মন্ত্রণালয় ব্যাখ্যা চাইলো পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কাছে

বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে সিস্টেম এনালিস্টের বিরুদ্ধে

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড

তদন্ত কমিটির রিপোর্ট: এইচএসসি ফলাফলে অসঙ্গতি

ভূঁইয়া নজরুল »

এবার পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কাছে ব্যাখ্যা চাইলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর আগে একইঘটনায় শিক্ষাবোর্ডের সিষ্টেম এনালিস্টের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিয়ে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে বলা হয়েছিল। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের দিন চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে দুপুরে এক ধরনের ফলাফল ও সন্ধ্যায় আরেক ধরনের ফলাফল পাওয়া গিয়েছিল। এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে এই নির্দেশনা দিলো মন্ত্রণালয়।

শিক্ষামন্ত্রণালয়ের সরকারি মাধ্যমিক-২ শাখার উপ-সচিব আলমগীর হুছাইন স্বাক্ষরিত ( ১ এপ্রিল ২০২২) অফিস আদেশে বলা হয়েছে, পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের দিন ফলাফল সংশোধনে বোর্ডের নীতিমালার ব্যত্যয় ঘটিয়ে সংশোধন করতে গিয়ে একই দিন দুই ধরনের নম্বরফর্দ পেয়েছে শিক্ষার্থীরা। এতে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করে। এছাড়া পরীক্ষার ফলাফল তৈরি সংক্রান্ত সকল দায়-দায়িত্ব পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের। তাই পরীক্ষার ফলাফলের সম্পূর্ণ দায় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের উপর বর্তায়। এজন্য ২০২১ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের অসঙ্গতি এবং এবিষয়ে তদন্ত কমিটির মতামতের বিষয়ে ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কাছে চাওয়া হয়েছে।

অপরদিকে একই ঘটনায় সরকারি মাধ্যমিক-২ শাখার যুগ্ম সচিব খালেদা আখতার স্বাক্ষরিত ( ১৫ মার্চ ২০২২) অফিস আদেশে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সিনিয়র সিস্টেম এনালিষ্ট কিবরিয়া মাসুদ খানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় কার্যক্রম গ্রহণপূর্বক মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল আলীম বলেন,‘ মন্ত্রণালয়ের আদেশের প্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্টকে শোকজ করা হয়েছে এবং এ বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও সিনিয়র সিস্টেস এনালিস্ট দুই জনের বিরুদ্ধে দুই ধরনের আদেশ কেন জানতে চাইলে বোর্ড চেয়ারম্যান বলেন, সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তা, তাই বোর্ড চেয়ারম্যানের ক্ষমতা রয়েছে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার। অপরদিকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রেষণে নিয়োগ এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন। তাই উনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকার রাখেন মন্ত্রণালয়।
বিভাগীয় ব্যবস্থা বিষয়ে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট কিবরিয়া মাসুদ খান বলেন, ‘বোর্ড চেয়ারম্যান মহোদয় আমার কাছে যে জবাব চেয়েছেন আমি ইতিমধ্যে তা জমা দিয়েছি। এছাড়া আমার পক্ষ থেকে প্রকাশিত ফলাফলে কোনো ধরনের পরিবর্তন হয়নি। বোর্ডের ফলাফলের তিনটি সিডি টেলিটক, বোর্ডের সার্ভার এবং কপারটনিক ( ওয়েবে যারা প্রদর্শন করেন) এর কাছে রয়েছে। তিনটি সিডিতেই একই ফলাফল রয়েছে। এখনো যদি কেউ তদন্ত করে একই পাবে।’

কি ছিল তদন্ত কমিটির রিপোর্টে

১৩ ফেব্রুয়ারি ফলাফল প্রকাশের দিন দুপুরের ফলাফল সন্ধ্যায় পাল্টে যাওয়ার ঘটনায় শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলেন। পটিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ মোজাম্মেল হককে প্রধান করে গঠিত সেই কমিটির অপর দুই সদস্য ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এ এইচ এম সাজেদুল হক এবং চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সহকারী সচিব সম্পাতা তালুকদার। তদন্ত কমিটির রিপোর্টে উল্লেখযোগ্য ছিল ফলাফল প্রকাশের আগে ১১ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৫টা থেকে রাত ১০টা ১০ মিনিট পর্যন্ত ফলাফল প্রসেসিং রুমের কম্পিউটার এর টেবুলেশন অনিরাপদ ছিল। এই অনিরাপদ থাকা ফলাফল তৈরিতে সন্দেহ সৃষ্টি করে। এছাড়া ফলাফল সংশোধনের বিষয়টি বোর্ডের নীতিমালার ব্যত্যয় ঘটিয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও আইটি টিমের সদস্যরা নিজেরাই সংশোধনের কাজ করতে গিয়ে দুই ধরনের নম্বরফর্দ পাওয়া গিয়েছে।

তদন্ত রিপোর্ট প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল আলীম বলেন, গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের রিপোর্ট আমার কাছে জমা দেয়ার পর আমি মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিলাম। সেখান থেকে ব্যবস্থা সংক্রান্ত নির্দেশনা আসছে।

উল্লেখ্য, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের প্রকাশিত এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে বোর্ডের ওয়েবসাইটে দুপুরে ও সন্ধ্যায় দুই ধরনের ফলাফল দেখতে পাওয়া গিয়েছিল। এতে বোর্ডের প্রকাশিত ফলাফল নিয়ে জনমনে সন্দেহ তৈরি হয়।