আন্দোলনের শততম দিনে ‘ছাত্রলীগের হামলা’

চারুকলা ইনস্টিটিউট

চবি প্রতিনিধি »

চলমান আন্দোলনের শততম দিনে ছাত্রলীগের হামলার শিকার হয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারীদের ব্যানার কেড়ে নিয়ে মারধর করা হয়। এসময় আন্দোলনকারী কয়েকজন নারী শিক্ষার্থীও ‘হেনস্তার’ শিকার হন। পাশাপাশি কর্মরত সাংবাদিকরাও ছাত্রলীগের রোষানলে পড়েন।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে হামলার ঘটনা ঘটে। জানা যায়, ক্যাম্পাস স্থানান্তর আন্দোলনের ১০০ তম দিনে সকাল থেকেই ব্যানার, পোস্টার, প্ল্যাকার্ড সহকারে শহীদ মিনারের সামনে জড়ো হয় আন্দোলনকারীরা। কিছু সময় পরে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী এসে তাদের ব্যানার নিয়ে যায়। পাশাপাশি তাদের আন্দোলনে কাদের ইন্ধন আছে, কি এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চায় এসব জিজ্ঞেস করে। একপর্যায়ে নেতৃত্বদানকারী কয়েকজনকে টেনেহিঁচড়ে অন্যদিকে নিয়ে যায় এবং মারধর করে। এসময় পেশাগত কাজ করার সময় সমকালের চবি প্রতিনিধি মারজান আক্তার এবং আরটিভির ক্যামেরাপারসন ইমরাউল কায়েস মিঠুসহ কয়েকজন সাংবাদিকও ছাত্রলীগের হেনস্তার শিকার হন। হামলার ব্যাপারে প্রক্টর বরাবর অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন চারুকলার শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনকারী চারুকলার ২০১৮-১৯ সেশনের ছাত্রী পায়েল দে বলেন, আজকে আন্দোলনের ১০০তম দিন ছিলো। বিগত দিনের মতো আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ব্যানার পোস্টার সহকারে শহীদ মিনারের সামনে অবস্থান করছিলাম। হঠাৎ একদল ছেলে এসে আমাদের থেকে ব্যানার, ফেস্টুন কেড়ে নেয়। তারা আমাদেরকে আন্দোলন বন্ধের জন্য হুমকি দিয়ে শহিদ মিনার চত্বর থেকে বের করে দেয়।

আরেকজন চারুকলা শিক্ষার্থী শহীদ বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বিনা কারণে ছাত্রলীগ হামলা করে। তারা আমাদের ১০-১২ জনকে আলাদাভাবে নিয়ে মারধর করেছে। আমাদের চারুকলার ছাত্রীদেরকেও হেনস্তা করেছে। এসময় একজন ছাত্রী জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যান। আমরা বারবার প্রক্টর ও প্রশাসনিক বডিকে কল দিলেও তারা সাড়া দেয়নি। প্রশাসন এভাবে আন্দোলনকে দমিয়ে দিতে চাইছে। কিন্তু আমরা স্পষ্টভাবে বলছি দাবি আদায়ের আগ পর্যন্ত আমরা আন্দোলন থেকে সরে আসবো না। দরকার হলে গণঅনশনে যাবো আমরা।

এদিকে ছাত্রলীগের হেনস্তার শিকার হন কর্মরত সাংবাদিকরাও। এ বিষয়ে দৈনিক সমকালের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মারজান আকতার বলেন, ছাত্রলীগের ছেলেরা যখন আন্দোলনকারীদের বাধা দিচ্ছিল তখন পেশাগত দায়িত্ব হিসাবে ফুটেজ নিচ্ছিলাম। এসময় ছাত্রলীগের ভিএক্স গ্রুপের নেতাকর্মীরা এসে আমাকে আটকায় এবং ভিডিও ডিলিট করার জন্য জোর করতে থাকে। আমি ডিলিট করতে অস্বীকৃতি জানালে আমাকে নিরাপত্তাজনিত হুমকি প্রদান করে।

হামলার বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক এবং ভিএক্স গ্রুপের নেতা মারুফ আহমেদ বলেন, চারুকলার আন্দোলনে আমাদের কিছু ছেলে অংশগ্রহণ করেছিল। আমরা তাদেরকে আন্দোলন থেকে নিয়ে আসার জন্য গিয়েছিলাম। কোন হামলার ঘটনা ঘটেনি।

সাংবাদিক হেনস্তার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা সাংবাদিককে চিনতে পারিনি। প্রথম উনাকে সাধারণ শিক্ষার্থী মনে করেছিলাম। তাই ভিডিও ডিলিট করতে বলি। কিন্তু তিনি যখন সাংবাদিক পরিচয় দিয়েছেন তখন আমরা আর কিছু বলিনি।

শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু বলেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছে। প্রশাসনের উচিত তাদের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নেওয়া। আর হামলার ব্যাপারে আমরা অবগত নই। কেউ ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করলে তার দায় সংগঠন নেবে না। যদি ছাত্রলীগের কেউ জড়িত থাকে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ড. শহিদুল ইসলাম বলেন, তারা আমাদের কাছ থেকে অনুমতি না নেওয়ায় বিষয়টি আমাদের জানা ছিলো না। তারা অভিযোগপত্র দিয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।