উন্নয়নে এগিয়ে যাবে চট্টগ্রাম

কাজ শুরু হবে : বে টার্মিনাল, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর, মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয় ও ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্প শেষ হওয়ার পথে : পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল, কর্ণফুলী টানেল, আউটার রিং রোড, বায়েজিদ বাইপাস, ওয়াসার ভান্ডালজুড়ি পানি শোধনাগার ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে

ভূঁইয়া নজরুল»
আরো একটি নতুন বছর। নতুন স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে চলা। চট্টগ্রামের এগিয়ে যাওয়ার ওপর নির্ভর করছে দেশের এগিয়ে যাওয়া। দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর এই নগরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। আমদানি-রপ্তানির ৯৩ শতাংশ পণ্য এই বন্দর দিয়েই পরিবাহিত হয়। ফলে বন্দর নগরীর উন্নয়নে নেওয়া অনেক মেগা প্রকল্প চলতি বছর শেষে আলোর মুখ দেখতে পারে এবং নগরকে আরো এগিয়ে নিতে শুরু হতে যাচ্ছে নতুন নতুন মেগা প্রকল্পের কাজ।

চট্টগ্রামের আগামীর সম্ভাবনা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির উপাচার্য রিয়ার এডমিরাল এম খালেদ ইকবাল বলেন, ‘চট্টগ্রামের গুরুত্ব রয়েছে বলেই এখানে চলতি বছরের শুরুতে হামিদচরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। এতে কালুরঘাটের পুরো জোনটি ডেভেলপ করবে। বর্তমানে এই এলাকাটি পিছিয়ে রয়েছে।’
জানা গেছে, একটি বিশ্ববিদ্যালয় যেমন একটি এলাকার উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে তেমনিভাবে হালিশহর সাগর পাড়ে গড়ে উঠতে যাওয়া বে টার্মিনাল বদলে দেবে পুরো দেশের অর্থনীতি। এজন্য চিটাগাং চেম্বারের প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম দফায় দফায় বলে আসছেন সবার আগে বে টার্মিনাল বাস্তবায়ন জরুরি। হালিশহর সাগর পাড়ের সাড়ে ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকায় প্রায় ২৩০০ একর ভূমিতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ আগামীর বন্দর বলে খ্যাত বে টার্মিনাল বাস্তবায়নের কাজ করছে। কিন্তু প্রায় এক দশক ধরে এই প্রকল্পের কথা শোনা গেলেও বাস্তবিক অর্থে এর কাজ এখনও শুরু করা যায়নি। সম্প্রতি একটি অংশে মাটি ভরাটের কাজ হয়েছে। তবে সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান বলেছিলেন, পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) পদ্ধতিতে বে টার্মিনাল প্রকল্প বাস্তবায়ন হলেও তিনটি টার্মিনালের মধ্যে একটি টার্মিনাল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নির্মাণ করবে। এজন্য ইতিমধ্যে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের কাজ চলমান রয়েছে। তা চূড়ান্ত হলে টার্মিনাল নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হবে।
অপরদিকে মহেশখালীতে নির্মাণ হতে যাওয়া মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরের কাজ এবছরেই পুরোদমে শুরু হবে। ইতিমধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষে এখন ভূমি মালিকদের ক্ষতিপূরণ অর্থ প্রদানের বাকি রয়েছে। আর তা শেষ হলেই কাজ শুরু করতে আর বাধা নেই। এই প্রকল্পেরমাধ্যমে গভীর সমুদ্রবন্দরের যুগে প্রবেশ করবে দেশ। বে টার্মিনাল ও মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরের কাজ যখন শুরু হতে যাচ্ছে তখন চলতি বছরে শুরু হবে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পটি। ইতিমধ্যে প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। সরকার এই প্রকল্পটি পিপিপি পদ্ধতিতে বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠানকে অপারেটিংয়ের দায়িত্ব দিতে আগ্রহী। তবে এখনও প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত হয়নি। তবে প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত না হলেও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় টার্মিনালটি চালু করে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

চলতি বছরে শেষ হবে টানেল

কর্ণফুলীর তলদেশে নির্মিত হচ্ছে উপমহাদেশের প্রথম টানেল। এ প্রকল্পের কাজও চলতি বছরের মধ্যে শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। ইতিমধ্যে দুই টিউবের খনন কাজ শেষ। বছরজুড়ে এই টানেল দিয়ে গাড়ি চলাচলের উপযোগী ট্র্যাক সংযোগ করা হবে।

