মঙ্গল গ্রহে অভিযান চালাচ্ছে তিন দেশ

সুপ্রভাত ডেস্ক :
১৯৬৯ সালে মানুষ প্রথম চাঁদের বুকে পা রাখে। এরপর থেকেই বিশ্ব ব্রহ্মা-ের বাইরের সম্পর্কে জানার ক্ষুধা বেড়ে যায় মানুষের। সেই থেকে শুরু হয় মঙ্গলগ্রহ অভিযান। বিশ্বের এখন পর্যন্ত অনেক দেশ মঙ্গল অভিযানে মানুষ পাঠিয়েছেন। নিজেদের তৈরি স্যাটেলাইট স্থাপনের কাজ করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। তবে মঙ্গলগ্রহে যত অভিযান হয়েছে তার প্রায় অর্ধেকই ব্যর্থ হয়েছে।
সূর্য থেকে দূরত্বের হিসাবে চতুর্থ তথা বুধের পরেই সৌরজগতের দ্বিতীয়-ক্ষুদ্রতম গ্রহ হলো মঙ্গল। এই গ্রহের পৃষ্ঠতলে আয়রন অক্সাইডের আধিক্যের জন্য গ্রহটিকে লালচে রঙের দেখায়, যা খালি চোখে দৃশ্যমান মহাজাগতিক বস্তুগুলোর মধ্যে এই গ্রহটিকে স্বতন্ত্রভাবে দর্শনীয় করে তোলে। সেই জন্য এই গ্রহটি ‘লাল গ্রহ’ নামেও পরিচিত। ১৯৭১ সালের দোসরা ডিসেম্বর মঙ্গল গ্রহে প্রথম সফলভাবে অবতরণ করে রাশিয়ার মার্স-থ্রি নভোযান।
অবতরণের পর সঙ্গে সঙ্গে সোভিয়েত নভোযানটি সেখান থেকে ছবি পাঠাতে শুরু করে পৃথিবীতে। মিশনের নিয়ন্ত্রকরা এই সাফল্যে তখন উল্লসিত হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু মঙ্গলের পৃষ্ঠে মাত্র দু মিনিট যেতে না যেতেই নভোযানের কলকব্জা বিকল হয়ে যায়। সেই সময় একটা ভয়ঙ্কর রকম ধুলোর ঝড় বইছিল। ধারণা করা হয় নভোযানের কলকব্জা অকেজো হয়ে যাওয়ার কারণ ছিল ওই ধুলিঝড়।
তবে এরপর আরো পাঁচবার মঙ্গলগ্রহে নভোযান পাঠানোর পর সোভিয়েত ইউনিয়নের অভিযান সাফল্যের মুখ দেখে। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইউরোপ আর ভারতের মতো গুটিকয়েক দেশ, যারা মঙ্গলগ্রহে সফল মহাকাশ অভিযান করতে পেরেছে। গেল বছর জুলাই মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাতও এই তালিকায় নাম লেখায়। জাপানের সবচেয়ে বড় রকেটবন্দর তানেগাশিমা থেকে উড্ডয়ন করে আমিরাতের স্যাটেলাইট ‘হোপ মিশন’। মহাকাশযানটি ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে পৌঁছাবে যা কাকতালীয়ভাবে আরব আমিরাতের প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী। এই অভিযানে নেতৃত্ব দেন এক নারী।
সারাহ আল-আমিরি ‘হোপ মিশনের’ বৈজ্ঞানিক দলের প্রধান। একই সঙ্গে তিনি দেশটির অ্যাডভান্সড সায়েন্সবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী। তবে এ বছর অর্থাৎ ২০২১ সালকে টার্গেট করে রেখেছে আরো কয়েকটি দেশ। আরব আমিরাতসহ চীন এবং আমেরিকা প্রস্তুত হচ্ছে মঙ্গল অভিযানের। কে সবার আগে চাঁদে নিজের দেশের মহাকাশযান পাঠাবে, তা নিয়ে একটা রেষারেষি তো অনেক বছর হয়ে গেল বিশ্বের বড় বড় দেশগুলোর মধ্যে চলছে। এবার কি বিষয়টা চাঁদ থেকে সরে এসেছে মঙ্গল গ্রহ নিয়ে? তবে এ বছরকেই কেন তারা বেছে নিলো, আর কেনই বা এতো তারা মঙ্গল অভিযানে তাদের!
