মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী জোটে রোহিঙ্গাদের আমন্ত্রণ

জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ

ডয়চে ভেলে »

মিয়ানমারে ক্ষমতাসীন জান্তাবিরোধী জোটে রোহিঙ্গাদের অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে৷ তবে দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চনার শিকার রোহিঙ্গারা এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে চাইছে৷

গত ফেব্রুয়ারিতে অং সান সু চির সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী৷ তার প্রতিবাদে দেশজুড়ে এখনো বিক্ষোভ চলছে

সু চির রাজনৈতিক দলের সদস্যরা ইতিমধ্যে একটি জান্তা বিরোধী জোট গঠন করেছে৷ ‘ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট’ নামে এ জোট নির্বাসিত অবস্থায় আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে বিভিন্ন দেশের সরকার ও গণমাধ্যমের সহযোগিতা পেতে কাজ করে যাচ্ছে৷ গত মাসে জোটের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদেরকে জান্তাবিরোধী এ কার্যক্রমে যোগদানের আহ্বান জানানো হয়৷ একই সঙ্গে তারা নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া সকল রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়ার আশ্বাসও দেয়৷ এমনকি রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়েও জোটের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেয়া হয়৷

মিয়ানমারের রাখাইন অঞ্চলে বসাবাসরত রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর  সদস্যদের সে দেশের নাগরিকত্ব নেই৷ কয়েক দশক ধরে নিপীড়নের শিকার এ জনগোষ্ঠীটি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকেও বঞ্চিত৷ ২০১৭ সালে সেনাবাহিনীর অভিযানের মুখে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলায় আশ্রয় নেয়৷

তবে জান্তাবিরোধী জোটে যাওয়ার এ আমন্ত্রণকে রোহিঙ্গারা সতর্কতার সাথে দেখতে চাইছে৷

দেশের বাইরে বসে সমর্থন নেওয়ার জন্য বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দেওয়ার বিষয়টিকে ‘মাছ ধরার জন্য টোপ পাতার মতো’ বলে মনে করেন ওয়াই মার নামের এক রোহিঙ্গা৷

২০১২ সালে রাখাইনে স্থানীয় বৌদ্ধদের সাথে সংঘর্ষের পর দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর সিতওয়ের নিকটবর্তী একটি অস্থায়ী ক্যাম্পে বাস করেন ওয়াই মার৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদেরকে বলির পাঁঠা হয়ে থাকতে হয়৷’’

এদিকে এমন প্রস্তাবের পরও জান্তাবিরোধী এ জোটে কোনো রোহিঙ্গা সদস্য নেই৷ জোটটিতে বর্তমানে ৩২জন সদস্য রয়েছেন৷

নিজেদের অবস্থার বর্ণনা দিতে গিয়ে সিতওয়ের ক্যাম্পে থাকা আরেক বাসিন্দা কো টুন হ্লা বলেন, ‘‘আমরা জানি যে, সবকিছুই আমরা এক রাতের মধ্যে পেয়ে যাবো না৷ তবে আমাদের ন্যূনতম মানবাধিকার. যেমন চলাফেরার স্বাধীনতা, নাগরিকত্ব পাওয়া, নিজের বসতিতে ফেরা ইত্যাদি নেই৷’’

গত ফেব্রুয়ারি মাসের সেনা অভ্যুত্থানের পর সেনা সদস্যরা ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের সাথে বৈঠকের উদ্যোগ নেয়৷ বৈঠকের বিষয়ে ক্যাম্পটির আরেকজন বাসিন্দা উইন মাউং জানান যে, বৈঠকে যখনই তারা নিজেদের অধিকারের বিষয়ে জানতে চাইলেন, সেনা সদস্যরা তখন ধমকের সুরে কথা বলতে শুরু করেন, ‘‘তারা আমাদেরকে বলল, ‘তোমরা রোহিঙ্গা না, তোমরা বাংলাদেশি৷’’ সেনাসদস্যরা তখন রোহিঙ্গাদের গুলি করে মারার হুমকি দেয় বলেও দাবি করেন তিনি৷

তবে যারাই রোহিঙ্গাদের অধিকারের বিষয়টি নিশ্চিত করবে তাদেরকেই সহযোগিতা করা হবে বলে জানালেন কো টুন লা৷ তিনি বলেন, ‘‘সেনাবাহিনী, অং সান সুচির এনএলডি বা অন্য কোনো রাজনৈতিক দল যে-ই আমাদের অধিকারগুলো নিশ্চিত করবে, আমরা তাদের সহযোগিতা করবো৷’’