কমছে না সংক্রমণ

চট্টগ্রামে জুলাইয়ের ১৮ দিনে আক্রান্ত ১২ হাজার ১৩৮ জন

মোহাম্মদ কাইয়ুম >>
করোনার উর্ধ্বমুখী সংক্রমণে প্রতিনিয়ত ভয়াবহ হচ্ছে চট্টগ্রামের করোনা পরিস্থিতি। ফলে প্রতিদিনই রেকর্ড সংখ্যাক রোগী শনাক্ত হচ্ছে। একই সঙ্গে মৃত্যুও বেড়েছে।
এরই মধ্যে চলতি মাসের ১৮ দিনে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ১২ হাজার ১৩৮ জন। পাশাপাশি এ সময়ে মারা গেছেন ১৩৪ জন। জুন মাসের শেষ সপ্তাহে চট্টগ্রামে দৈনিক সংক্রমণের হার ২৯ শতাংশ থাকলেও বর্তমানে সে সংখ্যা প্রায় ৩৪ শতাংশ। ১৪ দিনের লকডাউনে সংক্রমণের হার নিম্নমুখী হওয়ার আশা করা হলেও এখনো তা ঊর্ধ্বমুখী।
করোনার ঊর্ধ্বমুখী পরিস্থিতিতে ১৪ দিনের লকডাউনে সুফল না আসলেও ঈদের কারণে আবারও শিথিল করা হয়েছে সব ধরনের বিধিনিষেধ। এছাড়া কোরবানির পশুর হাটে মানুষের ভিড় ও ঘরমুখী মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি না মানায় ঈদ পরবর্তী সংক্রমণ আরো বাড়ার আশংঙ্কা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের দাবি, ঈদযাত্রায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে সচেতন না হলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, চলতি মাসের ১৮ দিনে চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ১২ হাজার ১৩৮ জন রোগী। এরমধ্যে নগরীতে ৮ হাজার ৩৪ জন এবং উপজেলায় ৪ হাজার ৪৪ জন। এ সময়ে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৩৬ হাজার ২৭০ জন। নমুনা হিসেবে ১৮ দিনে সংক্রমণের হার ৩৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ । তবে জুন মাসে সংক্রমণের সে হার ছিল মাত্র ১৮ দশমিক ১৭ শতাংশ। সে সময়ে ২৯ হাজার ৬৮৪ নমুনা পরীক্ষা বিপরীতে আক্রান্ত হয়েছিল ৫ হাজার ৩৯৫ জন। এছাড়া গত মে মাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৪৩৮ জন। তবে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলাকালীন এপ্রিল মাসেই চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ৯ হাজার ৯১৮ জন। যা বিগত সময়ে চট্টগ্রামে এক মাসে সর্বোচ্চ আক্রান্তের রেকর্ড। কিন্তু চলতি মাসের ১৮ দিনে সে রেকর্ড ভেঙ্গে আক্রান্ত হয়েছে ১২ হাজারের বেশি রোগী। করোনায় সংক্রমণ বৃদ্ধির পাশাপাশি বেড়েছে মৃত্যুর সংখ্যা। চলতি মাসের ১৮ দিনে করোনায় মারা গেছেন ১৩৪ জন। এর মধ্যে নগরীতে ৪৩ জন এবং উপজেলায় ৯১ জন। এছাড়া গত জুন মাসে মারা গেছেন ৮৩ জন, মে মাসে মারা গেছে ৯৮ জন এবং এপ্রিলে মারা গেছে ১৩১ জন। সে হিসেবে গত ১৮ দিনে করোনায় মৃত্যু অতীতের সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে।
অবহেলার চূড়ান্ত মাত্রায় সংক্রমণ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ জানিয়ে চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালের উদ্যোক্তা ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া সুপ্রভাতকে বলেন, ‘করোনার বিষয়ে এখন মানুষ কেমন যেন গা-ছাড়া ভাব, উদাসীনতা ও অবহেলার চূড়ান্ত মাত্রায় পৌঁছেছে। ফলে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি এ চিত্র। মানুষ নিজ থেকে যতদিন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে সচেতন হবে না, ততদিন সংক্রমণ বাড়তে থাকবে। সেখানে শত লকডাউন কিংবা প্রচারণা কোনো সুফল আসবে না।’
ঈদ পরবর্তী সংক্রমণ আরো বাড়বে জানিয়ে ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া বলেন, বর্তমানে পশুর হাটে মানুষের সমাগম ও ঈদযাত্রায় কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। বর্তমানে মানুষের কাছে উৎসবই প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে বেশিরভাগ মানুষ শহর থেকে গ্রামে চলে যাচ্ছে। লকডাউনের কারণে ঈদের পরে সবকিছুই বন্ধ থাকবে। তখন গ্রামের মানুষ যারা সংক্রমিত হয়ে গ্রামে গেছে তাদের কারণে গ্রামের পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে।’
সংক্রমণের নিয়ন্ত্রণে না আসার বিষয়ে জানতে চাইলে সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘লকডাউনে সংক্রমণ কমে আসার আমরা যে আশা করেছি তা অর্জন করতে পারেনি। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা হলেও তারা তা মানেনি। কঠোর বিধিনিষেধে রাস্তাÑঘাটে মানুষের চলাচল কম থাকলেও অলি-গলিতে সমাগম কিছুতেই বন্ধ করা যায়নি। এছাড়া বাসায় কেউ পজিটিভ হলে আইসোলেশন থাকার কথা বলা হলেও তা কেউ মেনে চলেনি। ফলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ আসার পরিবর্তে আরো ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে।’
ঈদ পরবর্তী সংক্রমণ আরো বাড়তে পারে জানিয়ে সিভিল সার্জন বলেন, ‘জনগণের জীবন-যাত্রার কথা চিন্তা করে সরকার লকডাউন শিথিল করলেও মানুষ তা মানছে না। ঈদযাত্রায় স্বাস্থ্যবিধি মানার কথা বলা হলেও মানুষের ঢলে কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। এছাড়া কোরবানির পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে উদাসীনতা দেখা যাচ্ছে। করোনার উর্ধ্বমুখী সংক্রমণের পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে ঈদের পরে সংক্রমণ আরো বেড়ে যাওয়ার আশংঙ্কা থেকেই যায়।’