শেষ হবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মূল অংশ

লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ ইতিমধ্যে ৬০ শতাংশ শেষ হয়েছে। চলতি বছর শেষে মূল এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে জানান প্রকল্পের পরিচালক ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘মার্চের মধ্যে টাইগারপাস থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত অংশের কাজ শেষ করা হবে। এছাড়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রধান অংশের কাজ চলতি বছর শেষ হলেও র‌্যাম ও লুপের কাজ শেষ হতে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময় লাগবে।

পুরোদমে চলবে আউটার রিং রোড

পতেঙ্গা থেকে সাগরিকা পর্যন্ত সাগরের পাড় ঘেঁষে আউটার রিং রোডের কাজ ইতিমধ্যে শেষ হলেও দুটো ফিডার রোড এখনও চালু হয়নি। এতে রোডের কার্যকরিতা নগরবাসী পুরোদমে পাচ্ছে না। এ বিষয়ে এই প্রকল্পের পরিচালক ও সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘ফিডার রোড-৩ (সাগরিকা স্টেডিয়ামের পাশ দিয়ে) এর নির্মাণ প্রায় শেষ। শিগগিরই তা চালু হয়ে যাবে। অপরদিকে ফিডার রোড-১ (পতেঙ্গা খেজুরতলা অংশে) এর নির্মাণকাজ চলতি বছরের মধ্যে শেষ হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘ফিডার রোড-২ (বড়পোল অংশে) এর জন্য ডিপিপি প্রণয়ন করা হচ্ছে। এর নির্মাণকাজও চলতি বছরে এগিয়ে যাবে।’

শেষের পথে থাকবে চাক্তাই থেকে কালুরঘাট রোড

কর্ণফুলী নদীর তীর ঘেঁষে চাক্তাই থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত প্রায় আট কিলোমিটার দীর্ঘ চার লেনের একটি রোড হচ্ছে। ইতিমধ্যে এই প্রকল্পের ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। চলতি বছর শেষে এই প্রকল্পের অগ্রগতি কোথায় গিয়ে ঠেকতে পারে জানতে চাইলে প্রকল্পের পরিচালক ও সিডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী রাজীব দাশ বলেন, ‘২০২২ সাল শেষে প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষের পথে থাকবে। তবে সম্পূর্ণ শেষ হতে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে বাকলিয়া, চান্দগাঁও ও কালুরঘাট অংশে অভূতপূর্ব উন্নয়ন কার্যক্রম হবে। ’

চালু হবে বায়েজিদ বাইপাস রোড

শেষ হয়েও হইলো না শেষ এই কথাটি বায়েজিদ বাইপাস রোডের ক্ষেত্রে শতভাগ প্রযোজ্য। এই প্রকল্পের কাজ প্রায় এক বছর আগে শেষ হলেও পাহাড় নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্দেশনা এবং রেল লাইনের উপর ব্রিজ নির্মাণে রেলওয়ের গাইড লাইনে আটকে রয়েছে চার লেনের বাইপাস রোডটি। এই রোডটি সব বাঁধা অতিক্রম করে চলতি বছরে পুরোদমে চলাচলের উপযোগী হবে বলে জানান সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস।

শুরু হবে ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্প চালু হবে পানি শোধনাগার

চলতি বছরের শুরুতে হালিশহর সাগড় পাড়ে ১৬৫ একর জায়গায় ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকার স্যুয়ারেজ প্রকল্প চালু হবে। ইতিমধ্যে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত হয়ে গেছে। অপরদিকে কর্ণফুলী নদীর ওপারে বোয়ালখালীতে দিনে ৬ কোটি লিটার ধারণক্ষমতার ভান্ডালজুড়ি পানি শোধনাগার প্রকল্পের কাজ শেষ হতে পারে। এটি হলে পটিয়া, আনোয়ারা ও বোয়ালখালী এলাকার আবাসিক ও শিল্প কারখানায় সুপেয় পানি সরবরাহ করা যাবে।
এছাড়া চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে। চলতি বছর শেষে এই প্রকল্পও একটি পর্যায়ে এসে পৌঁছাবে। মিরসরাই শিল্প নগরে দিন দিন বাড়ছে কারখানা স্থাপনের কাজ। বছর শেষে এই শিল্প নগরে আরো কোলাহল বাড়বে। অর্থাৎ এই বছরটি চট্টগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যাবে অনেক দূর।