যয়কে দূর করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী সাইক্লোনটি আজ বিকেলের যেকোন সময়ে বাংলাদেশের ভূখন্ডে আঘাত হানতে পারে, যদিও এই সাইক্লোন মোকাবেলায় সরকারের ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার যখনই কোন দুর্যোগের পূর্বাভাস পেেেছ, তখনই দ্রুত সাড়া দিয়েছে, প্রতিটি মানুষের জান-মাল রক্ষার্থে ব্যবস্থা নিয়েছে, যা অতীতের কোন সরকারই করেনি।
১৯৯১ সালের প্রলয়ংকারি ঘুর্ণিঝড় যখন দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলীয় জেলাগুলোতে আঘাত হানে তখন ক্ষমতাসীন বিএনপি সরকার কোন ব্যবস্থাই গ্রহণ করেনি বলে স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, এমনকি তারা দুর্যোগের কোন তথ্য রাখারও প্রয়োজন মনে করনি। যেখানে হাজার হাজার মানুষ নিহত, বিমান বাহিনীর বিমান,নৌবাহিনীর জাহাজ এবং ব্যাপক জনসম্পত্তি বিনষ্ট হয়।

তিনি বলেন, ‘তৎকালিন বিরোধী দল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ঘুর্ণি দুর্গত মানুষের দ্বারে দ্বারে ত্রাণ নিয়ে যায়, সরকারের আগেই তাঁরা মাছ ধরার নৌকায় করেও দুর্গম চরাঞ্চলে ত্রাণ পৌঁছে দেয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে সরকারে আসার পরে তাঁর সরকার বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করে মানুষকে জানানোর উদ্যোগ নেয় যে, এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় কি করতে হবে।
তিনি আরো বলেন,‘১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসেই আমরা দেখতে পাই দেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের কোন আধুনিক যন্ত্রপাতি নেই কাজেই এর আধুনিকায়ন এবং যুগোপযোগীকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করি।’
সরকার প্রধান বলেন, দুর্যোগ সম্পর্কিত আগাম তথ্য এখন স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং সেই তথ্য তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণে আন্তর্জাতিকভাবে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে ।
প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি সরকারী দল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন দুর্যোগকালিন জনগণকে খাদ্য, ওষুধসহ অন্যান্য ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিতে কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি এ সময় বোরো ধান কাটার জন্য ছাত্রলীগ, কৃষক লীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের কৃষকদের সহযোগিতার প্রসংগ উল্লেখ করে বলেন, ‘এটাই অত্যন্ত আশার বিষয় যে, প্রায় ৯০ শতাংশ বোরো ধান গোলায় উঠেছে আম্পান ঘুর্ণিঝড় আঘাত হানার আগে।
ভৌগলিক অবস্থানগত কারণেই বাংলাদেশকে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করেই চলতে হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘কাজেই বাংলাদেশকে সবসময়ই যেকোন দুর্যোগ মোকাবেলা করেই চলতে হবে। তা প্রাকৃতিক দুর্যোগই হোক বা মনুষ্য সৃষ্টই হোক।’
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় তাঁর সরকারের বিভিন্ন সাফল্যের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্যোগ ঝুঁকি প্রশমন এবং দুর্যোগকালিন জনগণের জান-মালের ক্ষয়-ক্ষতি কমিয়ে আসার ক্ষেত্রে বাপক সাফল্য অর্জন করেছে, যা আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও স্বীকৃতি লাভ করেছে।
দুর্যোগ ঝুঁকি প্রশমন কর্মসূচি প্রণয়ণে জাতির পিতা অগ্রপথিক ছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘বঙ্গবন্ধু মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা বিধানে মুজিব কেল্লা নির্মাণসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা রেড ক্রসের সহায়তায় যেকোন দুর্যোগ মোকাবেলায় ৪৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবকের একটি বাহিনী গড়ে তোলেন।
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রীগণ,মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং তিন বাহিনীপ্রধানগণ সচিবালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এ সময় গনভবন প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন।