বেসরকারি হাসপাতালের সক্ষমতা বাড়লো

চট্টগ্রামে করোনা চিকিৎসা
এভারকেয়ারে শুরু হলো করোনা রোগী ভর্তি
এবার রোগী ভর্তি নিয়ে ভয় নেই : ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া

ভূঁইয়া নজরুল <<<
অ্যাম্বুলেন্সে রোগী নিয়ে একের পর এক প্রাইভেট হাসপাতালে ঘুরছে স্বজন, কিন্তু কোনো হাসপাতাল করোনা রোগী ভর্তি নিচ্ছে না। গত বছরের করোনায় এ চিত্র ছিল নিত্যদিনের। এবার বদলে গেছে দৃশ্যপট। করোনা রোগী বাড়লেও কোনো হাসপাতাল থেকে রোগীদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে না। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তি করানোয় সরকারিভাবে প্রস্তুত রাখা রেলওয়ে ও হলিক্রিসেন্ট হাসপাতালে রোগী ভর্তি শুরু হয়নি।
সিভিল সার্জন থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে দেখা যায়, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল ও ফৌজদারহাট বিআইটিআইডির পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালের মধ্যে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল, আল মানাহিল নার্চার, ইম্পেরিয়াল, পার্কভিউ, ম্যাক্স, ডেলটা ও সিএসসিআর হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তি রয়েছে। এছাড়া করোনা চিকিৎসার জন্য মেডিক্যাল সেন্টার, রয়েল হাসপাতাল, এশিয়ান, সার্জিস্কোপ, সিএসটিসি, ন্যাশনাল, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতাল, ইউএসটিসি, মেরিন সিটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, সাউদার্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বিজিসি ট্রাস্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, শেভরন হাসপাতাল ও সিএমপি বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন রোগী ভর্তি করাতে প্রস্তুত রয়েছে। এসব হাসপাতালে ৫০০টি শয্যা রয়েছে। এরমধ্যে ৪৩২টি সাধারণ ও ৬৮টি আইসিইউ শয্যা।
এবার রোগী ভর্তিতে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর আগ্রহ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চিকিৎসক নেতা জানান, গত বছর একেকটি বেসরকারি হাসপাতাল করোনা রোগীদের চিকিৎসা করে যে অর্থ উপার্জন করেছে, তাতে আরেকটি হাসপাতাল দেওয়া যাবে। ফলে এবার বেসরকারি হাসপাতালগুলো রোগী ফেরাচ্ছে না। এতে রোগীরা যেমন সেবা পাচ্ছে, তেমনি হাসপাতালগুলোও বাড়তি অর্থ আয়ের সুযোগ পাচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়সল ইকবাল চৌধুরী বলেন, ‘এবার বেসরকারি হাসপাতালগুলো করোনা চিকিৎসায় এগিয়ে আসা ভালো উদ্যোগ। এতে মানুষ সেবা পাচ্ছে, আর হাসপাতালগুলোও করোনার জন্য কিছু বাড়তি অর্থ নিচ্ছে, যা দিয়ে ডাক্তার ও স্টাফদের বাড়তি ইনসেনটিভ দিতে পারছে।’
নগরের বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে উচ্চবিত্ত শ্রেণির জন্য চালু হওয়া ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের ৩৫টি শয্যার মধ্যে ৩৮ জন রোগী ভর্তি রয়েছে, ১০টি আইসিইউর মধ্যে ৯টিতেই রোগী রয়েছে। উন্নত সুযোগ সুবিধা নিয়ে নগরে চালু হলো এভারকেয়ার হাসপাতাল। অক্সিজেন অনন্যা আবাসিক এলাকায় ছয়দিন আগে চালু হওয়া এই হাসপাতালে ইতিমধ্যে ৬ জন করোনা রোগী ভর্তি হয়েছে। এ বিষয়ে কথা হয় হাসপাতালের জেনারেল ম্যানেজার ডা. মোহাম্মদ ফজল-ই-আকবর এর সাথে। তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে হাসপাতালটি চালু করতে পারিনি। তবে ৪৫টি শয্যা নিয়ে রোগী ভর্তি শুরু করেছি। ৪৫টি শয্যার মধ্যে ১৫টি রাখা হয়েছে কোভিড রোগীর জন্য। এর মধ্যে ৫টি আইসিইউ, ৫টি পুরুষ ও ৫টি মহিলা রোগীদের জন্য।
বেসরকারি হাসপাতালে রোগী ভর্তি বেড়ে যাওয়াকে পজিটিভ আখ্যা দিয়েছেন চট্টগ্রামে ফিল্ড হাসপাতালের প্রধান উদ্যোক্তা এবং বর্তমানে হোম সার্ভিসের মাধ্যমে রোগীদের সেবা দেওয়া ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া। তিনি বলেন, ‘গত বছর চিকিৎসক, নার্স ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মধ্যে করোনা নিয়ে যে ভয় ছিল, এবার সেই ভয় নেই। চিকিৎসকরা সেবায় এগিয়ে আসছেন। ফলে আর্থিকভাবে যেমন লাভবান হওয়া যাচ্ছে তেমনি রোগীরাও সেবা পাচ্ছে।’
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামে করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। একইসাথে বাড়ছে মৃত্যুও। চট্টগ্রামে গত ১৮ দিনে ৭০ রোগীর মৃত্যু হয়েছে।