মেয়াদোত্তীর্ণ কক্সবাজার ‘রাডার স্টেশন’

১০ মাস ধরে অকেজো

দীপন বিশ্বাস, কক্সবাজার »
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগাম বার্তা সংগ্রহে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা কক্সবাজার ‘রাডার স্টেশন’টি মেয়াদত্তীর্ণ হয়ে অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে দীর্ঘ ১০ মাস ধরে। জেলাটির অধিকাংশ ভূমি উপকূল বেষ্টিত হওয়ায় প্রতিবছরই বেশ ক’টি দুর্যোগের সাথে মোকাবেলা করতে হয় এই এলাকার বাসিন্দাদের। অথচ বিগত ১০ মাস ধরে তারা ঘূর্ণিঝড়সহ নানা দুর্যোগের আগাম বার্তা নির্ণয়ের খবর পাচ্ছেন না। এই রাডার স্টেশন দিয়ে বঙ্গোপসাগরের ৪’শ কিলোমিটার পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়সহ নানা দুর্যোগের আগাম বার্তা নির্ণয় করা হয়ে থাকে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
ঘূর্ণিঝড়ের আগাম বার্তা সংগ্রহ করা রাডার স্টেশনটি এখন অকেজো। গত ১০ মাস ধরে অকেজো এই রাডার স্টেশনটি পাহারা দিচ্ছেন বেশ কজন পুলিশ সদস্য।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কক্সবাজার রাডার স্টেশনে নিরাপত্তার দায়িত্ব থাকা পুলিশ সদস্য বলেন, এটা হলো রাডার স্টেশন। এখানে কেউ থাকে না বা কারো অফিস নেই। যদি কারো সাথে কথা বলার প্রয়োজন পড়ে তাহলে কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসে যেতে হবে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ১৯৬৯ সালে সুইডিশ শিশুকল্যাণ সংস্থা ও রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির সহযোগিতায় কক্সবাজার রাডার স্টেশনটি স্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে ২০০৭ সালের ২২ এপ্রিল জাপান সরকারের আর্থিক সহযোগিতায় রাডার সিস্টেমের উন্নয়ন করা হয়। রাডার স্টেশনটি কক্সবাজার হিলটপ সার্কিট হাউসের পাশে অবস্থিত। সমতল ভূমি থেকে ৬০ ফুট উচুঁ পাহাড়ের চূড়ায় প্রায় ৯৯ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট ভবনের ওপর এ রাডারটি স্থাপন করা হয়।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কক্সবাজার রাডারটি মেয়াদকাল ১০ থেকে ১২ বছর। কিন্তু কক্সবাজার রাডারটি ব্যবহৃত হয় ১৭ বছর। ২০২৩ সালের ৪ আগস্ট রাডার স্টেশনটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়। এরপর থেকে রাডারটি কাজ করছে না।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারি আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুল হান্নান বলেন, অকেজো বলতে এর মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। রাডারের মেয়াদ হচ্ছে ১০ থেকে ১২ বছর। এখন ১৭ বছর চলছে। এটা তো এমন নয় যে পার্টস কিনতে পাওয়া যাবে। বাংলাদেশে তো এগুলো নাই। রাডারের মেয়াদকাল থাকে ১০ বছর। এটার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। ৪০০ কিলোমিটারের মধ্যে আবহাওয়াগত তথ্য, যেমন মেঘ বৃষ্টি এসব ক্যাপচার করা রাডারের কাজ। রাডার থাকলে মেঘ বৃষ্টি কিংবা বাতাসের গতিবেগ নির্ণয় করা যায়।
সি সেফ লাইফ গার্ড সংস্থার ফিল্ড টিম ম্যানেজার মো. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, কক্সবাজার রাডার স্টেশনটি মেয়াদোত্তীর্ণ হবার কারণে ঠিক মতো কাজ করছে না। যার কারণে আমরা সঠিক সময়ে সঠিক তথ্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে। কক্সবাজার একটি ঘূর্ণিপ্রবণ এলাকা, সমুদ্রের আবহাওয়া প্রায় সময় পরিবর্তন হয়। তাই সঠিক সময়ে সঠিক তথ্যটি পেলে সঠিক সময়ে প্রস্তুতি নেয়া যায়। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি থেকেও মুক্তি পাওয়া যাবে। আর দ্রুত সময়ের মধ্যে রাডার স্টেশন পুনরায় চালু করার দাবি জানিয়েছেন পর্যটকসহ স্থানীয়রা।