রাজপথে নয়, আইনিভাবে মোকাবেলা করবে হেফাজত

গ্রেফতার আতঙ্ক
নিজস্ব প্রতিনিধি, হাটহাজারী <<
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মামুনুল হককে গ্রেফতার করা হলেও এখন পর্যন্ত কোন কর্মসূচি বা রাজপথে দেখা যায়নি হেফাজতের কোনো নেতাকর্মীকে। এর আগে হেফাজতের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, ঢাকা মহানগর সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন রাজীসহ বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাকে আটক করা হয়। এদেরকে ২০১৩ সালে ঢাকার শাপলা চত্বরে তাণ্ডবের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলা ও সাম্প্রতিক সময়ে হেফাজতের তাণ্ডবের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাগুলোতে গ্রেফতার করা হয়েছে।
হেফাজতের কেন্দ্রীয় সিনিয়র নেতা ও মধ্যম সারির নেতাসহ সারাদেশের কয়েকশ’ নেতাকর্মী আটক হলেও বিবৃতিতে সীমাবদ্ধ রয়েছে হেফাজত আমীরের কার্যক্রম। তবে তারা আপাতত রাজপথে কোনো কর্মসূচি না দিয়ে আইনিভাবে মোকাবেলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। হেফাজতের কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতার সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
এর আগে গত ১১ এপ্রিল হাটহাজারী মাদ্রাসার মিলনায়তনে এক জরুরি সভার আয়োজন করে হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশ। জরুরি সভায় হেফাজতের আমীরসহ জেলা উপজেলার ২২ জন নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে মাওলানা মামুনুল হকের রিসোর্ট কাণ্ডে হেফাজতের আমীর আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী তখন বলেছিলেন, মামুনুল হকের বিষয়টি তার ব্যক্তিগত। তিনি গণগ্রেফতার ও হয়রানি বন্ধ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান এবং আগামী ২৯ মে হাটহাজারী মাদ্রাসায় জাতীয় ওলামা মাশায়েখ সম্মেলন করার ঘোষণা দেন।
গতকাল রোববার দুপুর ২টায় হেফাজতের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক মাওলানা জাকারিয়া নোমান ফয়জী সুপ্রভাতকে বলেন, ইতিমধ্যে হেফাজতের কেন্দ্রীয় বেশ কয়েকজন নেতাসহ সারাদেশে প্রায় ৫শ নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসব ঘটনা আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। আপাতত রাজপথে কোন আন্দোলনে না গিয়ে আইনিভাবে মোকাবেলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
হেফাজতের কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মীর ইদরিস সুপ্রভাতকে বলেন, সরকার হেফাজতকে নিয়ন্ত্রণে নিতে হেফাজত নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে আতঙ্ক তৈরি করছে। আমরা বিষয়টি মনিটরিং করছি। আপাতত আইনি ভাগে মোকাবেলা করবো। পরে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এ পর্যন্ত গ্রেফতার যারা :
হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে ১১ এপ্রিল র‌্যাব ও গোয়েন্দা বিভাগের যৌথ অভিযানে গ্রেফতার করা হয় কেন্দ্রীয় সংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল ইসলামাবাদীকে। তাকে ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতের তাণ্ডবে পল্টন থানায় দায়ের করা পুলিশের মামলার ১৫৭ নম্বর আসামি হিসেবে আটক দেখানো হয়। যদিও বলা হয়েছে, মোদিবিরোধী নাশকতার বিষয়ে পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
একই মামলায় ১৩ এপ্রিল হেফাজতের কেন্দ্রীয় সহ প্রচার সম্পাদক মুফতি শরীফ উল্লাহকে ও ১৪ এপ্রিল সহকারী মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দিকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দুজনের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বর তাণ্ডবে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে মামলা রয়েছে।
মুফতি শরীফ উল্লাহকে ২০১৩ সালের ৬ মে যাত্রাবাড়ী থানায় দায়ের হওয়া বিশেষ ক্ষমতা আইনের একটি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। একইভাবে মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দিকেও গ্রেফতার করা হয় শাপলা চত্বরের ঘটনায় করা একটি মামলায়।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-অর্থসম্পাদক ও ঢাকা মহানগরী কমিটির সহসভাপতি মুফতি ইলিয়াসকে ১১ এপ্রিল আটক করে র‌্যাব। তাকে অবশ্য নাশকতার পরিকল্পনা, ধর্মীয় উগ্রবাদ ছড়ানো, ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার চালানোর অভিযোগে কেরাণীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে গ্রেফতার করা হয়।
১৪ এপ্রিল রাজধানীর লালবাগ থেকে আরেক কেন্দ্রীয় নেতা সাখাওয়াত হোসেনকে আটক করে গোয়েন্দারা। মোদির সফরের বিরোধিতা করে রাজধানীতে সহিংস ঘটনায় পল্টন ও মতিঝিল থানায় হওয়া একাধিক মামলার এজাহারভুক্ত আসামি তিনি। তাকেও ২০১৩ সালের একটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
গত ১৬ এপ্রিল হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগরীর সহ-সভাপতি মাওলানা জুবায়েরকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তাকেও ২০১৩ সালের একটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ১৭ এপ্রিল আদালতে সোপর্দ করা হবে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (মতিঝিল বিভাগ) মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, আমাদের কাছে ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরে সহিংসতার ঘটনায় বেশ কিছু মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। সেসব মামলার দ্রুত তদন্ত শেষ করার উদ্যোগ নিয়েছি।