২০২১ সাল এবং মঙ্গল গ্রহে অভিযান- এই দুই বিষয়কে যদি পাশাপাশি রাখা যায়, তা হলে এমন কথা বলা যেতেই পারে। কেন না খবর বলছে যে চলতি বছরে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, ইউনাইটেড স্টেটস আর চীন- এই তিন দেশই মঙ্গল গ্রহে নিজের নিজের মহাকাশযান পাঠাচ্ছে। চলুন এর কারণগুলো জেনে নেয়া যাক :
চীন
সবার প্রথমে আসা যাক চীনের কথায়। বিভিন্ন প্রতিবেদন বলছে, চীনের পক্ষ থেকে তিয়ানওয়েন ১ নামে একটি মহাকাশযান মঙ্গল গ্রহে যাচ্ছে। তিয়ানওয়েন শব্দটির মানে হল স্বর্গীয় সত্যের সন্ধান। স্বর্গীয় না হলেও লাল গ্রহ সম্পর্কিত মহাজাগতিত সত্য উদঘাটন করার লক্ষ্যে বদ্ধপরিকর চীন। জানা যায়, এই মহাকাশযান মঙ্গল গ্রহের ইউটোপিয়া প্ল্যানেশিয়া নামের অংশে অবতরণ করবে। প্রসঙ্গত, ইউনাইটেড স্টেটসের পর চীন-ই হবে দ্বিতীয় দেশ যারা মঙ্গলের মাটিতে নামবে। বেশ কয়েক মাস মঙ্গল গ্রহের চার দিকে ঘুরপাক খেয়ে, সব দিক ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে তবেই সেখানে অবতরণ করা হবে বলে সূত্রে জানা গিয়েছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাত
চীনের পরিকল্পনা মঙ্গল গ্রহে নেমে তার মাটি, পাথর তুলে আনবে, সেখানে পানি আছে কি নেই তা খুঁজবে। তবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মঙ্গলযান পরিকল্পনায় আছে ভিন্ন কিছু। তবে তাদের মঙ্গলযাত্রাও কিছু কম রোমাঞ্চকর নয়। মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথে সবচেয়ে কম দূরত্ব রেখে প্রবেশ করবে হোপ প্রোব নামে মহাকাশযানটি। মঙ্গলের পৃষ্ঠতল থেকে মাত্র ১০০০ কিলোমিটার উপরে অবস্থান করবে তারা। এই কক্ষপথে প্রবেশের কাজটা চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই সম্পন্ন হয়ে যাবে। মঙ্গলের হিসেবে এক বছর অর্থাৎ পৃথিবীর হিসেবে ৬৮৭ দিন সেখানে অবস্থান করবে হোপ প্রোব।
ইউনাইটেড স্টেট
মহাকাশ সম্পর্কিত যে কোনো কিছুর কথা বললেই এই দেশের ন্যাশনাল অ্যারোনটিকস অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ওরফে নাসা-র কথা সবার আগে মাথায় আসে। মঙ্গলে যাত্রার ব্যাপারে চলতি বছরে পিছিয়ে নেই নাসা-ও। এই সংস্থার প্রিজার্ভারেন্স নামের মঙ্গলযান লাল গ্রহে চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি নামতে চলেছে বলে শোনা যাচ্ছে। খবর মোতাবেকে, তারাই পৃথিবীতে সবার আগে মঙ্গল গ্রহের পাথর এবং মাটি নিয়ে ফিরে আসবে। যা পরীক্ষা করে দেখা হবে যে মঙ্গল গ্রহে কোনও অণুজীবেরও অস্তিত্ব রয়েছে কি না! খবর : ডেইলিবাংলাদেশ’র।