উৎকণ্ঠা শেষে স্বস্তিতে স্বদেশ

পূর্বাভাস অনুযায়ী মোখা তেমন শক্তি নিয়ে আঘাত করেনি। আবহাওয়াবিদরা জানান, মোখা গতিপথ পরিবর্তন করায় ও ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলে আসার সময়ে জোয়ার না থাকায় দুর্বল হয়ে পড়ে। ভাটার টানের কারণেই এটা হয়েছে। সমুদ্রের ভাটাই শেষ পর্যন্ত কক্সবাজারের মানুষের জন্য ব্লেসিং হয়ে দেখা দিয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় মোখার কেন্দ্র যখন টেকনাফের সেন্টমার্টিন ও মিয়ানমারের মংডু জেলা অতিক্রম করছিল ঠিক তখনই বঙ্গোপসাগরে ভাটার টান শুরু হয়। ভাটার টানের কারণে ঘূর্ণিঝড়টি সমুদ্রের মধ্যেই দুর্বল হয়ে পড়েছিল। এরপর সাগর থেকে স্থলভাগে ওঠার সময় এই ভাটার টানই ঘূর্ণিঝড়টির শক্তি কমিয়ে দিয়েছে। ফলে আগের পূর্বাভাসে যে শক্তি নিয়ে আঘাত হানার কথা বলা হয়েছিল, প্রকৃতপক্ষে মোখা আর সে শক্তি অর্জন করে স্থলভাগে আসতে পারেনি।
সংবাদমাধ্যম থেকে আবহাওয়ার আরো বিশ্লেষণে জানা যায়, চার কারণে মোখা সুপার সাইক্লোন হয়নি এবং বাংলাদেশে আঘাত করেনি। গত কয়েক দিন মানুষ যে দাবদাহ ভোগ করেছে, সেটির সুফলই পেয়েছে বাংলাদেশ। পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে বাংলাদেশের ওপর পূর্ব দিকে যে বায়ুচাপ ছিল সেটি ঘূর্ণিঝড়কে দক্ষিণ দিকে ঠেলে দেয়। ফলে দাবদাহ আশীর্বাদরূপে কাজ করেছে। না হলে মোখা সুপার সাইক্লোন আকারে এবং বাংলাদেশের দিকেই চলে আসতে পারত। কেননা, মোখা সাগরে থাকাকালে ‘সুপার সাইক্লোন’ রূপ ধারণ করার অবস্থায় ছিল। শনিবার মধ্যরাতের দিকে ২১৫ কিলোমিটার ঝড়ো হাওয়া রেকর্ড করা হয়, যা আর ৫ মিটার বাড়লেই ‘সুপার সাইক্লোনে’ রূপ নিত। কিন্তু পশ্চিমা বায়ুপ্রবাহ, সমুদ্রপৃষ্ঠের বা পানির তাপমাত্রা, ভূপৃষ্ঠ থেকে ঊর্ধ্বমুখী (আকাশ) বায়ুর চাপ এবং ঘূর্ণিঝড়ের তাপীয় বিভব মাত্রা বা ‘সাইক্লোন হিট পটেনশিয়াল’ ইতিবাচক হয় বাংলাদেশের জন্য। কেননা, মোখার জন্য এই চারটির কোনোটিই অনুকূল ছিল না। পশ্চিমা বায়ুর প্রাধান্য ছিল বাংলাদেশ উপকূল থেকে দূরে সাগরে ৩০ ডিগ্রি অক্ষাংশ পর্যন্ত। আকাশের দিকে প্রায় ৯ কিলোমিটার পর্যন্ত ছিল এর বিস্তার। এটি ‘স্টিয়ারিং উইন্ড’ বা চালক বায়ু হিসাবে ছিল। মূলত এটিই ঘূর্ণিঝড়টিকে বাংলাদেশ উপকূল থেকে ঠেলে গভীর সাগরের দিকে রাখে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল সাগরের পানির তাপমাত্রা, যা ছিল মাত্র ৩০-৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সাইক্লোন হিট পটেনশিয়াল ৬০-৭০ জুল। এ ছাড়া ঊর্ধ্ব-নিম্ন আকাশের বায়ুচাপের পার্থক্য কম ছিল।
মোখার মূল কেন্দ্র মিয়ানমারের উপর দিয়ে গেলেও কক্সবাজার জেলার উপর দিয়ে গেছে মূল কেন্দ্রের বাম পাশের কিছু অংশ। ফলে বাংলাদেশে মোখার আঘাতে খুব বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ক্ষতি বলতে হয়েছে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বন্ধ ছিলো দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম। জাহাজে পণ্য খালাস, শিপমেন্ট, ডেলিভারিসহ বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম দুই দিন বন্ধ থাকায় কিছু অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে। সাপ্লাই চেনে সমস্যা হওয়ায় নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ও শিল্পের কাঁচামালের আমদানি মূল্য বেড়ে যাবার সম্ভাবনা আছে। এছাড়া গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় শিল্পকারখানার উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে।
প্রকৃতিই বড় ক্ষতি হতে রক্ষা করেছে বাংলাদেশকে। প্রবল উৎকণ্ঠা শেষে স্বস্তিতে স্বদেশ। বড় বিপর্যয় হয়নি এটাই সন্তুষ্টি।