বাজার সিন্ডিকেটে জিম্মি ভোক্তারা

বাজারে পেঁয়াজের দাম আবার চড়া। আরও বাড়তে পারে এই শঙ্কায় নগরের বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে বেচাকেনা বেড়েছে পেঁয়াজের। পেঁয়াজের দর নিয়ন্ত্রণে আনতে পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে অভিযান পরিচালনা করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। অভিযানে দেখা গেছে, মধ্যস্বত্বভোগী প্রায় ১০টি হাত ঘুরে পেঁয়াজ কিনছেন ভোক্তারা। এছাড়া পাইকারের সঙ্গে খুচরা ব্যবসায়ীদের যোগসাজশে বাড়ছে পেঁয়াজের দর।
কৃষকদের সুরক্ষা দিতে গত ১৫ মার্চ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া বন্ধ রয়েছে। এতে আমদানি করা পেঁয়াজের মজুত প্রায় শেষ হয়ে আসে। ফলে এ মাসের শুরুতে বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করে। গত সপ্তাহের শেষ দিকে খাতুনগঞ্জ পাইকারি মোকামে পেঁয়াজের দর ওঠে প্রতি কেজি ৭৫ টাকা। তখন খুচরায় প্রতি কেজি বিক্রি হয় ৮০ টাকা।
পেঁয়াজের উৎপাদন, চাহিদা ও আমদানির তথ্য তুলে ধরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর গত সপ্তাহে জানায়, গত দুই বছরে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বেড়েছে ১০ লাখ টনের বেশি। এ বছর দেশে পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে ৩৪ লাখ টনের বেশি। আর বর্তমানে মজুত আছে ১৮ লাখ ৩০ হাজার টন। কিন্তু উপযুক্ত সংরক্ষণের অভাবে বা প্রতিকূল পরিবেশের কারণে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২৬ থেকে ২৮ লাখ টন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে আরও জানানো হয়, বর্তমানে ১ কেজি দেশি পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ ২৮ থেকে ৩০ টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি উন্মুক্ত থাকার কারণে পেঁয়াজ আমদানি বেশি হয়েছিল। তখন দেশি পেঁয়াজের বাজারদর কম ছিল, প্রতি কেজির দাম ছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। তাই কৃষকেরা কম দাম পেয়েছিল। সে জন্য, পেঁয়াজ চাষে কৃষকের আগ্রহ ধরে রাখতে এবার আমদানি সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
উৎপাদন ও মজুত বিবেচনায় দেশে এই মুহূর্তে পেঁয়াজের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই বলেও কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়। ২৪ লাখ টন বার্ষিক চাহিদার বিপরীতে দেশে এবার ৩৪ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে এবং গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজও উঠবে, এ তথ্য জানিয়ে কৃষিসচিব বলেন, উদ্বৃত্ত উৎপাদন সত্ত্বেও পেঁয়াজের বর্তমান দর কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, মূলত ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকায় তার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বাজারে। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে দাম বেঁধে দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। উচিত হচ্ছে সরবরাহ ব্যবস্থা ভালো রাখা ও প্রতিযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি করা। উভয় ক্ষেত্রেই ঘাটতি আছে। কিছু ব্যবসায়ীর কাছে ভোক্তারা এখানে জিম্মি। বাজারের ২৫ শতাংশের নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে না আসা পর্যন্ত একশ্রেণির ব্যবসায়ীর দুষ্কর্ম থেকে মুক্তি মিলবে না।
আসলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে সিন্ডিকেট। কিন্তু সিন্ডিকেটকে কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এই সিন্ডিকেটের জন্যই নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে যায়।