ফখরুলের মত মিথ্যাবাদী রাজনীতিক দেখিনি : হাছান মাহমুদ

সুপ্রভাত ডেস্ক »

২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের জন্য তাকে ধুয়ে দিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

মন্ত্রী দাবি করেছেন, বিএনপিতে ফখরুলের পদ নড়বড়ে হয়ে গেছে। এ কারণে তিনি ‘মিথ্যাচারের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছেন’। মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে এসব কথা বলেন তিনি। খবর বিডিনিউজের ।

তারেক রহমানের প্রত্যক্ষ পরিচালনা ও নির্দেশনায় এবং খালেদা জিয়ার অনুমোদনক্রমে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল অভিযোগ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমি পত্রপত্রিকায় দেখলাম মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব গতকাল (সোমবার) গ্রেনেড হামলা নিয়ে এমন একটি নির্লজ্জ মিথ্যাচার করেছেন। তিনি বলেছেন, যে জায়গায় অনুমতি দেওয়া হয়েছিল সেই জায়গায় (সমাবেশ) না করে অন্য জায়গায় কেন করল?

আসলে আমরা সেদিন অনুমতি চেয়েছিলাম মুক্তাঙ্গনে সমাবেশ করার জন্য। কিন্তু মুক্তাঙ্গনে সমাবেশ করার অনুমতি আমাদের দেওয়া হয়নি। আগের দিন রাতের বেলা আমাদের পার্টি অফিসের সামনে সমাবেশ করার জন্য বলা হয়। সে কারণে আমরা মুক্তাঙ্গন বাদ দিয়ে পার্টি অফিসের সামনে সমাবেশ করেছিলাম।

হাছান বলেন, মুক্তাঙ্গনে সমাবেশ করার অনুমতি না দেওয়াই প্রমাণ করে গ্রেনেড হামলা পরিচালনা করার সুবিধার্থেই মুক্তাঙ্গনে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। কারণ, মুক্তাঙ্গনে গ্রেনেড ছোড়ার সুবিধা সেভাবে নেই। আমাদের দলীয় কার্যালয়ের চারপাশে বিল্ডিং, সেসব বিল্ডিং থেকে গ্রেনেড ছোড়া যায়। সেজন্য সেখানে সমাবেশ করতে বলা হয়।

আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ হলে আশপাশের ভবনে সাদা পোশাক ও পোশাকধারী পুলিশ রাখা হত জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, কিন্তু সেদিন কেউ ছিল না। ২১ অগাস্ট কোনো পুলিশ পাহারায় ছিল না। পুলিশ পাহারার পরিবর্তে বিএনপি সরকার, তারেক রহমান সেখানে জঙ্গিদের অবস্থান নিশ্চিত করেছিল এবং সেখান থেকে গ্রেনেডগুলো ছোড়া হয়েছিল।

আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবের মত একজন লোক এ রকম ন্যাক্কারজনক, জঘন্য, কুৎসিত, বীভৎস্য, ঘৃণ্য মিথ্যাচার করতে পারেন। তিনি যেহেতু বিএনপির মহাসচিব, তার প্রতি সম্মান রেখেই বলতে চাই, আসলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তার মত এমন জঘন্য, কুৎসিত, বীভৎস্য, ঘৃণ্য মিথ্যাচার করার রাজনীতিবিদ আমি দেখিনি।’

আগের দিন ২১ অগাস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার তদন্ত ও বিচারকে ‘সাজানো নাটক’ বলে দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল।

তার দাবি, তাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, হামলার সময় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিণ্টু, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদসহ যাদের সাজা হয়েছে তারা সবাই ‘নির্দোষ’। তাদেরকে রাজনৈতিক কারণে ফাঁসানো হয়েছে।

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘একুশে অগাস্টের মতো এমন একটি ঘটনাকে তিনি বলেছেন এটা আওয়ামী লীগের সাজানো নাটক। কি রকম মিথ্যাচার! আজকে দিবালোকের মত স্পষ্ট, তারা এটি ঘটিয়েছে।

‘আমি গ্রেনেড হামলা মামলার স্বাক্ষী, দুই দফা স্বাক্ষী দিয়েছি। স্বাক্ষী-প্রমাণে সবকিছু স্পষ্ট হয়েছে। সে মামলায় আসামিরা কনটেস্ট করেছে, এরপর তাদের শাস্তি হয়েছে। বিএনপি তো হত্যার রাজনীতি করে যে দল হত্যার রাজনীতি করে সেই দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল।

‘যেভাবে মিথ্যাচার করছেন সম্ভবত তার মহাসচিবের পদটা একটু নড়বড়ে হয়ে গেছে। যে কারণে মিথ্যাচারের মাত্রাটা আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন।’

গ্রেনেড হামলা মামলার রায় বাস্তবায়ন নিয়ে এক প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘আসামিদের পক্ষ থেকে উচ্চ আদালতে আপিল হয়েছে। উচ্চ আদালতে বিচার হয় না, বিচারে কোনো ভুল হয়েছে কিনা সেটি বিচার-বিশ্লেষণ করা হয়। উচ্চ আদালতে প্রক্রিয়া শেষ হলেই সাজা কার্যকর হবে। অনেক আসামি গ্রেফতার আছে।’

‘একতরফা’ নির্বাচনের জন্য সরকার দেশে ‘ভয়াবহ কিছু ঘটাতে’ নীল নকশা করছে বলে করেছেন বিএনপি মহাসচিব যে অভিযোগ করেছেন, সেটি নিয়েও কথা বলেন হাছান মাহমুদ।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘মির্জা ফখরুল কাল যেটি বলেছেন, উনার কথার মাধ্যমেই প্রমাণিত হয় তারা কিছু ঘটাতে চাচ্ছেন। কাল মুখ ফসকে তিনি বলেছেন। তারা এমন একটা কিছু ঘটাতে চাচ্ছেন যাতে দেশে নির্বাচন ভ-ুল করা যায় এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা যায়।’

অন্য এক প্রশ্নে তথ্যমন্ত্রী জানান, তারেক রহমানকে দেশে ফেরাতে ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি দেখছে।

বাংলাদেশে কে ক্ষমতায় থাকবে আর কে ক্ষমতায় থাকবে না এটি নিয়ে ভারতের পত্রিকার নিবন্ধ নিয়ে তথ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন একজন সাংবাদিক।

জবাবে তিনি বলেন, ‘এটি ভারতীয় পত্রিকার বিশ্লেষণ। তবে এটি তো সত্য শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, বিশ্ব সম্প্রদায় তার প্রশংসা করছে। বিপরীতে যারা ক্ষমতায় আসতে চায় তাদের সাথে জামায়াতে ইসলামী, তাদের মধ্যে আছে জঙ্গিরা, জোটে আছে জঙ্গিরা। এবং মৌলবাদী অপশক্তির প্রধান পৃষ্ঠপোষক তারা।

‘একই সঙ্গে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী, যারা একুশে অগাস্ট ঘটিয়েছে, মানুষের ওপর পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করেছে তারা তাদের সঙ্গে আছে। তারা যদি দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পায়, গতবার যখন দেশ পরিচালনার দায়িত্বে ছিল তখন ৫০০ জায়গায় একসঙ্গে বোমা ফুটেছিল, এবার ৫ হাজার জায়গায় ফুটবে। দেশটা পাকিস্তান কিংবা আফগানিস্তানের পর্যায়ে চলে যাবে, সেই বিশ্লেষণই ভারতীয় পত্রিকায় এসেছে।’

হাছান মাহমুদের ভাষ্য, ‘ভারতীয় পত্রিকায় এসব লেখালেখি আসার পর আমি বিএনপিতে অস্থিরতা লক্ষ্য করছি। তারা যে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে তার প্রমাণ হচ্ছে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম বিএনপি রাত ৩টায় সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে। কারও যদি আক্কেল থাকে তাহলে রাত ৩টায় সংবাদ সম্মেলন ডাকে?’

অন্য এক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও আমাদের সম্পর্ক চমৎকার। যুক্তরাষ্ট্র একটি বড় উন্নয়ন সহযোগী। নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘমেয়াদী সহযোগিতার সম্পর্ক রয়েছে। সবার সঙ্গেই আমাদের ভালো সম্পর্ক।’

সংবিধানের আলোকে নির্বাচন হবে জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘সেই নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ তো অবশ্যই চাই, সমস্ত রাজনৈতিক দল যাতে অংশগ্রহণ করে আমরা সেটি চাই। বিএনপি বরং সংবিধান না মেনে এমন একটি কিছু চায়, যাতে করে তারা ক্ষমতায় যাবে সেই গ্যারান্টি নির্বাচন কমিশন দিতে পারে। সে ধরনের ব্যবস্থা তো গণতান্ত্রিক দেশে হতে পারে না।’