মেডিক্যালের নামে ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেন বিক্রি!

ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রেড অক্সিজেন (ঘনত্ব ৫০-৭০ শতাংশ), মেডিক্যাল গ্রেড অক্সিজেন (ঘনত্ব ৯৯.৯৯ শতাংশ)

রাজু কুমার দে, মিরসরাই >
মিরসরাইয়ে বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে অক্সিজেন সংকটের সুযোগ নিয়ে মেডিক্যালের নামে ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেন বিক্রির অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, উপজেলার বারইয়ারহাট পৌরসভাধীন চিনকি আস্তানা মাজারের সামনে সামীয়া ট্রেডিং নামের ওই প্রতিষ্ঠানে শিল্প কারখানার লোহা কাটাসহ ভারি কাজে ব্যবহৃত ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেনকে মেডিক্যাল অক্সিজেন হিসেবে বাজারজাত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। পরে বৃহস্পতিবার বিকালে ওই প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালায় ভ্রাম্যমাণ আদালত। এসময় ভোক্তা অধিকার আইনে প্রতিষ্ঠানের মালিক আব্দুর রহীমকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার জব্দ করা হয়। জব্দকৃত সিলিন্ডারটি পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হবে বলে জানান ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মিনহাজুর রহমান।
জানা গেছে, বাজারে সাধারণত দুই ধরনের অক্সিজেন পাওয়া যায়। একটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রেড অক্সিজেন। যার ঘনত্ব ৫০-৭০ শতাংশ। অন্যটি মেডিক্যাল গ্রেড অক্সিজেন। এটির ঘনত্ব ৯৯.৯৯ শতাংশ। অর্থ্যাৎ মেডিক্যাল গ্রেডের অক্সিজেনকে শতভাগ বিশুদ্ধ হতে হয়।
চিকিৎসকদের মতে, মুমূর্ষু রোগীদের জন্য ব্যবহৃত মেডিক্যাল গ্রেড অক্সিজেন প্রায় শতভাগ বিশুদ্ধ হতে হয়। যা শিল্প কারখানায় পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রেড অক্সিজেনের ক্ষেত্রে নিশ্চিত করা হয় না। ফলে মেডিক্যাল গ্রেড অক্সিজেনের তুলনায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রেড অক্সিজেনের দাম কম। তা ছাড়া এটা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকরও। কিন্তু বারইয়ারহাটে করোনা মহামারির এই সময়ে ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রেড অক্সিজেনই সিলিন্ডারে ভরে মেডিক্যাল গ্রেড অক্সিজেন হিসেবে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এবিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কর্তব্যরত এক মেডিসিন বিষেশজ্ঞ চিকিৎসক জানান, ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রেড অক্সিজেন কোনভাবে রোগীর ক্ষেত্রে ব্যবহার হতে পারে না। এতে অক্সিজেন লেবেলের ক্ষতি হয়ে রোগী মারা যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিনহাজুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার বিকালে অভিযোগের ভিত্তিতে বারইয়ারহাটে অবস্থিত সামীয়া ট্রেডিংয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ভোক্তা অধিকার আইনে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার জব্দ করে পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। যদি জব্দকৃত সিলিন্ডারে ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রেডের অস্তিত্ব পাওয়া যায় তবে মালিকের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়ের করা হবে।
বারইয়ারহাট পৌর মেয়র রেজাউল করিম জানান, বারইয়ারহাট পৌরসভাধীন চিনকির আস্তানা এলাকায় একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার বিক্রির দোকানে মেডিক্যাল অক্সিজেন সিলিন্ডারে ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রেডের অক্সিজেন বিক্রি হচ্ছে এমন অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিনহাজুর রহমানকে অবহিত করা হয়। পরে তিনি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ভোক্তা অধিকার আইনে ওই প্রতিষ্ঠানকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করে।
এদিকে শুক্রবার বিকালে বারইয়ারহাট পৌরসদরে অবস্থিত ৩টি হাসপাতালের মালিকদের নিয়ে একটি জরুরি বৈঠক করেন পৌর মেয়র রেজাউল করিম। তিনি হাসপাতাল মালিকদের এই করোনাকালীন সংকটে অক্সিজেনের মূল্য বৃদ্ধি না করার অনুরোধ জানান।