মামুনুলদের বাদ দিয়ে হেফাজতের নতুন কমিটি ঘোষণা

সুপ্রভাত ডেস্ক

নানা ঘটনায় বিতর্কের মুখে কমিটি বিলুপ্তির দেড় মাসের মধ্যে নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করেছে হেফাজতে ইসলাম।

৩৩ সদস্যের নতুন কমিটিতে মামুনুল হকসহ কয়েকজন নেতা বাদ পড়লেও আমির ও মহাসচিব পদে আগের নেতারাই বহাল রয়েছেন।

হেফাজতের মহাসচিব নুরুল ইসলাম জিহাদী সোমবার ঢাকার আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া মাখজানুল উলুম খিলগাঁওয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন কমিটি ঘোষণা করেন।

বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদীসহ যারা সাম্প্রতিক সহিংসতার মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাদের নতুন কমিটিতে রাখা হয়নি।

জুনাইদ বাবুনগরী আমির পদে থাকছেন; যিনি কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠনটির সাবেক আমির শাহ আমদ শফীকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ার মামলার আসামি। মহাসচিব পদেও নুরুল ইসলাম জিহাদীই রয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে জিহাদী বলেন, “আগের কমিটির যারা গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন, তাদের নাম এই ৩৩ সদস্যের ঘোষিত কমিটি নেই।

“ছোট পরিসরে এই কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এই কমিটি পরবর্তীতে চিন্তা-ভাবনা করে দেখবে আর কে কে এই কমিটিতে যুক্ত হবেন। যারা কারাগারে আছেন তারা এখানে অন্তর্ভুক্ত হবেন কিনা, তা এই পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

হেফাজতের কর্মসূচি থেকে সহিংসতায় যারা মারা গেছেন, তাদের বিষয়ে তিনি বলেন, “যারা মারা গেছেন, তাদের ন্যায়বিচারের জন্য আমরা সব সময় দাবি জানিয়ে আসছি। ন্যায়বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এই দাবি অব্যাহত থাকবে। আর যারা গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন তাদের মুক্তির দাবি জানিয়ে আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথেও দেখা করেছি। তাদের মুক্তির দাবিও আমরা অব্যাহত রাখব।”

হেফাজতের নতুন কমিটি ‘সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের’ সঙ্গে যুক্ত থাকবে বলে ঘোষণা দেন জিহাদী।

২৫ এপ্রিল কোনো চাপের কারণে আগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছিল কি না- এ প্রশ্নের জবাবে মহাসচিব বলেন, “চাপের প্রশ্নই উঠে না। কেউ আমাদের উপর চাপ প্রয়োগ করেনি।”

গত ২ জুন এক সংবাদ সম্মেলনে আলেমদের ‘সরলতার সুযোগে’ একটি মহল তাদের ‘ভুলপথে ঠেলে দেওয়ার পাঁয়তারা’ করছে বলে অভিযোগ করেন হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আমির আহমেদ শফীর অনুসারীরা।

হেফাজত তাহলে দুই ভাগে বিভিক্ত কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে জিহাদী বলেন, “এখানে বিভক্তির কিছু নেই। তারা (শফীর অনুসারী) আমাদের বলেছেন, এই কমিটিতে তারা আমাদের সাথে থাকবেন।

“তারা যে সংবাদ সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন, তা হেফাজতে ইসলামের কোনো ব্যানারে করেনি। তারা আল্লামা আহমদ শফীর ভক্তবৃন্দ ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। এখানে বিদ্রোহ ঘোষণার কোনো নিউজ আমরা পাইনি।”

প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই হেফাজতের আমির ছিলেন চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক শাহ আহমদ শফী।

তিনি গত বছর মারা যাওয়ার পর নানা আলোচনার মধ্যে গত ১৫ নভেম্বর সম্মেলনে বাবুনগরীকে আমির করে হেফাজতের ১৫১ সদস্যের নতুন কমিটি গঠিত হয়েছিল।

তার আগে দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকা হেফাজতের নেতারা গত বছরের শেষ দিকে ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতায় নেমে ফের আলোচনায় আসেন।

