অগ্নি দুর্ঘটনা রোধে দরকার পরিকল্পিত নগরায়ণ

দেশে একের পর এক ঘটছে নানা মাত্রার অগ্নিকাণ্ড। গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর বেইলি রোডের বহুতল ভবনের আগুনে নিহত হয়েছে ৪৬ জন।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের অগ্নিকাণ্ড ও দুর্ঘটনা সংক্রান্ত কার্যক্রমের ২০২২ ও ২০২১ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন এবং পুলিশ সূত্রের তথ্য মতে, সারা দেশে এই দুই বছরে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৬৩টি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে।
ফায়ার সার্ভিসের ২০২২ সালের প্রতিবেদনে আগুন লাগার ২০টি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে, ২০২৩ সালে সারা দেশে ২৭ হাজার ৬২৪টি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। প্রতিদিন গড়ে এ ঘটনা ঘটেছে ৭৭টি এবং এর ফলে কেবল গত বছরই ৭৯২ কোটি ৩৬ লাখ ৮২ হাজার ১৪ টাকা মূল্যের সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। বৈদ্যুতিক গোলযোগ, বিড়ি-সিগারেটের টুকরো, চুলা ও গ্যাসের লাইন, সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে অধিকাংশ আগুনের সূত্রপাত ঘটে।
সাম্প্রতিক সময়ে বিস্ফোরণ ও অগ্নিদুর্ঘটনার পর বিভিন্ন ভবন পরিদর্শনে ফায়ার সার্ভিস জানতে পেরেছে, ফায়ার সার্ভিস বা সিটি করপোরেশন থেকে অগ্নিনিরাপত্তা মেনে যে নকশা পাস করা হয়, ভবনগুলো সে অনুযায়ী বানানো হয়নি। অন্তত ৭০ শতাংশ ভবনে এর ব্যত্যয় হতে দেখেছে ফায়ার সার্ভিস।
একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অনেকে পথে বসে গেছে। একেকটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা মানেই অপূরণীয় ক্ষতি। এসব অগ্নিকাণ্ডের পেছনে কোনো না কোনো অবহেলা বা অনিয়ম রয়েছে।
একটি দৈনিকের রিপোর্ট থেকে জানা যায়, নগরীতে বেশিরভাগ আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনে নেই অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা। অগ্নিনির্বাপণ আইনের তোয়াক্কা না করে নগরীতে ইতোমধ্যে গড়ে উঠেছে শত শত আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন। অগ্নিনির্বাপণ আইনে পরিষ্কার বলা আছে- ছয়তলার উপরে ভবনের ক্ষেত্রে তিন স্তরের নিজস্ব স্থায়ী অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা থাকতে হবে। এছাড়া বাণিজ্যিক ভবনের ক্ষেত্রে প্রথম তলা থেকে তিন স্তরের এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখার বিধান রয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রামের বেশিরভাগ আবাসিক ভবনেই তিন স্তরের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা দূরে থাক, অনেক এলাকার সড়ক এত সরু, কোনো ভবনে দুর্ঘটনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশেরও সুযোগ নেই। ফলে প্রতিবছর অগ্নিকাণ্ডে প্রচুর পরিমাণ সম্পদহানি হচ্ছে। এছাড়া প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে। তবে বাণিজ্যিক ভবনের মধ্যে কয়েকটি আন্তর্জাতিক মানসম্মত আবাসিক হোটেল ও দুয়েকটি শপিংমলে নিজস্ব অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা রয়েছে।
অগ্নিকাণ্ড মোকাবেলায় পরিকল্পিত নগরায়ণ অতি আবশ্যক। পরিকল্পিতভাবে নগর গড়ে উঠলে জলাশয় সংরক্ষণ সম্ভবপর হবে, জনগণের সচেতনতাও বাড়ানো সম্ভব। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হতে পারে অগ্নিকাণ্ড সচেতনতা বৃদ্ধি ও অগ্নিনির্বাপণ প্রশিক্ষণের অন্যতম জায়গা। আগুনের ঝুঁকি এড়াতে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের ব্যবহার সবার শেখা উচিত।
পরিকল্পিত নগরায়ণে ইমারত নির্মাণ বিধিমালার প্রয়োগ নিশ্চিতের বিকল্প নেই। এ বিধিমালা না মানা হলে সংশ্লিষ্ট সবাইকে জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত। পাশাপাশি বিধিমালা কঠোরভাবে প্রয়োগে নজরদারি বাড়াবে বলে প্রত্যাশা।