শঙ্কা বাড়ছে টোল রোডের চার কিলোমিটারে!

smart

ডিসেম্বরে চালু হচ্ছে টানেল

৬ লেনের গাড়ি চলবে দুই লেনে, আগামী এক বছরের মধ্যে টোল রোডের সম্প্রসারণ
কাজ শুরু হচ্ছে না- সড়ক ও জনপথ

ভূঁইয়া নজরুল »

ডিসেম্বরে চালু হচ্ছে টানেল। কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত চার লেনের এই টানেল ঢাকা ও কক্সবাজারের সাথে যাতায়াতের সংযোগ ঘটাবে। কিন্তু দক্ষিণ কাট্টলী রাসমনি ঘাট (সাগরিকা পয়েন্ট) থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত টোল রোডের চওড়া দুই লেন হওয়ায় টানেলের সুফল নিয়ে সংশয় দেখা দেবে। এতে সৃষ্ট হতে পারে দীর্ঘ জটের।

টানেল দিয়ে যাতায়াত করা গাড়িগুলো আউটার রিং রোড হয়ে দক্ষিণ কাট্টলী রাসমনি ঘাটের কাছে এসে মিলিত হবে টোল রোডের সাথে। পরবর্তীতে টোল রোড হয়ে ফৌজদারহাটে ঢাকা-চট্টগ্রাম ট্রাঙ্ক রোডের সাথে মিলিত হবে গাড়িগুলো। কিন্তু টোল রোডটি দুই লেনের। এতে ছয় লেনের গাড়িগুলোকে চলাচল করতে হবে দুই লেনের ( সাগরিকা থেকে ডিটি রোড চার কিলোমিটার) রোড দিয়ে। গতকাল দুপুরে আউটার রিং রোড ও টোল রোডের সংযোগ পয়েন্টে দেখা যায় উভয় রোডের গাড়িগুলো দুই লেনের টোল রোডের সাথে মিশছে। কিন্তু এখন গাড়ির চাপ কম হওয়ায় সমস্যা না হলেও টানেল চালু হলে তা প্রকট আকার ধারণ করবে। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘এ সমস্যা যে হবে তা আমরা আগেই অনুমান করেছিলাম। এজন্য রাসমনি ঘাট (সাগরিকা) পয়েন্ট থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত ছয় লেনের রোড নির্মাণের প্রকল্প নিয়েছি। আউটার রিং রোড প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে তা বাস্তবায়ন করা হবে।’
কিন্তু প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন তা সময় সাপেক্ষ। আগামী ডিসেম্বরে টানেল চালু হলে সমাধান কি হবে? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সড়ক ও জনপথ দীর্ঘদিন ধরে টোল রোডটি সম্প্রসারণের জন্য একটি প্রকল্প নিয়েছে।’

এ বিষয়ে কথা হয় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ছয় লেনের প্রকল্পটি এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) এর অর্থায়নে বাস্তবায়নের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। ইতিমধ্যে একটি সম্ভাব্যতা জরিপের কাজ শেষ হয়েছে।’
কিন্তু ফৌজদারহাট থেকে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ দুই লেনের টোল রোডটিকে ছয় লেনে উন্নীতকরণের প্রকল্পের কথা গত ছয় বছরের বেশি সময় ধরে শোনা যাচ্ছে। এর অগ্রগতি কতটুকু? এ প্রশ্নের উত্তর জানতে কথা হয় প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়েজ আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন,‘ সম্ভাব্যতা জরিপ ও ডিজাইন চূড়ান্ত হয়ে গেছে। এগুলো অনুমোদন পেলেই আমরা ডিপিপি (বিস্তারিত প্রকল্প প্রস্তাবনা) অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠাবো। সেখান থেকে অনুমোদন পেলে ঠিকাদার নিয়োগের দরপত্র আহবানসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে।’

কিন্ত ডিপিপি অনুমোদন, প্ল্যানিং কমিশন, প্রি-একনেক, একনেকের পর ঠিকাদার নিয়োগের দরপত্র আহবান, সরকারের ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ের কমিটির অনুমোদনের পর কার্যাদেশ দিতে প্রায় দুই বছরের বেশি সময় লাগবে আরো। এবিষয়ে জানতে চাইলে ফয়েজ আহমেদ বলেন, ‘যেহেতু এই প্রকল্পের আগে থেকে অনুমোদন নেয়া আছে। তাই বেশিদিন লাগবে না। তবে তারপরও কার্যাদেশ দিতে একবছর সময় তো লাগবেই।’
তাহলে তো টানেল চালু হলে মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে। এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,‘আমরা এই বিষয়টি ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। তারা অবগত রয়েছে।’

বন্দর কর্তৃপক্ষের চিন্তার কারণ কেন?