সংগঠনটির নেতা মামুনুল হক ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার হুমকিও দেন। পরে তিনি হেফাজতের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিবের পদ পাওয়ার পাশাপাশি ঢাকা কমিটির সাধারণ সম্পাদকও হন।

নতুন কমিটি গঠনের ছয় মাস পার হওয়ার আগে গত মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে হেফাজতের কর্মসূচি সহিংসতায় গড়ায়।

এরপর মামুনুল ছাড়াও সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদীসহ বেশ কয়েকজন নেতা গ্রেপ্তার হলে চাপে পড়ে হেফাজত।

পুলিশ দাবি করে, হেফাজত নেতারা নাশকতার বড় ধরনের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছিলেন, যার চূড়ান্ত লক্ষ্য ছিল রাষ্ট্রক্ষমতা দখল।

গত বছরের ১৫ নভেম্বর সম্মেলনে জুনাইদ বাবুনগরীকে আমির করে হেফাজতের ১৫১ সদস্যের নতুন কমিটি গঠিত হয়েছিল। ফাইল ছবি

এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৫ এপ্রিল হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন আমির জুনাইদ বাবুনগরী।

সোমবারের সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের আহ্বায়ক কমিটির প্রধান উপদেষ্টা মহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী এবং আমির জুনাইদ বাবুনগরী উপস্থিত ছিলেন না।

এ বিষয়ে মহাসচিব নুরুল ইসলাম জিহাদী বলেন, “আমাদের দুজন মুরব্বি কেন্দ্রীয় কমিটির প্রধান উপদেষ্টা মহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী জ্বরে আক্রান্ত এবং আমির জুনাইদ বাবুনগরীও অসুস্থ, যে কারণে উনারা আজকে উপস্থিত হতে পারেননি। উনারা আপনাদের (গণমাধ্যমকর্মী) সালাম জানিয়েছেন।”

হেফাজতে ইসলামের ৩৩ সদস্যের কমিটিতে আমির ও মহাসচিব ছাড়া নয়জনকে নায়েবে আমির, পাঁচজনকে যুগ্ম মহাসচিব, একজন সহকারী মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক, অর্থ সম্পাদক, সহ অর্থ সম্পাদক, প্রচার সম্পাদক, সহ-প্রচার সম্পাদক, দাওয়া বিষয়ক সম্পাদক, সহকারী দাওয়া বিষয়ক সম্পাদক এবং আট জনকে কার্যকরী কমিটির সদস্য করা হয়েছে।

জিহাদী বলেন, “ভবিষতে প্রত্যেক জেলায় যে কমিটি ঘোষণা করা হবে, সেসব কমিটির সভাপতি পদাধিকার বলে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে বিবেচিত হবে। জেলা কমিটির সভাপতি ও সেক্রেটারি অরাজনৈতিক ব্যক্তি হতে হবে।”

সংবাদ সম্মেলনে ৩৩ সদস্যের কেন্দ্রেীয় কমিটি ছাড়াও মহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীকে প্রধান উপদেষ্টা করে ১৬ সদস্যের আরেকটি উপদেষ্টা কমিটি ঘোষণা করেন হেফাজতের মহাসচিব।

এছাড়া হেফাজতে ইসলামে নতুন কমিটির অন্যতমদের নেতাদের নিয়ে আরেকটি খাস কমিটি (বিশেষ কমিটি) ঘোষণা করা হয়েছে।

এতে মহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, জুনাইদ বাবুনগরী, আতাউল্লাহ হাফেজ্জীসহ নয় জনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “উক্ত খাস কমিটি ‘মসলিসে শুরা’ হিসেবে বিবেচিত হবে। হেফাজতের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে বিবেচিত হবেন এবং তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবেন।”

সংবাদ সম্মেলনে নতুন কমিটির নায়েবে আমির মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, আবদুল হক, সালাহউদ্দীন নানুপুরী, যুগ্ম মহাসচিব সাজেদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মীর ইদ্রিস, অর্থ সম্পাদক মুফতি মুহাম্মদ আলী, প্রচার সম্পাদক মুহিউদ্দিন রব্বানী উপস্থিত ছিলেন।

সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম