৫ বছরে ইলিশ আহরণ কমেছে ৩ শত মেট্রিক টন

মিরসরাই

রাজু কুমার দে, মিরসরাই

২০১৮ সাল থেকে ২০২৩ সাল। ব্যবধান ৫ বছর। এই ৫ বছরেই বদলে গেছে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ইলিশ আহরণের চিত্র। ইলিশের মৌসুম চললেও সাগর থেকে যেন মাছ উধাও। ৫ বছরে মিরসরাইয়ে ইলিশ আহরণ কমেছে ৩শত ৪ মেট্রিক টন। কিন্তু ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে সরকার বছরে একাধিকবার সাগর ও নদীতে মাছ আহরণ বন্ধ রেখেছে। তবুও বাড়েনি না ইলিশের উৎপাদন। কিন্তু কেন উৎপাদন বাড়েনি তা এখানকার জেলেদের বোধ্যগম্য নয়। তবে জেলেদের ধারণা মিরসরাইয়ের চরে প্রতিষ্ঠিত অর্থনৈতিক অঞ্চলের কারণে ইলিশ আহরণ কমতে পারে।
মিরসরাই উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মিরসরাইয়ে ২৯টি জেলে পাড়ায় নিবন্ধিত জেলে রয়েছে ২ হাজার ১ শত ২৬ জন। ২০১৬ সালের আগে ২০২৬ জন্য জেলে নিবন্ধিত হয়। ২০২১ সালে নিবন্ধিত হয় একশ জন। এছাড়া চলতি বছর প্রায় ৬ শত জন জেলে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে।
মৎস্য অফিসের তথ্য অনুসারে, মিরসরাইয়ে ২০১৮ সালে ইলিশ আহরণ হয় ৩৪২.১ মেট্রিক টন। ২০১৯ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৩২২.৬ মেট্রিক টনে। ২০২০ সালে পূর্ববর্তী বছর থেকে ৫ মেট্রিকটন মাছ বেশি আহরণ হয়। অর্থাৎ ২০২০ সালে ইলিশ আহরণ হয় ৩২৭.৪ মেট্রিক টন। এতে স্থানীয় জেলেদের মাঝে কিছুটা আশার সঞ্চার হয়েছিল। কিন্তু ২০২১ সালে এসে আবারো ধাক্কা খায় এখানকার জেলেরা। ওই বছর ইলিশ আহরণ হয় ২৫২.৩ মেট্রিক টন। এভাবে কমতে থাকে ইলিশ আহরণ। ২০২২ সালে হঠাৎ ধস নেমে আসে ইলিশ আহরণে। ওই বছর আহরণ হয় মাত্র ১৪৭.৪ মেট্রিক টন ইলিশ। কিন্তু সেই ধাক্কা আর সামাল দিতে পারেনি মিরসরাইয়ের ২৯টি জেলে পাড়ার কয়েক হাজার জেলে। ২০২৩ সালে আগস্ট মাস পর্যন্ত ইলিশ আহরণ হয় মাত্র ৩৭.৩ মেট্রিক টন। এক বছরের ব্যবধানে আহরণ কমে যায় ১১০.১ মেট্রিক টন। এবার হতাশা ভর করে জেলে পাড়ার বাসিন্দাদের মাঝে। অনেকে বদলে ফেলছেন পেশা। গত বছর এই দিনে ৪০ মেট্রিক টন মাছ পাওয়া গেছে। কিন্তু চলতি বছর আগস্ট মাসে পাওয়া গেছে মাত্র ৮ মেট্রিক টন। এভাবে চলতে থাকে আগামী বছর থেকে মিরসরাইয়ে সাগর কিংবা নদীতে মিলবে না কোন ইলিশ।
মায়ানি ইউনিয়নের জয়নগর গ্রামের জেলে রনজিৎ জলদাশ জানান, ইলিশ এখন সোনা হরিণ। ইলিশ আহরণের আশায় মাছ ধরার নৌকা ও জাল কিনতে স্থানীয় একট এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। কিন্তু মাছতো ধরা পড়ছেই না, বরং ঋণের কিস্তি দিতেই এখন হিমশিম খেতে হচ্ছে।
উপজেলার ডোমখালী জেলে পল্লীর জেলে কাঁলাচান জলদাশ বলেন, সাগর ও নদী দূষণ বেড়ে গেছে। তাই ইলিশ মাছ দিন দিন কমে যাচ্ছে। এছাড়া মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে জমি ভরাট কাজে বড় বড় ড্রেজার ব্যবহৃত হওয়ায় কারণেও ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে অন্যান্য স্থানীয় জেলেদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ইতোমধ্যে মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে কারখানা নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। উৎপাদনে গিয়েছে একাধিক শিল্প কারখানা। এসব কারখানার বর্জ্য যদি সাগরে পড়ে ইলিশের প্রজনন ক্ষেত্র মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
জানতে চাইলে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা নাসিম আল মাহমুদ জানান, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। কিন্তু মিরসরাইয়ে ইলিশ আহরণের চিত্র হতাশাজনক। আগে যেভাবে উপকূলে ইলিশ পাওয়া যেত এখন সেভাবে পাওয়া যায় না। এটার প্রধান কারণ হচ্ছে ইলিশ উৎপাদন ও প্রজনন ক্ষেত্রগুলো নানান কারণে বিঘ্নিত হচ্ছে। এছাড়া অর্থনৈতিক অঞ্চলের কারণে ঘাটগুলো বদলে ফেলায় ইলিশ আহরণ কমছে।