স্বল্পমূল্যের সেবায় রোগীর আস্থা

ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালায়েড সায়েন্স

চমেক হাসপাতালের ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালায়েড সায়েন্স বিল্ডিং-সুপ্রভাত

নিলা চাকমা »

ব্যাংকার দম্পতি চৈতী দাশ ও সুবল দাশ। তাদের ঘরে আসছে নতুন অতিথি। সে সুস্থ আছে কিনা তা জানতে নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করেছেন। যেখানে তাকে গুনতে হয়েছে ২ হাজার টাকা। এরপর পরিচিত একজনের কাছ থেকে ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড এ্যালায়েড সায়েন্স, চট্টগ্রামের তথ্য জানতে পারেন। যেখানে কম টাকায় পরীক্ষা করা হয়। শোনা মাত্র তারা  প্রতিষ্ঠানটিতে আসেন। একই পরীক্ষা শুধু ৩০০ টাকায় করান। এভাবে কিডনি স্ক্যান, ব্রেইন স্ক্যান, বোন স্ক্যান, থাইরয়েড স্ক্যান, হরমোনের বিভিন্ন পরীক্ষা অন্যান্য বেসরকারি হাসপাতাল থেকে ৭০-৮০ শতাংশ কমে এখানে পরীক্ষা করা যায়। একই সাথে কিছু রোগের চিকিৎসাও করা যায়।

প্রতিষ্ঠানটিতে ৬২টির মতো পরীক্ষা করানো হয়

নগরে থায়রয়েড চিকিৎসায় এ প্রতিষ্ঠান অন্যতম

লোকবল বাড়লে সেবার পরিধিও বাড়বে

ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালায়েড সায়েন্স বাংলাদেশ ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। সারাদেশে ১৫টি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালায়েড সায়েন্স তাদের কার্যক্রম চালু রেখেছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে এবং বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের তত্ত্বাবধানে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হয়ে থাকে।

চট্টগ্রামে এ প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয় ১৯৭২ সালের ৫ মে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই সরকার নির্ধারিত স্বল্পমূল্যে বিভিন্ন জটিল রোগ নির্ণয় পরীক্ষা করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। এটি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। ‘লাল বিল্ডিং’ নামেই বেশি পরিচিতি লাভ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে ৬২টির মতো পরীক্ষা করানো হয়। তার মধ্যে  গামা ক্যামেরা অ্যান্ড ফিউশন স্পেক্ট সিটি স্ক্যানে হোল বডি বোনস্ক্যান ১০০০ টাকা, কিডনি স্ক্যান (ডিটিপিএ) ১০০০ টাকা, কিডনি স্ক্যান (ডিএমএসএ) ৮০০ টাকা, থায়রয়েড স্ক্যান ৪০০ টাকা। এ বিভাগে ১১ টি পরীক্ষা করানো যায়। যার জন্য সর্বনিম্ন ৪০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা পরিশোধ করতে হয়। আল্ট্রাসনোগ্রাফিতে হোল এবডোমেন ৪৫০ টাকা, আপার এবডোমেন ৩০০ টাকা, লয়ার এবডোমেনসহ ৩০০ টাকা মোট ২৪ টি আল্ট্রাসনোগ্রাফি করা যায়। প্রতিটি পরীক্ষার জন্য সর্বনি¤œ ৩০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১২০০ টাকা দিয়ে করা যায়।

এছাড়া এখানে সিটি স্ক্যান, ব্রেইন সিটি স্ক্যান ২০০০ টাকা, বুক সিটি স্ক্যান ২৫০০ টাকা, লয়ার এবডোমেন সিটি স্ক্যান ২০০০ টাকা, আপার এবডোমেন সিটি স্ক্যান ২০০০ টাকা, হোল এবডোমেন সিটি স্ক্যান ৪০০০ টাকা ও থায়রয়েডের ৫ টি পরীক্ষা করা যায়। তার জন্য সর্বনি¤œ ২০০ টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়। হাইপার থাইরডিজম, থাইরয়েড ক্যান্সার, রেডিও আপেডিনের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়। অন্য বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে সর্বনিন্ম চার হাজার ও সর্বোচ্চ ১৭৫০০ টাকা নেওয়া হয় এ পরীক্ষায়।

