‘আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের পাশে’ চীন

সুুপ্রভাত ডেস্ক »

সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা ও আঞ্চলিক অখ-তা রক্ষার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক নীতি সমুন্নত রাখার প্রশ্নে বাংলাদেশের প্রতি চীনের অকুণ্ঠ সমর্থন রয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন।

বেইজিংয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে চীনা এই কর্মকর্তার এমন প্রতিক্রিয়া আসে। ঢাকায় চীনা দূতাবাস বুধবার তাদের ফেসবুক পেইজে তাদের মুখপাত্রের ওই বক্তব্য প্রকাশ করে। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।

ওয়াং ওয়েনবিন বলেন, ‘জাতিসংঘকেন্দ্রিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা, আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ব ব্যবস্থা, জাতিসংঘ সনদের উদ্দেশ্য ও নীতির উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পরিচালনার মৌলিক নিয়মগুলোকে সমুন্নত রেখে এবং অভিন্ন ভবিষ্যৎমুখী একটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গড়ে তুলতে সব ধরনের আধিপত্যবাদ ও ক্ষমতার রাজনীতির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ও অন্য সব দেশের সাথে কাজ করতে আমরা প্রস্তুত।’

চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের দৃষ্টি আকর্ষণ করে গ্লোবাল টাইমসের সাংবাদিক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, বাংলাদেশের র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি বিভ্রান্তিকর। তার মতে, এই নিষেধাজ্ঞা একটি খেলার মত। তিনি এও বলেছেন, বাংলাদেশ এই নিষেধাজ্ঞাকে ভয় পায় না। পাশাপাশি তিনি অর্থ মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে নিষেধাজ্ঞা আরোপকারী দেশগুলো থেকে কিছু না কেনা হয়। এ ব্যাপারে চীনের মন্তব্য কী?’

জবাবে ওয়াং ওয়েনবিন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক বক্তব্যের বিষয়ে আমরাও অবগত। আসলে, নিজেদের জাতিগত বৈষম্য, বন্দুক সহিংসতা এবং মাদক সমস্যার সমাধান না করে একটি নির্দিষ্ট দেশ দীর্ঘদিন ধরে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের দোহাই দিয়ে বাংলাদেশ এবং অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে আসছে।’

তার ভাষায়, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য শুধু বাংলাদেশের জনগণের দৃঢ় অবস্থানের কথাই প্রকাশ করে না, তিনি তার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের, বিশেষ করে উন্নয়নশীল বিশ্বের মনের কথাই বলেছেন।’

‘গুরুতর’ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর এলিট ফোর্স র‌্যাব এবং এর সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র সরকার।

এরপর বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হলেও যুক্তরাষ্ট্রের সাড়া মেলেনি। যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই বলে আসছে, নিষেধাজ্ঞা উঠানোর প্রক্রিয়া বেশ ‘জটিল’।

গত এপ্রিলে সংসদে এক বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র যে কোনো দেশে ক্ষমতা ‘উল্টাতে পারে, পাল্টাতে পারে।’

পরে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার কাছে একটা বড় প্রশ্ন হল, কেন তারা নিষেধাজ্ঞা জারি করল? যখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেশের সন্ত্রাস মোকাবেলার জন্য কাজ করছে, মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তখন তারা লঙ্ঘনকারীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে, যারা ভুক্তভোগী, তাদের পক্ষে নয়।’

ওই সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ‘হয়তো তাকে ক্ষমতায় চায় না বলেই’ বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

‘আমি জানি না, হয়তো তারা আমার কাজ অব্যাহত থাকুক তা চায় না, আমি বাংলাদেশের জন্য যেসব উন্নতি করেছি, সেটা তারা হয়ত গ্রহণ করতে পারছে না। এটা আমার অনুভূতি।’

চীন ও বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা তুলে ধরে ওয়াং ওয়েনবিন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা এবং আঞ্চলিক অখ-তা রক্ষায়, অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক নীতি সমুন্নত রাখতে এবং নিজেদের বাস্তবতার সঙ্গে মানানসই একটি উন্নয়নের পথ অনুসরণের প্রশ্নে বাংলাদেশকে আমরা দৃঢ়ভাবে সমর্থন করি।