চলতি বছরেই চালু হবে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল। চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ড থেকে টোল রোড হয়ে পণ্যবাহী গাড়িগুলো ঢাকার দিকে যাতায়াত করে। পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল চালু হলে সেই পয়েন্ট থেকে আউটার রিং রোড হয়ে গাড়িগুলো ঢাকার দিকে যাতায়াত করবে। পণ্যবাহী এসব গাড়ির সাথে যুক্ত হবে টানেল দিয়ে যাতায়াতকারী সাধারণ পরিবহন। আর এতে সাগরিকা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকায় যানজট প্রকট আকার ধারণ করবে। যানজটের কথা স্বীকার করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন,‘ এতে যে সমস্যা হবে তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তারপরও তা কমিয়ে আনার জন্য পণ্যবাহী গাড়িগুলো যাতে রাস্তার উপরে দাঁড়িয়ে না থাকে সেজন্য কয়েকটা ট্রাক টার্মিনাল করে দেয়া হবে। একইসাথে যতো দ্রুত সম্ভব টোল রোড সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজ শুরু করতে হবে।’

সিডিএ’র বক্তব্য

দক্ষিণ কাট্টলী রাসমনি ঘাট ( সাগরিকা) থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ আউটার রিং রোড নির্মাণ করেছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। চার লেনের এই রোডটি হালিশহর আর্টিলারি পয়েন্টে টোল রোডের কাছে এসে দুই লেনের রূপ নিয়েছে। টোল রোডের দুই লেন ও রিং রোড থেকে দুই লেন নিয়ে পৃথকভাবে অগ্রসর হয়ে সাগরিকা পয়েন্টে এসে দুটি রোড একসাথে মিলিত হয়ে ফৌজদারহাটে ডিটি রোডের সাথে যুক্ত হয়েছে। এতে সৃষ্ট যানজট দুর্ভোগ কমিয়ে আনতে রিং রোডের আওতায় নির্মিত ফিডার রোড-৩ চালু করা প্রয়োজন বলে জানান সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস। তিনি বলেন,‘ আমাদের ফিডার রোডটি চার লেনের। এটি চালু হলে সাগরিকা রোড হয়ে গাড়িগুলো ডিটি রোডের সাথে অলংকার পয়েন্টে যুক্ত হতে পারবে। তখন কিছু গাড়ি সাগরিকা হয়ে এবং কিছু গাড়ি ফৌজদারহাট দিয়ে চলে গেলে একটি অংশে চাপ কম পড়বে।’
কিন্তু ফিডার রোড-৩ ( রিং রোড থেকে সাগরিকা পর্যন্ত) চালু করতে সমস্যা কোথায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ফিডার রোড-৩ এর ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে ফৌজদারহাট রেলওয়ে স্টেশনের যোগাযোগ রক্ষাকারী একটি রেললাইন রয়েছে। এই রেললাইনের উপরে উচ্চতা জটিলতায় ফ্লাইওভার নির্মাণের অনুমোদন দিচ্ছে না রেলওয়ে মন্ত্রণালয়। আর এতেই আটকে রয়েছে প্রকল্পটি।’
উল্লেখ্য, ৮০ এর দশকে বঙ্গবন্ধু সেতু প্রকল্পের উদ্বৃত টাকা দিয়ে নির্মাণ হওয়া দুই লেনের টোল রোডটি নির্মাণ করেছিল সড়ক ও জনপথ বিভাগ। দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে ৯২ শতাংশ পণ্য পরিবহন করে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। বন্দর থেকে সারাদেশে পণ্য পরিবহনের জন্য সাগরের পাড় দিয়ে ফৌজদারহাট থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের জেটি পর্যন্ত নির্মিত হয় টোল রোড বা পোর্ট এক্সেস রোডটি। বন্দরমুখী ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, লরি ও প্রাইম মুভারগুলোকে টোল দিয়ে যাতায়াত করে এই রোড দিয়ে। এই রোডের সাথে পরবর্তীতে যুক্ত হয় আউটার রিং রোড। আউটার রিং রোডের পতেঙ্গা প্রান্তে নির্মিত হচ্ছে টানেল। এই টানেল দিয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হচ্ছে।