কাউন্সিলের মাধ্যমে আফগানিস্তান চালাতে পারে তালেবান

অন্তবর্তী সরকার গঠনে বুধবার আফগানিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও বৈঠক করেছেন তালেবান কমান্ডার ও তালেবানগোষ্ঠীর সহযোগী সংগঠন হাক্কানি নেটওয়ার্কের জ্যেষ্ঠ নেতা আনাস হাক্কানি।

সুপ্রভাত ডেস্ক »

আগামী দিনে তালেবান কীভাবে সরকার চালাবে, রয়টার্সকে তার আভাস দিয়েছেন তালেবান নেতৃত্বের ঘনিষ্ট ওয়াহিদুল্লাহ হাসিমি।

প্রথম তালেবান সরকারের নীতি নির্ধারক ছিলেন মোল্লাহ ওমর। কিন্তু তিনি কখনো সামনে আসেননি। একটি কাউন্সিল তৈরি করে শাসন চালাতেন তিনি। এবারেও সেই একই বিষয় ঘটতে পারে বলে মনে করছেন ওয়াহিদুল্লাহ হাসিমি। সংবাদসংস্থা রয়টার্সকে তিনি জানিয়েছেন, এ বিষয়ে এখনো কোনো নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে তালেবান থিংকট্যাঙ্ক কাউন্সিল তৈরির দিকেই ঝুঁকে আছে বলে মনে করা হচ্ছে।

সেনাবাহিনী

আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের কথা জানিয়েছেন হাসিমি। তার বক্তব্য, আফগান সেনার কর্মকর্তা এবং যুদ্ধবিমানের পাইলটদের নতুন প্রশাসনে যোগ দেওয়ার আবেদন জানাতে পারে তালেবান। এ বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। তালেবান মনে করে, আফগান বাহিনীর সঙ্গে তালেবান যোদ্ধাদের মিশিয়ে একটি নতুন সেনাবাহিনী তৈরি করা দরকার। বস্তুত, তালেবান গেরিলা যুদ্ধে পারদর্শী হলেও তাদের কোনো বিমান বাহিনী নেই। তালেবান পাইলটও নেই। ফলে আফগান বাহিনী থেকেই বিমানবাহিনী তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। সারেন্ডার করা আফগান সেনাদের থেকেও দক্ষ অফিসারদের নতুন বাহিনীতে নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।

আফগান বাহিনীর কর্মকর্তাদের অধিকাংশই যুক্তরাজ্য, জার্মানি এবং তুরস্কে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। সেই প্রশিক্ষণ নতুন বাহিনীতে কাজে লাগবে বলেই মনে করছে তালেবান। পাশাপাশি গত কয়েকসপ্তাহে একাধিক বিদেশি বেস তারা নিজেদের দখলে নিয়েছে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ জার্মান ঘাঁটি এবং মার্কিন ঘাঁটি। সেখানে অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্রের পাশাপাশি হেলিকপ্টার এবং যুদ্ধবিমানও দখল করেছে তারা। সেই সমস্ত আধুনিক বিমানের জন্য প্রশিক্ষিত পাইলট প্রয়োজন। আফগান বাহিনী থেকেই সেই পাইলটদের পাওয়া যাবে বলে মনে করছে তারা। তবে বাহিনীতে কেবল আফগান বাহিনীর সেনা রাখা হবে না। যথেষ্ট পরিমাণে তালেবান যোদ্ধাও মোতায়েন করা হবে। যাতে নতুন সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে না পারে সেনা বাহিনী।

গণতন্ত্র নয়

নতুন আফগানিস্তানে গণতন্ত্রের কোনো জায়গাই থাকবে না বলে স্পষ্ট করেছেন হাসিমি। তিনি জানিয়েছেন মূলত শরিয়া আইনের উপরেই গড়ে উঠবে শাসন ব্যবস্থা। তবে সেই ব্যবস্থা গত তালেবান শাসনের মতো হবে কি না, তা নিয়ে স্পষ্ট কোনো মন্তব্য করেননি হাসিমি। অদূর ভবিষ্যতে তা স্পষ্ট হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে কাউন্সিল তৈরির বিষয়ে অনেকটাই নিশ্চিত তিনি। তার বক্তব্য, তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা সুপ্রিম লিডার হিসেবে সরকারের প্রধান হবেন। কিন্তু সম্ভবত তিনি প্রেসিডেন্ট হবেন না। প্রেসিডেন্ট করা হতে পারে আখুন্দজাদার ডেপুটিদের। এই মুহূর্তে আখুন্দজাদার তিনজন ডেপুটি আছেন। মোল্লাহ ওমরের ছেলে মৌলভি ইয়াকুব, হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রধান সিরাজউদ্দিন হাক্কানি এবং দোহায় তালেবানের রাজনৈতিক প্রধান আবদুল গনি বারাদার। মঙ্গলবার বিশ বছর পর তিনি কান্দাহারে পা রেখেছেন।

বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, তালেবান যে নতুন সরকার গঠন করতে চলছে, তার মডেল হবে খানিকটা ইরানের মতো। সুপ্রিম লিডারের কাছে সকলে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে। তার নীচে থাকবেন প্রেসিডেন্ট এবং তার নীচে কাউন্সিল। অন্যদিকে যে সেনাবাহিনী তৈরি হবে সেখানেও দুইটি ভাগ থাকতে পারে। একদিকে সুপ্রিম লিডারের তত্ত্বাবধানে রেভোলিউশনারি গার্ডের মতো বাহিনী এবং অন্যদিকে সাধারণ সেনাবাহিনী। সুপ্রিম লিডারের সেনা হবে মূলত তালেবান যোদ্ধাদের নিয়ে। সাধারণ সেনা বাহিনীতে বর্তমান আফগান ফৌজের সেনাদের যুক্ত করা হবে।

সূত্র : ডয়চে ভেলে