হরমোন পরীক্ষায় এ প্রতিষ্ঠানে ১২ টি পরীক্ষায় সর্বনিম্ন ৩৫০ টাকা থেকে ১১০০ টাকা দিতে হয়। একিই পরীক্ষা নামকরা বেসরকারি ডায়গনস্টিক সেন্টারে করা হয় ৮০০ টাকা থেকে ২০৫০ টাকা। সর্বশেষ হাড় ক্ষয় বিভাগে ৬ টি সর্বনিম্ন ৩০ টাকা থেকে ১৭০০ টাকা নেওয়া হয়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে ৫ জন চিকিৎসকসহ ৪০ জনের মতো স্টাফ রয়েছেন। প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ জনের পরীক্ষা করানো হয়।

অন্য বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে এসব পরীক্ষার জন্য অনেক টাকা গুনতে হয়। সেজন্য রোগীরা এখানে ভিড় জমায়।

সরেজমিন সোমবার (৩০ জানুয়ারি) সকালে দেখা যায়, চমেক হাসপাতালের  দক্ষিণ-পশ্চিমে  লাল রঙের একটি দোতালা একটি বিল্ডিং। বিশাল মাঠ, মাঠজুড়ে রয়েছে সুসজ্জিত ফুলের বাগান। ভেতর এবং বাইরে কোথাও নেই ময়লা- আবর্জনার স্তুপ। প্রত্যেক বিভাগে রোগীদের জন্য রাখা হয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে চেয়ার। রোগীরা রিপোর্ট পরীক্ষা করোনোর জন্য অপেক্ষা করছেন প্রতিষ্ঠানটির সামনের চত্বরে।

থায়রয়েড একটি পরীক্ষা করোনোর জন্য অপেক্ষা করা আজহারুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম নগরে থায়রয়েড চিকিৎসায় এ প্রতিষ্ঠানটি অন্যতম। বিনা ভোগান্তিতে বাই সিরিয়ালে সব কিছু হয়। বিনা ভোগান্তিতে সরকারের প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা করাতে পারাটা ভাগ্যের ব্যাপার। সত্যিই এখানে নির্ভুল পরীক্ষা করা যায় কম টাকায়। তবে পরীক্ষার ফল পেতে দেরী হয়। ভালো কিছু পেলে সময় দেওয়া য়ায়।

মারজানা নামের সেবা নিতে আসা এক রোগী বলেন, তিন-চার দিন ধরে একটা রিপোর্টের জন্য ঘুরছি। এখনও রিপোর্টটি হাতে পায়নি। এখানে সবকিছু ভালো, কিছু  সুবিধা আছে। কম খরচে অনেক রোগের পরীক্ষা করা যায়। কিন্তু রিপোর্টগুলো তাড়াতাড়ি পেলে ভোগান্তি কমতো।

প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ডা. পবিত্র কুমার ভট্টাচার্য্য বলেন, আমাদের চিকিৎসা সেবার মান বেড়েছে, যন্ত্রপাতিও বেড়েছে। কিন্ত সে অনুপাতে লোকবল বাড়েনি। যার কারণে কোন স্টাফ ছুটিতে গেলে পরীক্ষা বেশি করোনো যায় না। দূর দূরান্ত থেকে রোগীরা এসে ফিরে যায়। আমাদের কিছু করার থাকে না। আমাদের নিরাপত্তা প্রহরী থেকে নার্স স্টাফ অনেকে দিনের কমিশনে কাজ চালিয়ে নিতে হয়। ডাক্তার থেকে শুরু করে স্টাফদের চার পাঁচটি দায়িত্ব সমালাতে হয়। পর্যাপ্ত পরিমাণে আমাদের চিকিৎসার আধুনিক যন্ত্রপাতিও রয়েছে। লোকবল নিয়োগ দেওয়া হলে আমাদের সেবার পরিধি আরও বড় হবে। কারণ এখানে ৫০ থেকে ৮০ শতাংশ কমে বিভিন্ন রোগের পরীক্ষা করানো যায়। তাই লোকবল নিযোগ হলে আমাদের সেবার মান আরো বাড়বে। এতে নিম্নবিত্তরা উপকৃত হবেন।