ভূমধ্যসাগরে বাংলাদেশী উদ্ধার : মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে অনিশ্চিত যাত্রা

গত ২৫ জুন ভূমধ্যসাগরে ভাসমান অবস্থায় ২৬৪জন বাংলাদেশীকে উদ্ধার করে তিউনিসিয়া কোস্টগার্ড, গত ২৭জুন মঙ্গলবার পুনরায় ১৭৮জন অভিবাসন প্রত্যাশীকে ভূমধ্যসাগর থেকে মৃত্যুঝুঁকি যাত্রায় উদ্ধার করে তিউনিসিয়ার নৌবাহিনী। এদের অধিকাংশই বাংলাদেশি। তিউনিসিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং কোস্টগার্ড সূত্রে জানা যায়, অভিবাসন প্রত্যাশীরা নৌকা করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ যাচ্ছিলেন। মাঝসমুদ্রে নৌকা বিকল হয়ে গেলে ভাসতে থাকা এই সব হতভাগ্য মানুষ তিউনিসিয়ার কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর সাহায্যে উদ্ধার পায়।
মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে চাকরি নামক সোনার হরিণের খোঁজে এসব বাংলাদেশিরা ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপের দেশে যেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে, বাংলাদেশীসহ এশিয়া-আফ্রিকার নানা দেশের অধিবাসীরা জীবিকার খোঁজে অবৈধপন্থায় ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিচ্ছে। মানবপাচারের আন্তর্জাতিক চক্র যাদের নেটওয়ার্ক বাংলাদেশেও বিস্তৃত, তাদের মুনাফা বাণিজ্যের শিকার হয়ে বিভিন্ন দেশের তরুণরা মরণসাগর পাড়ি দিচ্ছে। এই ধরণের যাত্রায় বাংলাদেশী তরুণদের সলিল সমাধিও হয়েছে।
পত্রÑপত্রিকায় এসব পরিবারের করুণ কাহিনী ওঠে এলে প্রশাসন কিছুদিন নড়েচড়ে বসে। মানব পাচার চক্রের কিছু সদস্য গ্রেফতারও হয় মাঝে মাঝে, কিন্তু ঐ পর্যন্তই এই জঘন্য মানবতাবিরোধী অপরাধীদের কঠোর শাস্তি হয়েছে, এ রকম খবর গণমাধ্যমে খুব একটা আসে না। কিছুদিন আগে দেশ থেকে নারী পাচারের রোমহর্ষক বিবরণ পত্র-পত্রিকায় এসেছে, আইনশৃঙ্খলাবাহিনী দালাল চক্রের নারী-পুরুষ কয়েকজন সদস্যকে গ্রেফতারও করেছে। কথা হল, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আগে টের পায়না কেন? মানবপাচার তো দশকের পর দশক ধরেই চলে এসেছে। ঘটনা পত্রিকায় এলে অপরাধীরা ধরা পড়ে, তারা যে নির্বিবাদে দীর্ঘদিন অপরাধকর্ম চালিয়ে আসছে তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জানার বাইরে থাকবে কেন? অপরাধীদের অপরাধকর্মের নিয়মিত হদিশ না পেলে কিংবা তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান না চালালে মানুষের নিরাপত্তা, সমাজের সুস্থিরতা কিভাবে নিশ্চিত হবে?
সরকার থেকে অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ বিদেশ যাত্রার ব্যাপারে অভিবাসন প্রত্যাশীদের বারবার সতর্ক করে দেওয়া হচ্ছে, তারপরও এ ধরণের অভিবাসন প্রক্রিয়া থামানো যাচ্ছে না। এ সব পরিবার নিশ্চিত না হয়েই লক্ষ লক্ষ টাকা তুলে দিচ্ছে দালালদের হাতে, নিজেরাই দুর্ভাগ্য, ভোগান্তি আর মৃত্যুঝুঁকির মধ্যে পড়ছে।
থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার গভীর অরণ্যে বাংলাদেশীদের গণকবরও মিলেছে। অথচ যে টাকা অবৈধ অভিবাসনে খরচ করছে চাকরি প্রত্যাশীরা, দেশেই সেই অর্থ দিয়ে স্ব-কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা সম্ভব। সরকার বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানে নানামুখি প্রকল্প, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে, ঋণও দিচ্ছে।
দালালচক্রের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে, অবৈধ অভিবাসনের করুণ পরিণতি নিয়ে ব্যাপক প্রচার-প্রচালনা না চালালে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। কিছু অসাধু রিক্রুটিং এজেন্সি বিদেশে চাকুরিপ্রার্থীদের নানা ধরণের ফাঁদে ফেলে প্রতারণা করছে, দুর্ভাগ্য আর বঞ্চনার মধ্যে নিক্ষেপ করছে। সরকারের উচিত মানুষের জীবন-জীবিকা নিয়ে যারা প্রতারণা করছে তাদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা।